কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যা ঘিরে ক্ষোভে উত্তাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
এই প্রতিবাদ আন্দোলনের আঁচ এসে পড়ল কলকাতাতেও
মঙ্গলবার আমেরিকান সেন্টারের বাইরে বিক্ষোভ দেখালো এসএফআই-ডিওয়াইএফআই
তবে তাদের আন্দোলন যানবাহন চলায় বাধা হয়নি
প্রকাশ্য রাস্তায় শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে খুন কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড। যার জেরে গত আটদিন ধরে বিক্ষোভে উত্তাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবাদ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় ১৪০টি শহরে। পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ যে সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আশ্রয় নিতে হয় বাঙ্কারে। মঙ্গলবার আবার তিনি সেনা নামানোর হুমকি দিয়েছেন। বস্তুত শুধু আমেরিকায় নয়, এই জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার গোটা পৃথিবীর মানুষ। এবার সেই ক্ষোভের আঁচ এসে পড়ল শহর কলকাতার বুকেও। মঙ্গলবার করকাতার আমেরিকান সেন্টারের বাইরে বিক্ষোভ দেখালো বামপন্থী ছাত্র ও যুব সংগঠন এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই-এর সদস্যরা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর উপর এই ধরনের বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণ রোধ করতে ব্যর্থ, এই অভিযোগ তুলে স্লোগান দেন তারা। হত্যায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করে আমেরিকা জুড়ে যে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, সেই প্রতিবাদ আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বেশ কিছু প্ল্যাকার্ড ও পোস্টারও দেখা গিয়েছে কলকাতার এই বিক্ষোভে। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেছেন, 'আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবিদ্বেষী হামলার প্রতিবাদ জানাচ্ছি'।
এমনিতেই কলকাতায় সোমবারের পর মঙ্গলবারও প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্প সংখ্যক বাস থাকায় অনলক ১'এ অফিসযাত্রী ও ব্যবসায়িক কাজে বাইরে বের হওয়া মানুষ যাতায়াত করতে দারুণ সমস্যার মুখে পড়েছেন। তাপ উপরে শহরের কেন্দ্রস্থলে চৌরঙ্গী এলাকায় এই বিক্ষোভ তাদের সেই দুর্দশা বাড়িয়ে দিতে পারত। তবে সিপিএম-এর শিক্ষার্থী ও যুব সংগঠন এই ক্ষেত্রে দারুণ দায়িত্বশীল ভূমিকার পরিচয় দিয়েছে।
লকডাউনের জমায়েতের বিধি মেনে এদিনের প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন ৬০ জনের মতো। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলা তাদের এই বিক্ষোভে যানবাহন চলাচল কোনওভাবেই ব্যাহত হয়নি বলেই জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। সেইসঙ্গে বিক্ষোভকারীদের প্রত্যেকেরই মুখে ছিল মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনেই তাদের প্রতিবাদে সামিল হতে দেখা গিয়েছে।
সোমবার এই জ্বলন্ত বিষয়টি নিয়ে শহরের এসপ্ল্যানেড এলাকায় বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন আরেক বামপন্থী দল এসইউসিআই সদস্যরা।
৪৬ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড-এর মৃত্যু হয়েছিল গত ২৫ মে। এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ তার ঘাড়ে পায়ের চাপ দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাঁকে হত্যা করেন। সেই ঘটনার ভিডিওটি ভাইরাল হতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে স্বতঃস্ফূর্ত হিংসাত্মক প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের ভয় কেউ পাচ্ছেন না। লকডাউনের বিধি নিষেধ কেউ মানছেন না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই ক্ষোভ প্রশমিত করতে কড়া দমন নীতি নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিভিন্ন শহরে কমপক্ষে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করেছে মার্কিন পুলিশ। কিন্তু, তাতে বিক্ষোভ তো থামেইনি, বরং তার আঁচ আরোই বেড়েছে।