এদিনের শুনানিতে রাজ্য সরকারের তরফে আদালতকে আইনজীবী জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পর্যটন, সাংস্কৃতিক হেরিটেজের উন্নয়ন এবং উৎসবে পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সুসম্পর্ক স্থাপনের কাজে এই অর্থ ব্যবহার করা হবে।’’
দুর্গা পুজার অনুদান নিয়ে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে করা জনস্বার্থ মামলার শুনানি শেষ হল বৃহস্পতিবার। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। আপাতত এই মামলাগুলির রায় স্থগিত রাখা হয়েছে।
এদিনের শুনানিতে রাজ্য সরকারের তরফে আদালতকে আইনজীবী জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পর্যটন, সাংস্কৃতিক হেরিটেজের উন্নয়ন এবং উৎসবে পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সুসম্পর্ক স্থাপনের কাজে এই অর্থ ব্যবহার করা হবে।’’ রাজ্যের এই যুক্তি শোনার পরে আদালতের পালটা প্রশ্ন, "এই টাকা যে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় হবে তা নিশ্চিত করা হবে কী করে?" উত্তরে রাজ্য সরকারের আইনজীবীর তরফে জানানো হয় "ব্যয়ের শংসাপত্র ও বিল ভাউচার দেখে নিশ্চিত হওয়া যাবে। যেহেতু বাজেটে বরাদ্দ আছে, তাই অডিট করতেই হবে। ৯০ শতাংশের বেশি ক্লাব ব্যয়ের শংসাপত্র দিয়েছে। এটা না দিলে টাকা দেওয়া হবে না।"
এই সাওয়াল পর্বের পর মামলাকারীর পক্ষ থেকে পালটা দাবি করা হয়, জনগণের ট্যাক্সের টাকা কোনও সপ্রদায়ে কে মুখ্যমন্ত্রী অনুদান হিসাবে দিতে পারেন না। প্রসঙ্গত মামলাকারীর আইনজীবী এও উল্লেখ করেন যে, অতীতে হাই কোর্ট ইমাম ভাতা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল, যাতে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ না করা হয়। তাই জনগণের টাকা এভাবে ক্লাব গুলিকে দেওয়া ঠিক নয় বলেও দাবি করা হয় মামলাকারীর তরফে।
অনুদান প্রসঙ্গে রাজ্যের তরফে বলা হয়, "রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই সময় ঢাকিরা আসেন। ১০-২০ মিনিট ধরে ঢাক বাজানোর পর উদ্যোক্তারা তাঁদের পছন্দ করে বায়না করেন। অপর দিকে কুমোরটুলিকে শিল্পের প্রদর্শনশালা। দুর্গাপুজো ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে। মণ্ডপের শিল্পকলা, হস্তশিল্প উৎসবের মাধুর্যে অন্য মাত্রা যোগ করে। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়।"
মামলাকারীদের তরফে অবশ্য সাফ জানানো হয়, "‘ইউনেসকো দুর্গাপুজোকে হেরিটেজের তকমা দিয়েছে মানেই রাজ্য কোষাগার থেকে টাকা খরচ করতে পারে না।"
আরও পড়ুন - আদালতের শুনানির আগেই পুজোর অনুদানের বিজ্ঞপ্তি! পুজোর জন্য ২৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করল রাজ্য
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের ৪৩ হাজার পুজো কমিটিকে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিলেও পুজো কমিটিগুলো ছাড় পাবে বলে জানান তিনি। এই ঘোষণার পর থেকেই সরব হয় বিরোধী দলগুলি। এবার মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরোধীতায় হাই কোর্টের দ্বারস্থ সাধারণ মানুষ। একই দিনে এই মর্মে দুটি জনস্বার্থ মামালা দায়ের হয় কলকাতা হাই কোর্টে।
আরও পড়ুন - মানুষ ও যন্ত্রের অন্তর্নিহিত সম্পর্ক, 'অযান্ত্রিক'-এর ভাবনায় সাজছে যোধপুর পার্কের পুজো
মামলাকারীর দাবি যেখানে আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও 'টাকা নেই' বলে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘভাতা দিতে পারছে না রাজ্য, সেখানে দুর্গাপুজো বাবদ এই বিশাল অঙ্কের টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে কেন? পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে জল সংকট প্রবল, হাসপাতালে বেডের অভাব। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের হাতে থাকা অর্থ কোনও জনমুখি কাজে ব্যবহার না হয়ে কেন ক্লাবগুলিকে অনুদানে দেওয়া হচ্ছে? পাশাপাশি বিদ্যুত বিলে ছাড়ের সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করা হয়েছে। তাই জনস্বার্থ রক্ষার্থে আদালত যেন এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় সেই আবেদন জানিয়েছেন মামলাকারীরা।
আরও পড়ুন - মানুষ ও যন্ত্রের অন্তর্নিহিত সম্পর্ক, 'অযান্ত্রিক'-এর ভাবনায় সাজছে যোধপুর পার্কের পুজো