লক্ষ্মীপুজোর আসলে আমার মা রত্না চট্টোপাধ্যায়ের ছবিও বসাই। আমাদের জীবনে আমাদের মা সত্যিই জীবন্ত লক্ষ্মী ছিলেন। তাই এই দিনে ওঁকেও সেই সম্মান, সেই মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করি। দেবী লক্ষ্মীর মতোই এ দিন তিনিও আমাদের আরাধ্যা।
পছন্দসই খাবার পেলে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় গুছিয়ে খান। যেমন, বোন পল্লবী চট্টোপাধ্যায়ের রান্না করা খিচুড়ি ভোগ, বড়ি ভাজা, লুচি পায়েস। পরিমাণে অল্প হলেও সব পদ চেখে দেখেন। লক্ষ্মীপুজোয় যত রাতই হোক, বোনের বাড়িতে তাঁর উপস্থিতি বাঁধা। এশিয়ানেট নিউজ বাংলাকে জানালেন পল্লবী স্বয়ং
গত দু’বছর যেন ঘোর দুঃস্বপ্ন। মারণ ভাইরাসের দাপটে গোটা বিশ্ব কাবু। বাঙালিও ভুলতে বাধ্য হয়েছিল তার সেরা উৎসব, উদযাপন। ২০২০-তে দুর্গাপুজো প্রায় হয়ইনি। ২০২১-এ তুলনায় পুজোর সংখ্যা বেড়েছে। ২০২২ আমাদের দুর্গাপুজোকে দুর্গা উৎসবে পরিণত করেছে। আমার বাড়ির লক্ষ্মীপুজো যদিও বন্ধ যায়নি। ছোট করে হলেও নিয়ম মেনে মায়ের আরাধনা করেছি। তবে হ্যাঁ, বন্ধু, পরিচিতরা কেউ আসতে পারেননি। বাড়িটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। লোকজনে বাড়ি গমগম না করলে সেই বাড়ি পুজো বাড়ি নাকি?
এ বছর আগের মতোই ধুমধাম হবে। সদ্য মুম্বই থেকে ফিরেছি। ফিরেই লক্ষ্মীপুজোর তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছি। মায়ের শাড়ি কেনা, গয়না পালিশ করতে দেওয়া, পুজোর বাজার--- নিজে হাতে করছি। আমার মা রত্না চট্টোপাধ্যায় খুব নিষ্ঠার সঙ্গে বাড়িতে লক্ষ্মী পেতেছিলেন। রূপোর সেই মূর্তি সময়ের ঝাপটায় আগের তুলনায় অনেকটাই ক্ষীণকায়া। তাঁকেই আমার নামে সংকল্প করে গিয়েছেন। আমিও সেই দেবী প্রতিমাকেই প্রতি বছর সাজিয়ে গুছিয়ে পুজো করে আসছি।
লক্ষ্মীপুজো সাধারণত ঘরের পুজো। দুর্গাপুজোর মতো অত জাঁকজমক নেই। আমিও চেষ্টা করি ছিমছাম ভাবে পুজো করার। তবে গত দু’বছর বাদে প্রতি বছরেই আমার বাড়িতে অনেকেই আসেন। আত্মীয়-পরিজনের পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রির মানুষ যেমন পরিচালক, প্রযোজক, আমার তারকা বন্ধুরা, ডিজাইনার বন্ধু এবং প্রতিবেশি। সবাইকে যাতে যত্ন করতে পারি তার জন্য আলাদা প্যান্ডেল করতে হয়। আর সিঁড়ির দু’পাশ, দরজা সেজে ওঠে আলো, ফুলের মালায়। ঘরেও এ দিন নানা ধরনের স্নিগ্ধ আলোর ছটা। ফুল, ধূপ, ধুনোয় বাড়ির পরিবেশই যেন বদলে যায়!
