দোরগড়ায় পুরভোট, এদিকে একের পর রাজনৈতিক নেতাদের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলছে। এহেন পরিস্থিতিতে বাইশের পুরভোটে কতটা প্রভাব ফেলছে কোভিড-১৯।
দোরগড়ায় পুরভোট (Municipal ELection)। কমিশন (WB Election Commission) ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, ২২ জানুয়ারি শিলিগুড়ি, চন্দননগর, আসানসোল এবং বিধাননগরে পৌর নির্বাচন। এদিকে একের পর রাজনৈতিক নেতাদের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলছে। এদিকে কোভিড ইস্যুতে ভোট পিছোনোর দাবিতে মামলা দায়েরও হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। এহেন পরিস্থিতিতে বাইশের পুরভোটে কতটা প্রভাব ফেলছে কোভিড-১৯ (Covdi -19)।
প্রথমত, ইতিমধ্যেই কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস। কোভিড পজিটিভ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা বাবুল সুপ্রিয় এবং আক্রান্ত তাঁর স্ত্রী-বাবা। কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ইতিমধ্যেই তৃণমূল বিধায়ক তথা পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। এদিকে বাম নেতা মহম্মদ সেলিমও কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এনিয়ে তিনি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলেন। এর পাশাপাশি শাসকদল এবং বিরোধী দলের একাধিক কর্মী। আর এপরপরেই সামনের এই চার পৌর নির্বাচনের হয়ে প্রচারে দলের শীর্ষ নের্তৃত্ব অভাব ঠিক কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে বই কমেনি। তারই মধ্যেই যদি ফেলে আসা বছরে ফিরে তাঁকানো যায়, একুশে বিধানসভা নির্বাচনের বছরে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী, তৃণমূল নেতা মদন মিত্র, শোভন চট্টোপাধ্যায়, মুকুল রায় সহ আরও অনেকে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এমনকি দুই তৃণমূল প্রার্থীর মৃত্যুও হয়। যার জেরে জঙ্গিপুর এবং শামসেরগঞ্জে ভোট পিছিয়ে যায়। আবার খড়দহে ভোটের পর রেজাল্ট জেনে যেতে পারেননি কোভিড প্রয়াত কাজল সিনহা। তাই গত বছরের জ্বলজ্যান্ত উদাহরণও চিন্তা বাড়াচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দফতরের বুলটিন অনুযায়ী, যে চার জায়গায় ভোট হবে, সেখানে কোভিড পরিস্থিতি কী একটু যদি খেয়াল করে দেখে নেওয়া যাক। প্রথম উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, এই এলাকায় প্রথম থেকেই সংক্রমণ অনেকটাই কম। তবে তৃতীয় ঢেউ আসার পর তার ছবি অনেকাংশের বদলেছে। দার্জিলিংয়ে এই মুহূর্তে দৈনিক ৫০ জন এবং জলপাইগুড়িতে দৈনিক ৩৮ জন আক্রান্ত হচ্ছে। তাই আশঙ্কাটা বেড়েই যাচ্ছে, কারণ তার অধিকাংশভাগটা জুড়েই দার্জিলিং। পাশাপাশি চন্দননগর রয়েছে হুগলি জেলায়। এই মুহূর্তে সংক্রমণে পঞ্চম স্থানে রয়েছে হুগলি। দৈনিক ৪০০ জন আক্রান্ত হচ্ছে এই জেলায়। আসানসোল অবস্থিত পশ্চিম বর্ধমান জেলায়। এই জেলায় দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ৩৪৮ জন। এটাও নেহাত কম নয়। এবং উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় বিধাননগরে সংক্রমণ যথেষ্ট বেশি। মঙ্গলবারের পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দফতরের বুলটিন অনুযায়ী, উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৯১ জন এবং লাগোল কলকাতায় সংক্রমণ শীর্ষে রয়েছে। এই মুহূর্তে কলকাতায় আক্রামণ হয়েছে ৪৭৫৯ জন। সুতরাং আশঙ্কা রয়েছেই।
এখানেই শেষ নয় পৌর নির্বাচনের নিরাপত্তায় একটা বড় ভূমিকা পুলিশের। সেই পৌর নির্বাচনের কেন্দ্রগুলিতেও ইতিমধ্যেই থাবা বসিয়েছে কোভিড। কারণ এবার করোনায় আক্রান্ত বিধান নগর পুলিশ কমিশনার সুপ্রতিম সরকার সহ মোট সাত জন। বেশ কিছু উপসর্গ দেখা গিয়েছিল পুলিশ কমিশনার সহ বেশ কয়েকজন ট্রাফিক ও বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্মীদের। এরপর করোনা পরীক্ষা করানো হয় এবং গত সোমবার রিপোর্ট আসলে জানা যায় পুলিশ কমিশনার সুপ্রতিম সরকার এবং আরও ছয়জন বিধাননগরের ট্রাফিক পুলিশ কর্মী ও বিভিন্ন থানার পুলিশকর্মী করোনায় আক্রান্ত। পুলিশ কমিশনার সুপ্রতিম সরকার তিনি এই মুহূর্তে নিজের বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে এবং বাকি পুলিশ কর্মীদের মধ্যে একজন বিধান নগর হাসপাতালে ও বাকিরা নিজের বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। আর এত সবকিছুর পর স্বাভাবিকভাবেই চুপ করে বসে নেই বিরোধীরা। করোনা পরিস্থিতিতে পৌর নির্বাচন পিছনের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছে বিরোধীরা। তাই সব মিলিয়ে ভোটের পরিস্থিতি এবার ভালই গম্ভীর। কোন দিকে যাবে বাংলার বকেয়া পুর নির্বাচন, আশঙ্কায় রয়েছে কম-বেশি সব দলই।