অবশেষে সোনারপুরেরর এইচআইভি হোমকাণ্ডে সামনে এল রাজ্যের নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দফতরের অবস্থান। এই দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী শশী পাঁজা এই ইস্যু-তে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন এদিন। এশিয়ানেট নিউজ বাংলা-র সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রী জানান তিনি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন। পুরো তথ্য তাঁর কাছে এলে তবেই তিনি এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে পারবেন।
আরও পড়ুন- প্রচারের লালসা, 'এইচআইভি হোম কাণ্ডে' মিমি চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে তোপ দিলীপের
সোনারপুর এইচআইভি হোমকাণ্ডে বুধবারই মন্ত্রী শশী পাঁজা-কে ফোন করা হয়েছিল এশিয়ানেট নিউজ বাংলার পক্ষ থেকে। কিন্তু তাঁর ফোন লাগাতার ব্যস্ত থাকায় কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সেই সঙ্গে বিষয়টি সম্পর্কে তাঁর দফতরের অবস্থান কি তাও সামনে আসেনি। কারণ পয়লা বৈশাখের উপহার বিলি এবং ভোজের আয়োজন করতে গিয়ে একদল এইচআইভি পজিটিভ ছেলে-মেয়ে-কে করোনাভাইরাসের এই সংক্রমণের মধ্যে একাধিক বহিরাগত-র সংস্পর্শে আনা হয়। এখানেই শেষ নয় এই সময় সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং নিয়মকেও তুড়ি মেরে ওড়ানো হয় বলে অভিযোগ। পুরো অনুষ্ঠানটি মিডিয়া পার্সন-দের দিয়ে কভার করানো হয়। এমনকী, অনুষ্ঠানের পর এইচআইভি পজিটিভ শিশুদের ছবি ফেসবুকে পোস্টও করে দেন বারুইপুরের এসপি রশিদ মুনির খান। একই সঙ্গে তাঁর এমপি প্রোফাইলের ফেসবুক পেজেও ছবিগুলি পোস্ট করেন সাংসদ মিমি চক্রবর্তী। সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশিকা অনুযায়ী কোনও এইচআইভি পজিটিভ-এর পরিচয় ও ফেসিয়াল রেকোগনিশনও প্রাকাশ্যে করা যায় না। এক্ষেত্রে একজন সাংসদ ও পুলিশ সুপার কীভাবে দায়িত্ব জ্ঞানহীন-এর মতো লকডাউন নিয়ম-কে তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে, এইচআইভি পজিটিভ-দের পরিচয় প্রকাশ্যে আনতে পারেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। যদিও, গোটা বিষয়ে বিন্দুমাত্র অনুতাপ বা লেভেল অফ অফেন্স বোঝার মতো অবস্থা না সাংসদ না পুলিশ সুপারের আছে বলেও অভিযোগ ওঠে। কারণ, এই খবর প্রকাশ হওয়ার পর চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেলেও সাংসদ মিমি চক্রবর্তী এবং পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খান- কেউই তাদের ফেসবুক ওয়াল থেকে এইচআইভি শিশুদের নিয়ে করা পোস্টগুলি সরাননি।
মন্ত্রী শশী পাঁজা পুরো ঘটনাটি ফোনে এশিয়ানেট নিউজ বাংলার প্রতিনিধি-র কাছে শোনেন। বিষয়টি যে তিনি অতি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন তাও জানান। তবে, এখনই এই বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না বলেও অবস্থান স্পষ্ট করেন। পুরো বিষয়টি যে তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠাচ্ছেন তারও ইঙ্গিত দেন। এশিয়ানেট নিউজ বাংলা-র প্রতিনিধি-কে তিনি পরিস্কার জানান এই বিষয়টি পুরো পরিস্কার করে জানাবে জেলা প্রশাসন। সেখান থেকেই সরকারের অবস্থানের বিষয়ে স্পষ্ট উত্তর মিলবে।
আরও পড়ুন- 'দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত', এইচআইভিকাণ্ডে মিমি ও রশিদের বিরুদ্ধে তোপ রঞ্জিত শূর-এর
এদিকে, এই ঘটনা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমতো তোলপাড় পরিস্থিতি। এই মুহূর্তে প্রধান বিরোধী দলে পরিণত হওয়া বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ঘটনায় দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি জানান। নরেন্দ্রে মোদী সরকার রাজ্য-কে লকডাউন লঙ্ঘন নিয়ে এমনি এমনি চিঠি দেয়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সিপিএম নেতা এবং বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য-ও জানিয়েছেন, এটা পুরোপুরি আইন লঙ্ঘন শুধু নয় এইচআইভি পজিটিভদের নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের রুলিং আছে তা মানা হয়নি। অন্যদিকে, মানবাধিকারকর্মী রঞ্জিত শূর-ও এই বিষয়ে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী সাংসদ মিমি চক্রবর্তী ও পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন- লকডাউন নিয়মকে তুড়ি মেরে এইচআইভি শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠান, বিতর্কে সাংসদ মিমি ও এসপি