প্রায় একমাসে পা দিল আনন্দপুর কাণ্ড। অভিযুক্তের গাড়ির তলায় নিজের পা ভেঙেও তরুণীর শ্লীলতাহানি রুখেছিলেন নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্য়ায়। উদ্ধার করেছিলেন সেই তরণীকে। পরে ঘটনার মোড় ঘোরে। জানা যায়, অভিযুক্ত অভিষেকই তরুণীর 'হবু স্বামী'। এবং অভিযুক্তকে বাঁচানোর জন্য তরুণী বয়ান পর্যন্ত বদলে দেয়। মিথ্যে বলে পুলিশকে। এদিকে এই ঘটনায় নীলাঞ্জনার পায়ের হাড় টুকরো টুকরো হয়ে যায়। অপারেশন করতে হয়। এবং এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেন তাঁর স্বামী। নীলাঞ্জনার স্বামী দীপ শতপথি সাফ জানিয়েছেন,' অভিযুক্ত অভিষেক সেই রাতে আমার স্ত্রীকে মেরেই ফেলতে চেয়েছিল। তাই আমি অপরাধীর শাস্তি চাই'। এদিকে এই মুহূর্তে বাড়িতেই আছে নীলাঞ্জনা। সোমবার নীলাঞ্জনা তাঁর বয়ান দিতে যাবেন আদালতে। তার আগে রবিবার তিনি আমাদের সংবাদ মাধ্যম এশিয়ানেট নিউজ বাংলার সিনিয়র এডিটর দেবজ্য়োতি চক্রবর্তীকে দিলেন বিশেষ ইন্টারভিউ।
আরও পড়ুন, অস্ত্রোপচার সফল নীলাঞ্জনার, সাহসিনীকে কুর্ণিশ এশিয়ানেট নিউজ বাংলার
সোমবার সকালের দিকে, নীলাঞ্জনার আদালতে বিচারকের সামনে জবানবন্দী নেওয়া হবে। তাই কাল থেকে তাঁর এক নতুন লড়াই শুরু। এপ্রসঙ্গে নীলাঞ্জনা বলেছেন,'লড়াই ছাড়া জীবনে তো চলা যায় না। লড়াই যেদিন থেমে যাবে সেদিন আমার বাঁচাটাও থেমে যাবে। লড়াই করতে করতেই আমি পৃথিবীতে এসেছিলাম। আমার মা আমায় গল্প শুনিয়েছেন, জন্মের ১০ মিনিট বাদে নাকি আমি কেঁদেছিলাম। তাই জীবন যুদ্ধটা জন্মানোর পর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই এই লড়াইটা আমি আমৃত্যু চালিয়ে যেতে পারব। আমি সাইবাবার ভক্ত। আমার ছেলে-মেয়ে, পরিবার ছাড়াও প্রত্য়েকেই আমার পাশে আছে। তাই লড়াই করেই আমি বাঁচতে চাই। '
তাঁর পায়ের অবস্থা এই মুহূর্তে কী, জানতে চাইতে নীলাঞ্জনা বলেন, আমার পায়ের সেলাই এর ক্ষত গুলি সেগুলি আস্তে আস্তে শুকিয়ে আসছে। কিন্তু পায়ের হাড় ভেদ করে মাংসপিন্ড বেরিয়ে আসায় অপারেশনেরও পরও এখনও পর্যন্ত বোজেনি। আমার লাস্ট ড্রেসিং এ দেখেছি সেখানে এখন এক আঙুল গর্ত আছে। প্লাস্টিক সার্জারি করে ওটা ঠিক হবে না। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক শোকানোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তারপর হেসে নীলাঞ্জনা বললেন,' সংসারের কাজে-কর্মে ফিরতে চাই। পুজো আসছে, মাকে দর্শন করতে চাই।'
আরও পড়ুন, হাসপাতাল থেকে ছুটি পেলেন প্রতিবাদী নীলাঞ্জনা, গান গেয়ে-হাততালিতে সম্মান জানাল কর্মীরা
