ফের গুলি শব্দ-পোস্টার, জঙ্গলমহলে ফিরছে মাওবাদীদের আতঙ্ক

  • ফের গুলির শব্দ, নতুন দেখা যাচ্ছে পোস্টার
  • পালাবদলের পর যাঁদের 'অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ব' হয়ে গিয়েছিল
  • সেই মাওবাদীদের আতঙ্ক ফিরছে জঙ্গলে মহলে
  • উন্নয়নে কি ফাঁক রয়ে গেল? উঠছে প্রশ্ন

Asianet News Bangla | Published : Sep 8, 2020 12:29 PM IST / Updated: Sep 08 2020, 06:07 PM IST

"তপন মালিক:  ফের গুলির শব্দ, নতুন করে আবার দেখা গিয়েছে পোস্টার, রাতের অন্ধকারে অচেনা পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে মাঝেমধ্যে। ২০১১ সালে এ রাজ্যে পালাবদলের পর তাদের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হয়েছিল। স্মৃতি হয়ে যাওয়া সেই সংগঠনের কার্যকলাপ ফের টের পাওয়া যাচ্ছে; একসময় মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে। 

আরও পড়ুন: ঝাড়গ্রামে মাওবাদী উত্থান নিয়ে বৈঠকে রাজ্য পুলিশের কর্তারা, ঘুরে দেখলেন বেলপাহাড়ির এলাকা

বেলপাহাড়িতে গত মাস থেকে একাধিক ঘটনায় মাওবাদী তৎপরতার প্রমাণ মিলেছে। একটি গ্যাস এজেন্সির মালিক বিদ্যুতের বাড়িতে মাওবাদী নেতা মদন মাহাতোর সই করা একটা চিঠি এসেছিল ২৭ তারিখ। সেই চিঠিতে দু’লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল তাঁর কাছ থেকে। ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল টাকা দেওয়ার জন্য বেলপাহাড়িতে এক ঠিকাদারকে হুমকি দেওয়া পোস্টার পাওয়া যায়। বেলপাহাড়ির ঢাঙ্গিকুসুমে ঘুরতে আসা একটি পর্যটকদলের কাছ থেকে ৭ জন সন্দেহভাজন মোবাইল ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। তাঁদের দাবি, সশস্ত্র দলের মধ্যে ৩ জন মহিলা,  ৪ জন পুরুষ। 

কেবল তাই নয়, স্বাধীনতা দিবসের সকালে বেলপাহাড়ি ব্লকের ভুলাভেদা গ্রাম পঞ্চায়েতের ভুলাভেদা থেকে বাঁশপাহাড়ি যাওয়া পথে ঝাড়গ্রাম পুরুলিয়া পাঁচ নম্বর রাজ্য সড়কের উপর বাঁকশোল, শালতল নামে দু’টি গ্রামে কালা দিবস পালনের আর্জি জানিয়ে মাওবাদীদের নাম নামাঙ্কিত পোস্টার পড়ে। এতগুলি বছরে তাদের কার্যকলাপ জঙ্গলমহলের মানুষের মন থেকে প্রায় মুছেই গিয়েছিল। বিশেষ করে কিষাণজির মৃত্যুর পর প্রথম সারির অধিকাংশ মাওবাদী নাতাদের অধিকাংশ ধরা পড়ে। বাকিরাও সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর কখনও হঠাৎ করে কোথাও দুয়েকবার পোস্টার উদ্ধার হলেও, মাওবাদী কার্যকলাপের তেমন কিছু আর সামনে আসেনি। 

"

মনে হচ্ছে,  ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন এগিয়ে আসাতেই ফের তৎপরতা বাড়তে শুরু করেছে মাওবাদীরা। ক্ষমতায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করে মাওবাদীদের আত্মসমর্পণ করিয়ে অনেককে ফিরিয়ে আনেন। মমতার ওই পদক্ষেপে জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরতে শুরু করে। কিন্তু মাওবাদীরা এতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অনেক মাওবাদী নেতাকে মমতা মুক্তি দেননি। জঙ্গলমহলের বহু মানুষের অভিযোগ, সব জায়গাতেই রাজনীতি চলছে। রাজনীতিকদের একাংশের মতে, প্রাক্তন মাওবাদীদের মধ্যে যাঁরা বর্তমান সরকারের সঙ্গে মিশে গিয়েছেন, তাঁরাই সরকারি সুযোগসুবিধা পাচ্ছে। তার বাইরের কারও কাছে কোনও সুযোগ সুবিধা পৌঁছাচ্ছে না। এছাড়া দল বাছাই করে উন্নয়নের অভিযোগ রয়েছে জঙ্গলমহলের অধিকাংশ গ্রামবাসীদের। আর সেটাই মাওবাদীদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করছে বলে মনে করছেন বাঁকুড়ার বারিকুল, খাতড়া, রানিবাঁধের মতো একদা মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকার মানুষজনও। তবে তাঁদের অনেকেই বলছেন, উন্নয়ন যে অনেক হয়েছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু পাশাপাশি গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে স্বজনপোষণ-দুর্নীতির ভুরিভুরি অভিযোগ। মানুষের এই ক্ষোভটাকে কাজে লাগিয়েই ফের হারানো জমি ফেরতের চেষ্টা করছে মাওবাদীরা। সে কারণে মহিলা স্কোয়াডের উপরেই বেশি জোর দিচ্ছে মাওবাদী নেতৃত্ব। গ্রামের মহিলাদের থেকে তারা অভাব অভিযোগ শুনছে।  

আরও পড়ুন: মাওবাদীকে জামিন দিয়ে নেতা হিসেবে সুরক্ষা দিচ্ছে রাজ্য, ছত্রধর নিয়ে 'মমতাকে খোঁচা' কৈলাসের

জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের আনাগোনা বাড়ছে বলে টের পাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সংগঠনের সক্রিয় মেম্বাররা দু-একজন করে মাঝে মধ্যেই গ্রামে আসছেন। গ্রামের একটু সচেতন ও সংবেদনশীল মানুষদের সঙ্গে তারা নতুন করে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন। ছোট ছোট বিষয় নিয়ে তৈরি হচ্ছে আন্দোলনের রূপরেখা। যদিও আন্দোলনের থেকে তারা এখন অনেক দূরে। তবে কয়েকটা প্রশ্ন তারা মানুষের মনে গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা করছে- ক’টা যুবকের সরকারি চাকরি হয়েছে? দু টাকা কিলো চাল দিলেই কি সাধারণ মানুষের পেট ভরে যাবে?  

তারা বলছে,  বিনপুরের পাটাঝড়িয়া, নেড়ে,আঁধারনয়ন এই সব আদিবাসী গ্রামগুলিতে প্রতিটি পরিবারে কম পক্ষে একজন গ্র্যাজুয়েট ছেলে আছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটা ছেলেও সিভিকের চাকরি পর্যন্ত পায়নি। এটা কি উন্নয়ন?জঙ্গলমহলের ইতিউতি কান পাতলে এখন শোনা যাচ্ছে এই প্রশ্নটাই। রাতের অন্ধকারে মাঝেমধ্যেই ঘুম ভাঙছে অচেনা পায়ের শব্দে। পোস্টারে হুমকির স্মৃতিও ফিরছে জঙ্গল লাগোয়া ঝাড়গ্রামের একাধিক গ্রামে। এমনকি সংগঠন মজবুত করতে টাকা তোলার চেষ্টাও শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। তবে কি আবার ফিরছে আতঙ্কের দিন?

Share this article
click me!