জঙ্গলমহলের এই 'ফরেস্টম্য়ান' সারাটা জীবন রাত জেগে থাকতেন, 'জঙ্গলে আগুন লাগতো না তো'

  • জঙ্গলমহলের মানুষ তাঁকে চেনেন, 'ফরেস্ট ম্য়ান অব বলরামপুর' নামে
  • বন দফতরে দিনমজুরির কাজ করতেন মানুষটা
  • দিনের বেলায় সন্তানস্নেহে বড় করতেন গাছগুলোকে, আর রাতের বেলায় জেগে থাকতেন
  • জঙ্গলে আগুন লাগলে প্রাণ বিপন্ন করে ছুটে গিয়েছেন আগুন নেভাতে

বুদ্ধদেব পাত্র, পুরুলিয়া: আদিম জঙ্গল তাঁকে ভালবাসে আর তিনি সোহাগ করেন সেই জঙ্গলের প্রতিটা বৃক্ষ, গুল্ম আর তৃণকে' ফরেস্ট ম্য়ান অব বলরামপুর' বলে জঙ্গলমহলের মানুষ তাঁকে একডাকে চেনেন আর তিনি জঙ্গলমহলকে  চেনেন  হাতের তালুর মতো আর তাই আজীবন লাঠি হাতে পাহারা দিয়ে গিয়েছেন সেখানকার গাছগাছালিগুলোকে আগুনের হাত থেকে জঙ্গলকে বাঁচিয়েছেন নিজের জীবন বিপন্ন করেও। 

Latest Videos

নাম-- গোরাচাঁদ মাহাত আজ অবধি কোনও সরকারি স্বীকৃতি না-জুটলেও মানুষের দেওয়া 'ফরেস্টম্য়ান'  স্বীকৃতিকে সামনে রেখেই তিনি এগিয়ে চলেছেন সারাটা জীবন অন্ধকারে একা

জীবনের অর্ধেকটাই কেটেছে বন দফতরে দিনমজুরি করে রাতদিন এক করে চারাগাছকে শিশুর মতো পালন করে এসেছেন নিজের হাতে তাদের বড় করেছেন দিনের বেলা লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে জঙ্গল পাহারা দিয়েছেন আর রাতের বেলায় জাগ্রত থেকেছেন এই ভেবে, 'জঙ্গলে আগুন লাগতো না তো' পুরুলিয়ার বলরামপুর ব্লকের বাধাকুলি গ্রামের এই মানুষটাই আজ সেখানে 'ফরেস্টম্য়ান অব বলরামপুর'

সেই ছোটবেলা থেকেই তাঁর প্রকৃতিপ্রেমলাঠিহাতে গাছ পাহারা দেওয়া আজ এই বয়সে খাটিয়া শুয়েও মনে পড়ে যায় সেইসব দিনগুলোর কথা কেউ গাছ কাটতে এলে লাঠি নিয়ে একেবারে রে-রে করে তাড়া করে গিয়েছেন।  দিনের বেলা চারাগাছকে সন্তানস্নেহে যত্ন করা আর রাতের বেলায় জঙ্গলে আগুন লাগছে প্রাণের ঝুঁকি তা নেভাতে ছোটা, সবই আজ তাঁর অতীতের ক্য়ানভাসে উঁকি মেরে যায় তবে আজ বড় আক্ষেপ হয় তাঁরনা, কোনও স্বীকৃতি না-পাওয়ার জন্য় নয়বরং বয়সের ভারে আজ আর গাছগুলোর খোঁজখবর নিতে না-পারার জন্য়

অসমের জোড়হাটের প্রান্তিক মানুষ যাদব মলয় পায়েং কিন্তু এমনই এক ফরেস্টম্য়ান। জঙ্গলের ওপর তার কাজের কথা শুনে অনেকেই অবাক হন। এই মানুষটিকে ভারত সরকার পদ্মশ্রী সম্মান দিয়েছে অসমের  প্রত্যন্ত এলাকার যাদব পদ্মশ্রী ছাড়াও  পেয়েছেন অনেক পুরস্কার। অসমের এক বন্ধ্যা জমিকে বনভূমির রূপ দিয়েছেন তিনি ১৩৬০ একর জমিকে বনভূমিতে পরিণত করেছেন তিনি। আজ কত জীবজন্তুর বসবাস সেখানে।

তবে গোরাচাঁদ মাহাতোর কপালে কোনও পুরস্কার জোটেনি জাতীয় হোক কি আঞ্চলিক কিন্তু তাতে কী মানুষের দেওয়া স্বীকৃতি তাঁর কাছে কিছু কম নয় রাঙামাটির দেশে, রুখাসুখা মানুষগুলো তো তাঁকে ফরেস্টম্য়ান বলে ডাকেন তাই-ই বা কম কীসের আর সবচেয়ে বড় কথা, রোদের ফাঁকে গাছগুলো যখন উঁকি মেরে  তাকায়, সেই ছোটবেলা থেকে যাদের হাতে করে বড় করেছেন তিনি, তখন কী ভালোই-না লাগে। 

বলরামপুরে গিয়ে খাটিয়ে শুয়ে থাকা ওই মানুষটাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, 'কেমন আছেন', তিনি কোনও উত্তরই দেবেন না কিন্তু তাঁর নির্বাক চোখের জল বুঝিয়ে দেবে, আজ তিনি মোটেও ভাল নেই রাতদিন জঙ্গলে গিয়ে খোঁজ নিতে পারেন না  গাছেরা সব কেমন আছে তাই আজ বড় একাকী তিনি

তবু নিজের মনে গাছেদের সঙ্গে কথা বলে নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে চলেন তিনি গাছের দিকে তাকিয়ে, বিড়বিড় করে  নিজের মনেই বলতে থাকেন, "মরে গেলে তো এই মাটিতেই মিশবো তখন আবার কথা হবে খন, কেমন?"

Share this article
click me!

Latest Videos

পুলিশের তৎপরতায় বানচাল ডাকাতির প্ল্যান! গ্রেফতার ২ অপরাধী, চাঞ্চল্য Birbhum-এ
'কুমিল্লা ছেড়ে চলে যা' কুমিল্লায় বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা! | Bangladesh News |
Viral Video! আবাসের টাকা ঢুকতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাটমানি চাইছেন TMC কর্মী | Murshidabad Latest News
‘প্রণামের সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছে বাঙালি’ বিস্ফোরক মন্তব্য Dilip Ghosh-এর, দেখুন কী বলছেন | Dilip Ghosh
ফিরহাদকে কড়া ডোজ দিলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari #shorts #shortsvideo #suvenduadhikari #shortsfeed