হেরিটেজ হিসাবে পরিচিত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। কলকাতা তথা সারা বিশ্বের দরবারে স্থাপত্য়ের এক অন্যতম নির্দশন। কিন্ত এই ভিক্টোরিয়া আজ বিপদের সম্মুখীন। হেলে পড়েছে তার চাতালের দেওয়াল। প্রাথমিক পরীক্ষায় দু-ইঞ্চির বিচ্যুতি পাওয়া গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় চিন্তিত সবাই। বর্তমানে ভিক্টোরিয়ার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থা ন্যাশনাল বিল্ডিংস কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন লিমিটেডের (এনবিসি ইন্ডিয়া লিমিটেড)।
সম্পূর্ণ গথিক স্ট্রাকচারে তৈরি এই হেরিটেজ। দূষণের জেরে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বিপন্ন। ময়দান চত্বরে কিভাবে দূষণ কমানো যায় তা নিয়ে হাইকোর্টে গ্রিন ট্রাইবুনালে একাধিক মামলা হয়েছিল। ইতিমধ্যে ময়দান চত্বরে নিষিদ্ধ হয়েছে আগুন জ্বেলে রান্নার কাজ। এছাড়া বহুদিন যাবত ধর্মতলায় থাকা একাধিক বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে ফেলার কথা বলেছিল গ্রিন ট্রাইবুনাল। এই স্থাপত্য রক্ষা করতে গেলে ধর্মতলা চত্বর ও ময়দান এলাকা দূষণমুক্ত করা জরুরি।
ভিক্টোরিয়ার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংস্থা ন্যাশনাল বিল্ডিংস কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন লিমিটেডের ব্যাপারটি চোখে পড়া মাত্রই ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এছাড়া ভিক্টোরিয়ার টেকনিক্যাল কমিটিকেও বিষয়টি জানানো হয়। প্রাথমিক পরীক্ষার পরে বিশেষজ্ঞদের একাংশ বেশ কিছু সম্ভাবনার কথা বলেছেন। জানা গিয়েছে প্রায় ৮৫ বছরের পুরনো যে ১০ ফুট উঁচু চাতালের অপর যে মার্বেল রয়েছে তার ফাঁক দিয়েই চুইয়ে জল পড়েছে ভেতরে। আর সেই ফুলে ওঠা মাটি থেকে চাপ পড়ছে দেওয়ালে। ক্রমাগত সেই চাপের ফলে দেওয়ালে দুইঞ্চির দেওয়াল হেলে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে দেওয়ালটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা ভিক্টোরিয়ার মূল ভিতের বাইরের দেওয়াল। অর্থাৎ যে ভিতটি ভিক্টোরিয়ার মূল ওজন ধরে রেখেছে। মূলত সৌন্দর্যের জন্যই ঐ দেওয়ালটি তৈরী হয়েছিল।
এনবিসি ইন্ডিয়া লিমিটেডের একজন বিশেষজ্ঞর মতে- 'আগেও পশ্চিম দিকের দেওয়ালের একাংশ পড়ে গিয়েছিল, তখন পূর্ত মন্ত্রক ঠিক করেছিল। এবার সমস্যা পূর্বের দেওয়ালে'।
হেরিটেজ স্থপতি হিমাদ্রি গুহের সঙ্গে এই ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি দেওয়ালটি পরীক্ষা করেছেন। অবস্থানের জন্য 'লেজার ট্রেসিং' করা হয়েছে। সম্পূর্ণরুপে পরীক্ষার জন্য দেওয়াল টির আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করাতে হবে। কিন্তু বর্ষা কালের এই রকম স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার জন্য তা সম্ভব নয়। মার্বেল বৃষ্টির জল শুষে নেয়। তাতে শব্দের গতি বা শব্দতরঙ্গ বদলে যেতে পারে। ফলস্বরূপ প্রকৃত কারণটা বোঝা সম্ভব হবে না। হিমাদ্রিবাবুর কথায় শীতকালে শুকনো আবহাওয়াতে করতে হবে পরীক্ষাটি। এককথায় তাঁদের মতে সার্বিক ভাবে দেওয়ালটি পরীক্ষা না করলে বোঝা যাবে না আসল কারণ। যে মাটি বসে সেটি হেলে পড়েছে নাকি নির্মাণের সময়ে তা হেলানো ছিল। এদিকে মেমোরিয়ালের কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন ' দেওয়ালের সঙ্গে ভিক্টোরিয়ার ভিতের কোন সম্পর্ক নেই। তাও আমরা বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি'।