দুজনেরই মেন্টর এক। লক্ষ্য়ও এক।
মেন্টরের নাম প্রশান্ত কিশোর। আর লক্ষ্য় হল বিধানসভা।
২০১৯-এ দাঁড়িয়ে কেজরিওয়ালের লক্ষ্য় ছিল ২০২০-র বিধানসভা নির্বাচন জেতা। যে কারণে গত বছর তিনি ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্য়ুৎ ব্য়বহারে ছাড় দিয়েছিলেন। ছাড় বলতে পুরোটাই ছাড়। দিল্লিবাসীদের আর ২০০ ইউনিট বিদ্য়ুৎ ব্য়বহারে কোনও বিল দিতে হবে না, সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। গত বছর। যার ফল তিনি হাতেনাতে পেয়েছেন এ-বছর। প্রবল মেরুকরণের বাজারেও, দু-মাস ধরে রাস্তা জুড়ে বসে থাকা শাহীনবাগকে শাহিন বাগে পরিণত করতে পেরেছেন তিনি। এবার মমতার পালা। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যেখানে ১৮টা আসন পেয়ে রাজ্য়ে শাসকদলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে, ঠিক তখনই মমতাও হাঁটলেন কেজরিবালের পথ ধরে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে ২০২০-এর রাজ্য় বাজেটে ঘোষণা করলেন, ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্য়ুৎ ব্য়বহারে আর কোনও বিল ভরতে হবে না কাউকে।
আসলে নেহরুর কল্য়াণমূলক অর্থনীতির যে পথ ছেড়ে এসেছে বাজার অর্থনীতির ভারত, এবার সেই পথেই হাঁটা দিতে চাইছেন মমতা-কেজরিওয়ালরা। বাজার অর্থনীতি যেখানে স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছে, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য়, ,সবই এবার কিনে খেতে হবে, সেখানে কল্য়াণমূলক অর্থনীতি বলছে, এসবই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বলা ভাল, নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর তাই তো হোস্টেল ফি থেকে শুরু করে সামগ্রিকভাবে যখন উচ্চ শিক্ষার খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে মোদী সরকার, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থাকে বেচেবুচে দিয়ে তা শিল্পপতিদের হাতে তুলে দিচ্ছে, ঠিক তখনই বাসে মহিলাদের জন্য় বিনা পয়সায় যাতায়াতের ব্য়বস্থা করে দিচ্ছে কেজরিবালের সরকার, মেয়েদের পড়াশোনার জন্য় কন্য়াশ্রী প্রকল্পের ব্য়বস্থা করে দিচ্ছে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সরকার। বিদ্য়ুতের বিলে জেরবার মধ্য়বিত্ত, নিম্নবিত্তদের জন্য় কোনও সরকার ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনা পয়সার বিদ্য়ুতের কথা ঘোষণা করছে তো কোনও সরকার বলছে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত আর বিল ভরতে হবে না।
কেজরিওয়াল যেমন স্পষ্টই বলছেন, রাস্তাঘাটে কেউ দুর্ঘটনায় আহত হলে তাঁকে দূরের সরকারি হাসপাতালে না-নিয়ে গিয়ে কাছেপিঠের যে কোনও বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে, তার জন্য় যত খরচা লাগে দেবে দিল্লি সরকার। এদিকে মমতাও তেমন দুর্ঘটনায় রাশ টানতে বছরপাঁচেক ধরে চালিয়ে আসছেন সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ কর্মসূচি। সেই সঙ্গে কন্য়াশ্রী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্পগুলিও যেন সেই নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তবে এবারের রাজ্য় বাজেট যেন সবকিছুতে ছাপিয়ে গিয়েছে। অনেকেই বলছেন, মমতা যেন কল্পতরু হয়ে জনমোহিনী বাজেট বর্ষণ করেছেন বিধানসভা থেকে। যেসব গ্রাহক ৭৫ ইউনিট বা তার চেয়ে কম বিদ্য়ুৎ খরচ করবেন, তাদের আর বিদ্য়ুতের বিল ভরতে হবে না। সেইসঙ্গে আদিবাসীদের জন্য় জন্য় জয় জোহর পেনশন প্রকল্প, গৃহহীন চা শ্রমিকদের জন্য় চা-সুন্দরী প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন মমতা। বিনামূল্য় শ্রমিক সুরক্ষায় বরাদ্দ করেছেন ৫০০ কোটি টাকা। এইভাবে একের-পর-এক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেই মমতাও কার্যত কেজরিওয়ালের পথ ধরেই বিধানসভার লক্ষ্য়ে এগিয়ে চলেছেন বলে রাজনৈতিক মহলের মত। যেখানে নেপথ্য়ে রয়েছেন সেই প্রশান্ত কিশোর।