অতঃপর মহর্ষি বৈশম্পায়ন কহিলেন, "কলিকালে একবিংশ শতকে আত্মঘাতী মানবজাতি সম্মিলিতভাবে আত্মাহুতি দিবে"

উহারা সকলেই বিশিষ্ট রূপে প্রতিপন্ন হইবেন। প্রত্যেকের এক বা একাধিক 'বদন বহি' (ফেসবুক ) এক্যাউন্ট থাকিবে। উহাই উহাদের ধ্যান ও জ্ঞান হইবে। দিবস রজনী উহারা তথায় জ্ঞান বিতরণ করিবেন। 
 

Asianet News Bangla | Published : May 23, 2021 2:47 AM IST / Updated: Jun 20 2021, 10:57 AM IST

।। বঙ্কিম বচন  ।।-  নীলকন্ঠ মিত্র -- অতঃপর মহর্ষি বৈশম্পায়ন কহিলেন, "কলিকালে  একবিংশ শতকে আত্মঘাতী মানবজাতি সম্মিলিতভাবে আত্মাহুতি দিবে।" মহারাজ জনমেজয় সাগ্রহে জানিতে চাহিলেন,"মহর্ষি তাহা কেন ? ব্যক্ত করিলে শ্রবণ করিয়া কর্ণ যুগল কৃতার্থ হইব। সম্ভব হইলে আশু প্রতিবিধান জ্ঞাপন করা যাইতে পারে। "

মহর্ষি ঈষৎ সংবৃত্ত হইয়া অভয়মুদ্রায় "তথাস্তু" বলিয়া নিমীলিত চক্ষে কথন শুরু করিলেন," কলিকালে কলা ও প্রযুক্তি বিদ্যায় পূর্ব ও পশ্চিমের সকল দেশ প্রভূত উন্নতি করিবে। যন্ত্রে মনুষ্যের সকল কর্ম সম্পাদন করিবার ক্ষমতা ধরিবে এবং মনুষ্য নিজেই যন্ত্রে পরিণত হইবে। উহাদের সহিত প্রকৃতির কোন প্রত্যক্ষ সংযোগ থাকিবে না। অবসর বলিয়া কোন ধারণা থাকিবে না। ইহারা উদয় অস্তের প্রচলিত ধ্যান ধারণা অবশিষ্ট রাখিবেন না। ইহারা দেশ কালের সীমা অতিক্রম করিয়া মধ্য নিশীথে স্বীয় কক্ষে বসিয়া দূরতর আপিসের গুরুতর ফাইল সম্পাদন করিতে পারিবে। অদৃষ্টপূর্ব তথাকথিত বন্ধু-বান্ধবীর সহিত প্রহরের পর প্রহর অস্থির বাক্যালাপে যাপন করিতে পারিবে কিন্তু আপনার ভ্রাতা বা ভগিনী কিংবা প্রতিবেশীকে আপন করিতে পারিবে না। উহারা সকলেই বিশিষ্ট রূপে প্রতিপন্ন হইবেন। প্রত্যেকের এক বা একাধিক 'বদন বহি' (ফেসবুক ) এক্যাউন্ট থাকিবে। উহাই উহাদের ধ্যান ও জ্ঞান হইবে। দিবস রজনী উহারা তথায় জ্ঞান বিতরণ করিবেন। আপনাপন বিচিত্র প্রতিভার উন্মেষ ঘটাইবেন এবং তাহা লাইক নামক অমায়িক ধারণার বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দর্শিবার নিমিত্তে লালায়িত থাকিবেন। আপনার বদনবহিতে কিংবা 'অথচিত্রকথা' (ইনস্টাগ্রাম) একাউন্টে চিত্রের পর চিত্র ঢালিয়া চিৎপুর বানাইয়া ফেলিবেন এমনকি উহাতে পছন্দ -অপছন্দের লোকেদের ট্যাগাইয়া মানসিক প্রসন্নতা লাভ করিবেন। 'কিচিরমিচির হাতল' (টুইটার) হইতে মহাবাণী নিক্ষেপ করিবেন যাহা বাণবৎ আক্রমন শানাইবে কিংবা প্রশান্তির মহাসমুদ্রে জনতা জনার্দন নামক মহাসমুদ্রে নিক্ষেপিত হইবেন। এই সোশ্যাল মিডিয়া নামক মহাসমুদ্রে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি করিবেন যথায় হ্যাসট্যাগ মহামহা দিকচিহ্ন মুহুর্মুহু ঝঞ্ঝা সৃষ্টি করিবে তথাপি নিটফল শূন্য হইয়া একসময় বিলীন হইয়া যাইবে।" 

জনমেজয় অস্থির হইয়া কহিলেন ,"মহারাজ, ইহার সহিত বিনাশের কি কোন অদূরতম সম্পর্ক রহিয়াছে ? "
চক্ষু নিমীলিত রাখিয়া বৈশম্পায়ন পুনরায় ব্যক্ত করিতে লাগিলেন ,"ধৈর্যং রূহ বৎস, প্রশান্ত চিত্তে বাক্যগুলি শ্রবণ করিলে সমুদয় ক্রশ্নের উত্তর মিলিবে।"

 (ক্ৰমশঃ )

Share this article
click me!