নিরপেক্ষ ভাবেই রিপোর্ট তৈরি করবে কেন্দ্রীয় দল, সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে আশা রাজ্যের

 

  • চাপে পড়ে কেন্দ্রীয় দলকে সহযোগিতা করার আশ্বাস রাজ্যের
  • তবে সুপ্রিমকোর্টের পর্যবেক্ষণ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
  • রাজনৈতিক ভাবে কেন্দ্রের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট  রাজ্যের শাসক দল
  • কেন্দ্রীয় দলকে নিরপেক্ষতা নিয়ে চাপ মুখ্যসচিবের

Asianet News Bangla | Published : Apr 23, 2020 5:09 AM IST / Updated: Apr 23 2020, 10:45 AM IST

তথ্য গোপন করছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের বিরোধী মহল থেকে উঠছে এই দাবি। এর মধ্যেই পরিস্থিতি দেখতে রাজ্যে হাজির হয়েছে কেন্দ্রীয় দল। করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় ভূমিকার সমালোচনা করলেও রাজ্যে আসা কেন্দ্রীয় দলকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেই দাবি করছে নবান্ন। 

মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানিয়েছেন, বর্তমানে কলকাতা ও উত্তরবঙ্গে ২টি কেন্দ্রীয় দল রয়েছে, তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করছে রাজ্য সরকার। দলগুলি যেখানে যেতে চাইবে সেখানেই নিয়ে যাওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি। সহযোগিতার হাত যেমন বাড়ান হচ্ছে, তেমনি কেন্দ্রীয় দলের থেকে যে রাজ্য রিপোর্ট তৈরির ব্যাপারে নিরপেক্ষতা আশা করছে, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যসচিব।

আক্রান্ত্রের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে, দেশবাসীর খোঁজ নিতে এবার সরাসরি ফোন করবে কেন্দ্র

দেশে করোনা মোকাবিলায় এবার 'কালো ঘোড়া' সেপসিস ড্রাগ, ভরসা রাখছে এইমস

করোনার এবার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুরু চিনে, ফরসা থেকে কালো হয়ে গেলেন ২ চিকিৎসক

রাজ্যে এসেছে কেন্দ্রীয় দল। মঙ্গলবার  শহরের কিছু এলাকা ঘুরলেও বুধবার তারা কোথাও যায়নি বলেই জানা যাচ্ছে। তবে শোনা যাচ্ছে, কলকাতায় থাকা কেন্দ্রীয় দলের প্রধান অরূপ চন্দ্র ইতিমধ্যে মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখে তাঁরা রাজ্যের থেকে কী কী তথ্য চান ও কোন কোন জায়গা পরিদর্শনে যেতে চান তা সবিস্তার জানিয়েছেন। বুধবার কার্যত ঘরবন্দি ছিল জলপাইগুড়ির দলটিও। তবে তারা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসনের  কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এদিন দলটি ফের পরিদর্শনে বের হতে পারেন বলে জানা গিয়েছে। 

 রাজ্যে দুই কেন্দ্রীয় দলের আশা নিয়ে আগেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল নবান্ন। এদিকে সেই সময় রাজ্যে এসে তাঁরা সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিরা। এনিয়ে দিল্লিতেও রিপোর্ট পাঠান হয়। এরপর মঙ্গলবার বিকলেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা চিঠি দেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকে। তাতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৩৫ নম্বর ধারা ও সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে চলতে রাজ্য বাধ্য। রাতেই  কেন্দ্রকে মুখ্যসচিব জবাবি চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দেন, পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতাই করছে রাজ্য। 

সেই  চিঠি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব পুণ্যসলিলা শ্রীবাস্তব জানান, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন,  রাজ্য প্রশাসন বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ও সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে চলবে।” এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে পুণ্যসলিলা আরও বলেন, ‘‘আশা করব ওই দলে যে প্রতিনিধিরা  আছেন তাঁদের অভিজ্ঞতার ফায়দা নিতে রাজ্য সক্ষম হবে।’’ 

প্রশাসনিক ভাবে কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে সহযোগিতার পথে হাঁটলেও রাজনৈতিক ভাবে যে তারা এখনও কেন্দ্রের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট, তা অবশ্য বারবার বোঝাচ্ছে  রাজ্যের শাসক দল। কারও নাম না-করেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখে বড় বড় কথা বলে বৈঠক। একে ওকে পাঠানো। আইনশৃঙ্খলা, লকডাউন দেখে এসো। খেতে পাচ্ছে কি না, স্নান করতে পারছে কি না দেখে এসো। এত বড় কড়া চিঠি দেওয়া! তা আমিও দিতে পারি।’’

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব তাঁর চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টের যে পর্যবেক্ষণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে নবান্ন। তাদের একাংশের মতে, করোনা সংক্রমণ নিয়ে প্রকাশিত খবর ও পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজের নিজের রাজ্যে ফেরত পাঠানো নিয়ে দায়ের হওয়া মামলার প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালত বলেছিল, কেন্দ্রের নির্দেশ রাজ্যগুলি মেনে চলতে বাধ্য। এর সঙ্গে রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল পাঠানোর কোনও সম্পর্ক নেই। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের অপব্যবহার করছে বলেই নবান্নের ওই অংশের অভিমত।

প্রশ্ন উঠছে, তাহলে  অসন্তোষ সত্ত্বেও কেন সহযোগিতার পথে হাঁটল নবান্ন। নবান্ন সূত্রের ব্যাখ্যা, মুখ্যসচিব কেন্দ্রের নির্দেশ না-মানার কথা বললে তাঁকে বিপদে পড়তে হত। কারণ বিপর্যয় মোকাবিলা আইন অনুযায়ী, রাজ্যের কোনও আমলা যদি অসহযোগিতা করেন তা হলে তাঁকে গ্রেফতার পর্যন্ত করা যেতে পারে। আর রাজ্য কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করলে বা বাধা দিলে রাজ্যে সেনা বা আধা সেনা নামাতে পারে কেন্দ্র। তাই সাহায্যের কথা বলার সঙ্গে নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহের কাঁটাটিও বিঁধিয়ে রেখেছে রাজ্য।

Share this article
click me!