বাড়ির পাশাপাশি আমার দেবী মা-ও পাল্লা দিয়ে সেজে ওঠেন। রূপোর প্রতিমাকে প্রথমে ঘষেমেজে ঝকঝকে করে তুলি। তার পর তাকে নতুন শাড়ি, গয়না, সিঁদুর, টিপ পরিয়ে যখন সিংহাসনে বসাই--- রূপ যেন ফেটে পড়ে। লক্ষ্মী পুজোয় পদ্ম ফুল আমার খুব প্রিয়। দেবী পদ্মাসনা। তাই তাঁকে এই ফুলেই সাজাতে পছন্দ করি। মা চলে যাওয়ার পর থেকে ওঁর ছবিও লক্ষ্মীপুজোর দিন লক্ষ্মীর আসনে জায়গা করে নিয়েছে, নিজগুণে। আমাদের মা রত্না চট্টোপাধ্যায় সত্যিই জীবন্ত লক্ষ্মী ছিলেন। কী ভাবে তিনি আমাদের বড় করে তুলেছেন, গোটা সংসার আগলেছেন, অভাবের আঁচ আমাদের গায়ে লাগতে দেননি —দেখেছি। তাই আমার চোখে উনি জীবন্ত দেবী। এ দিন দেবীর পাশাপাশি আমার মা-ও পূজিত হন।
আরও পড়ুন - হরিদেবপুরে নিখোঁজ যুবকের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার করা হল বান্ধবী এবং তাঁর মা ও ভাইকে
পুজোর আগের রাতে বাড়ি সাজানো দিয়ে কাজ শুরু। পুজোর দিন নিজের হাতে বোগ রান্না করি। খিচুড়ি, আলুর দম, ফুলকপির তরকারি, পনির, পাঁচ রকম ভাজা, লুচি, বড়ি ভাজা, চাটনি, পায়েস। এ সব করতে করতে সন্ধে নামে। বাড়িতে লোকের আনাগোনা শুরু। সবাই আমায় ঠেলে পাঠান পরিচ্ছন্ন হওয়ার জন্য। পুজো, বাঙালির উৎসব মানেই আমার সাজ শাড়ি। সঙ্গে মানানসই ব্লাউজ, হাল্কা সাজ আর সোনার গয়না। হ্যাঁ, লক্ষ্মীপুজোয় নিজেকে সোনার গয়নায় সাজাতে ভালবাসি। আমাদের বাড়িতে দেবীর পাশাপাশি নারায়ণ পুজোও হয়। তাই চেষ্টা করি সবাই আসার আগে নিরিবিলিতে পুজো সেরে ফেলতে। যজ্ঞ, পুষ্পাঞ্জলির সময় বেশি ভিড় থাকলে পুজোয় যেন মন বসে না!
আরও পড়ুন - গতিপথ ঘোরানোর চেষ্টাই কি মাল নদীর বিপর্যয়ের কারণ, নাকি, এর পেছনে লুকিয়ে আরও ভয়ঙ্কর বিপদ?
আমার পুজো সম্পূর্ণ রাতে যখন দাদা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, আপনাদের সবার বুম্বাদা আসেন। প্রতি বছর ঠিক দাদা আসবেই। আমার হাতের খিচুড়ি ভোগ আর বড়ি ভাজা প্রিয়। বুম্বাদার বদনাম, দাদা নাকি খায় না। ভগবানের মতো দৃষ্টিভোগ দিয়ে সেরে দেয়! আপনাদের জানাচ্ছি, পছন্দসই খাবার পেলে দাদা কিন্তু গুছিয়ে খায়। যেমন, পুজোর সমস্ত ভোগ দাদা চেখে দেখে। তবে অল্প পরিমাণে। আসলে দাদার খাওয়াটাই অল্প। এ বছর আমার বাড়তি আনন্দ, আমার মেয়েও আসছে। ওকে পুজোর অংশ করে নেব। আমার পরে তো ওই দেবীর আরাধনা করবে! রাতে আমরা ঘরের লোকেরা গোল হয়ে বসব। ভোগ খেতে খেতে আড্ডা। কোজাগরির রাত গাঢ় হয়ে নামবে শহরের বুকে। আমার বাড়ি তখন জেগে। তবেই না মা লক্ষ্মী সবাহন চট্টোপাধ্যায় সংসারে আসন পেতে বসবেন।
আরও পড়ুন - লক্ষ্মী পুজোর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে রয়েছে জেগে থাকার বার্তা? জানুন 'কোজাগরী'-র প্রকৃত অর্থ