এরপর আদালতে প্রসঙ্গ আসতেই নীলাঞ্জনা জানালেন, সোমবার তিনি অ্য়াম্বুলেন্সে করেই আদালত পৌছবেন। হয়তো এক সপ্তাহ পর গেলেও হত। কিন্তু এটা আমার একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে কর্তব্য। কারন যে অভিযুক্ত ধরা পড়েছে , সে বারবার জামিনের আবেদন করছে। সেগুলি এড়ানোতেই আমার দায়িত্ব, কোর্টে আমার গোপন জবানবন্দি দেওয়া। আমার জবানবন্দীর উপরেই অনেক কিছু নির্ভর করছে। তাই আমি তাড়াতাড়ি নিজে থেকেই চেয়েছিলাম কোর্টে গিয়ে আমার বয়ান দিতে। কালকের দিনটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ দিন।যদিও নির্যাতিতা যুবতি, নীলাঞ্জনার খবর নিয়েছেন বলে তিনি জানান।'
আরও পড়ুন, ঘনিষ্ঠতা বাড়তেই প্রথম দেখা, ফাঁকা গাড়িতে শ্লীলতাহানির শিকার আনন্দপুরের তরুণী
উল্লেখ্য, নিজের জীবনকে বাজি রেখে তরুণীর শ্লীলতাহানির রোখেন নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্য়ায় এবং তাঁর স্বামী দীপ শতপথী। শনিবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ একটি নিমন্ত্রণ রক্ষা করে ইএম বাইপাস লাগোয়া আনন্দপুর থেকে ফেরার তোড়জোড় করছিলেন নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্য়ায় এবং তাঁর স্বামী দীপ শতপথী। আর প্লটের সামনে পার্ক করে রাখা গাড়িতে চড়েও বসেছিলেন নীলাঞ্জনা এবং দীপ। আচমকাই তাঁরা খেয়াল করেন বাইপাসের কাছে ঘন কালো নিকশ অন্ধকার থেকে ভেসে আসছে নারী কন্ঠের 'বাঁচাও' আর্তনাদ। আওয়াজ শোনার পর নীলাঞ্জনা আর দুবার ভাবেননি,নেমে পড়েছেন বাঁচাতে, ওই তরুণীকে। অভিযুক্ত গাড়িটা ততক্ষণে উদ্ধারকারীকে সামনে দেখতে পেয়ে, পায়ের উপর গাড়ি চালিয়ে দেয়। পরে ধরা পড়ে অভিযুক্ত যুবক। জানা যায়, অভিযুক্ত যুবকই আসলে ওই নির্যাতিতার 'হবু বর'।
আরও পড়ুন, বিশ্বের প্রথম ১০০ বিজ্ঞান নগরীর তালিকায় স্থান কলকাতার, গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে শহরবাসীর
এদিকে এত কাণ্ডের পরে যার শ্লীলতাহানি রুখতে গিয়ে নিজের পা ভাঙলেন নীলাঞ্জনা, সেই তরুনী আবার অভিযুক্ত অভিষেক বাঁচাতে গিয়েই রাতারাতি বদলে ফেললেন বয়ান। অভিষেককে বাঁচাতে পুলিশকে বললেন মিথ্য়ে। তবে সেই সময় চলছিল নীলাঞ্জনা অপারেশন। অপরদিকে আলিপুর কোর্টে ওঠে মামলা। রাতারাতি বদলে যাওয়া তরুণীর ব্যবহারে যদিও উৎসাহ দেখাননি যদিও ওই উদ্ধারকারি দম্পতি। নীলাঞ্জনা স্বামী দীপ শতপথি স্পষ্ট জানিয়েছেন, 'গাড়ি চাপা দিয়ে অভিষেক খুনই করতে চেয়েছিল নীলাঞ্জনাকে, আমি অপরাধীর শাস্তি চাই।' ইন্টারভিউ শেষের দিকে নীলাঞ্জনা জানালেন,' আবার এমন ঘটনা আমার সামনে ঘটলে আমি প্রতিবাদ করব। তবে একা সমাজ পাল্টানো যায় না, এগিয়ে আসতে হবে বাকিদেরকেও।' যদিও এতকাণ্ডের পর সোমবার নীলাঞ্জনার বয়ানের জন্য অপেক্ষা করছে সারা কলকাতা।
আরও পড়ুন, হেরেই খুশি বাকিরা, করোনায় সবাই পিছনে ফেলে এগিয়ে কলকাতা-উত্তর ২৪ পরগণা