গত শনিবার মেট্রো রেলের ভয়াবহ দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে কলকাতায় এসে তদন্ত শুরু করলেন কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি শৈলেশ গর্গ।
গত শনিবার সন্ধ্যায় পার্ক স্ট্রিট স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠার সময় নতুন ওই একটি রেকের দরজাতেই হাত আটকে গিয়েছিল সজল কাঞ্জিলাল নামে এক যাত্রীর। সেই অবস্থাতেই ট্রেন চলতে শুরু করে। দরজায় ঝুলতে থাকা সজলবাবু সুড়ঙ্গের মধ্যে পড়ে যান। থার্ড রেলে তড়িদাহত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।
আরও পড়ুন-শুরু থেকেই বিভ্রাট, শনিবারের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় কি ভিলেন মেট্রোর নতুন রেক
এই ঘটনার পর পরই মেট্রোর নিরাপত্তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। ঘটনার গুরুত্বের কথা বিচার করে কমিশানর অফ রেলওয়ে সেফটির হাতে তদন্তভার তুলে দেয় রেল বোর্ড। এ দিন কলকাতায় এসে শৈলেশ গর্গ পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে গিয়ে সেখানকার স্টেশন মাস্টার-সহ মেট্রো রেলকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। ট্রেন স্টেশনে ঢোকার সময় কেমন ভিড় ছিল, আরপিএফ কর্মীদের ভূমিকাই বা কী ছিল, তা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন ওই রেলকর্তা। এর পাশাপাশি সুড়ঙ্গের ঠিক কোন জায়গায় সজল কাঞ্জিলাল নামে ওই যাত্রী ট্রেন থেকে পড়ে যান, প্ল্যাটফর্মের প্রান্তে গিয়ে তাও খতিয়ে দেখেন তিনি।
আরও পড়ুন- হাত ঢুকিয়ে মেট্রোর দরজা আটকানো, এবার কি শিক্ষা নেবেন যাত্রীরা
এছাড়াও মহানায়ক উত্তম কুমার স্টেশনে গিয়ে যে রেকটিতে এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেটিও খতিয়ে দেখেন তিনি। মোটরম্যানের কামরায় উঠে যাবতীয় ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ট্রেনের ভিতরে গিয়ে টকব্যাক ব্যবস্থাও খতিয়ে দেখেন তিনি। অভিযোগ, ঘটনার দিন টকব্যাকের মাধ্যমে যাত্রীরা চালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলেও তাতে কাজ হয়নি। ইতিমধ্যেই চেন্নাই ইন্টেগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি থেকে প্রতিনিধিরাও কলকাতায় এসেছেন। এ দিন কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটির সঙ্গে তাঁরা রেকটি খুঁটিনাটি দিক নিয়ে কথা বলেন।
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার কারশেডে রেকটি নিয়ে ফের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হতে পারে শৈলেশ গর্গের সামনে। কী কারণে যাত্রীর হাত দরজার ভিতরে থাকলেও ডোর সেন্সর কাজ করল না এবং চালক তা বুঝতে পারলেন না, তা হাতেকলমে পরীক্ষা করে দেখা হতে পারে। ঘটনায় আরপিএফ কর্মী বা চালক এবং গার্ডের কোনও গাফিলতি রয়েছে কি না, তদন্তে তাও উঠে আসবে। তবে মেট্রো রেলরে নিজস্ব তদন্তে প্রাথমিকভাবে রেকটির কোনও বিভ্রাট ধরা পড়েনি বলেই খবর। মেট্রো কর্তাদের প্রাথমিক অনুমান, দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে দু'টি পাল্লার মধ্যে থাকা রবারের পুরু আস্তরণের মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে তা খোলার চেষ্টা করেছিলেন সজলবাবু। তার ফলেই সেন্সর থেকে কোনও বার্তা যায়নি চালকের কাছে। তবে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হতে যে বেশ কিছুটা সময় লাগবে, তা এ দিন নিজেই জানিয়েছেন কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি।
অন্যদিকে এ দিনই রাজ্যসভায় কলকাতা মেট্রোর নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে সরব হন তৃণমূল সাংসদ শান্তা ছেত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরেই রেল মন্ত্রক কলকাতা মেট্রোর সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে। বার বার মেট্রো রেলে দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ঠিকমতো অর্থ বরাদ্দও করা হচ্ছে না মেট্রো রেলের জন্য।