লকডাউন আর অতিমারির ধাক্কা কাটিয়ে ফের ক্রিকেটে ফিরছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। যার আনুষ্ঠানিক সূচনা আজ দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। তাঁদের দুই দল নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন বিরাট কোহলি এবং ডেভিড ওয়ার্নার। ক্রিকেটের মহা রণাঙ্গণে দুই জনেই বিশ্বের বর্তমান গ্রেট ক্রিকেটারদের মধ্যে অন্যতম। বিরাট গত কয়েক বছর ধরেই একটানা আরসিবি-কে আইপিএল-এর মঞ্চে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। এখনও পর্যন্ত একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি আরসিবি। এমনকী, আইপিএল-এর শেষ চারে পৌঁছনোর ক্ষেত্রেও যে আরসিবি-র রেকর্ড খুব ভালো সেটা বলা যায় না। সেদিক থেকে দেখলে আইপিএল-এ বরাবরই এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ সানরাইজার্স হায়দরবাদ। তারা আইপিএল চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। এই টিমটির বিশেষত্ব যে এরা নিজেদের শক্তিকে সকলের সামনে খুল্লামখুল্লা বিজ্ঞাপণ করে না। ফলে, টিমের শক্তি অনুযায়ী সানরাইজ হায়দরাবাদ বরাবরই নিজেদের একটু লো-প্রোফাইলে রাখতে পছন্দ করে।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে গত দুটো মুরসুমে অধিনায়কত্ব করেননি ডেভিড ওয়ার্নার। বল বিকৃতির অভিযোগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে এই দুইবারের মধ্যে একবার আইপিএল খেলতে পারেননি। আর আগেরবার আইপিএল-এ প্রত্যাবর্তন করলেও ততদিনে হায়দরাবাদ কর্তৃপক্ষ কেন উইলিয়ামসন-কেই অধিনায়ক হিসাবে ভরসা করেছিলেন। কিন্তু, এবার সেই ওয়ার্নারের হাতেই ফের অধিনায়কত্ব সঁপে দিয়েছে হায়দরাবাদ টিম কর্তৃপক্ষ।
বিরাট এবং ওয়ার্নার দুই জনেই প্রথম একাদশ বানানো নিয়ে বেশকিছু সমস্যার সামনে রয়েছেন। কারণ, দুই দলেই একাধিক অলরাউন্ডার এবং ভালো পারফর্ম করার মতো প্লেয়ার রয়েছে। কাকে ছেড়ে কাকে রাখা হবে প্রথম একাদশে তা নিয়ে বিরাট এবং ওয়ার্নারের সমস্যা প্রায় একই রকম।
এখন পর্যন্ত যা খবর যা ওপেনিং স্লটেই ব্যাট করতে নামছেন বিরাট। তাঁর সঙ্গে ওপেনে কে আসবেন এখনও ঠিক নয়। তবে, অ্যারন ফ্রিঞ্চ-কে ফিজিক্যালি ফিট পাওয়া গেলে তাঁকেই হয়তো দেখা যেতে পারে বিরাটের সঙ্গে ওপেনিং-এ ব্যাট করতে। বিরাটের পিছন পিছন আসবেন এবি ডিভিলিয়ার্স। যিনি বিরাটের মতোই বিশাল এক নির্ভরতা আরসিবি টিমে। বোলিং বিভাগও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে বিরাটের। স্পিনার হিসাবে আরসিবি এবার অ্যাডাম জাম্পাকে সই করিয়েছে। এখন পর্যন্ত যা খবর তাতে অ্যাডাম জাম্পা আজ দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আইপিএল ম্যাচের প্রথম একাদশে থাকছেন।
সানরাইজার্স হায়দরাবাদের প্রথম একাদশ নিয়ে কথা বলতে গেলে একটা জিনিস আলোচনাতে আসছেই, আর তা হল কেন উইলিয়ামসনের ভবিষ্যত। এখন পর্যন্ত যা খবর তাতে উইলিয়ামসনকে আজ মাঠের বাইরে রাখতে চলেছে হায়দরাবাদ। দলের অটোমেটিক চয়েস হিসাবে থাকছেন স্পিনার-ব্যাটার রশিদ খান ও জনি বেয়ারস্টো। এছাড়াও ফর্মে থাকা মহম্মদ নবি-কেও এদিন দলে রাখা হতে পারে। পেসার বিভাগে নেতৃত্ব অবশ্যই দেবেন ভূবনেশ্বর কুমার। সুতরাং বোলিং বিভাগের শক্তি-র ভারসাম্যে আরসিবি-র থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে হায়দরাবাদ। কারণ, ভূবি ও রশিদের জুটি-র বোলিং বিভাগ নিয়ে হায়দরাবাদ গত কয়েক বছর ধরে আইপিএল-এ প্রতিপক্ষের মাথা ব্যাথার কারণ হয়েছে।
দুই দলের কোচিং স্টাফেও বেশকিছু পরিবর্তন এসেছে এবার। আরসিবি-র ক্ষেত্রে এবার কোচ হয়েছেন মাইক হেসন। যিনি ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল খেলা নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের কোচ ছিলেন। হেসন আরসিবি-র ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট হিসাবে যোগ দিয়েছেন। এছাড়াও তাঁকে সাহায্য করার জন্য রয়েছেন সাইমন কাটিচ, অ্যাডাম গ্রিফিথ, শ্রীধরণ শ্রীরাম, শঙ্কর বসু-সহ আরও কয়েক জন।
হায়দরাবাদ দলের নতুন কোচ হয়েছেন ট্রেভর বেইলিস। যিনি টম মুডি-কে সরিয়ে নিযুক্ত হয়েছেন। ট্রেভর বেইলিস ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ ক্রিকেট জয়ী দলের কোচ ছিলেন। তাঁকে সাহায্য করছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন উইকেট-কিপার ব্যাটসম্যান ব্র্যাড হাডিন, ভিভি এস লক্ষণ, মুথাইয়া মুরলিধরণ।
এদিনের ম্যাচের ফেভারিট ধরা হচ্ছে সানরাইজার্স হায়দরবাদকে। কারণ, আইপিএল-এর অভিযান তারা জয় দিয়েই শুরু করতে অভ্যস্ত। এছাড়াও তাঁদের ভাণ্ডারে রয়েছে শক্তিশালী ওপেনিং জুটি, দুরন্ত বোলিং অ্যাটাক, আইপিএল জয়ী অধিনায়ক এবং ফিল্ডিং ও ফিটনেসে অনেকটাই এগিয়ে হায়দরাবাদ।
ম্যাচ প্রেডিকশন- সুতরাং, ধারে-বারে শক্তিতে বিচার করে ধরে নেওয়া যায় আজ জয়ী দল হচ্ছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।