সকালবেলা গোড়ালিতে ব্যথা খুব প্রবল, এতটাই যে মাটিতে পা রাখলে মনে হয় যেন জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। যদিও এই ব্যথা দিনের বেলায়ও হয়, হাঁটার সময়। কিন্তু সকালে এর ব্যথা অসহ্য হয়। এটি হওয়ার কারণ কী এবং কীভাবে আপনি এটি এড়াতে পারেন, তা জেনে নেওয়া যাক-
বছর ২০ বয়সের পর বেশিরভাগ নারীরই গোড়ালি ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। তবে এমন নয় যে এই সমস্যা শুধু মহিলাদেরই, পুরুষরাও বেশি সংখ্যায় গোড়ালির ব্যথায় ভোগেন। সকালবেলা গোড়ালিতে ব্যথা খুব প্রবল, এতটাই যে মাটিতে পা রাখলে মনে হয় যেন জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। যদিও এই ব্যথা দিনের বেলায়ও হয়, হাঁটার সময়। কিন্তু সকালে এর ব্যথা অসহ্য হয়। এটি হওয়ার কারণ কী এবং কীভাবে আপনি এটি এড়াতে পারেন, তা জেনে নেওয়া যাক-
গোড়ালি ব্যথা কেন হয়?
গোড়ালি ব্যথার সমস্যার প্রধান কারণ ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়া। আমরা এখানে প্রধানত সকালে ঘটে যাওয়া ব্যথা এবং তীক্ষ্ণ ব্যথা সম্পর্কে কথা বলছি।
যাদের ইউরিক অ্যাসিড খুব বেশি বেড়ে যায়, তাদের গোড়ালিতে তীব্র ব্যথা ও ব্যথার সমস্যা থাকে, এমনকি দিনের বেলাও কিন্তু এর ভয়াবহ প্রভাব দেখা যায় সকালে, ঘুম থেকে উঠে পা মাটিতে রাখার চেষ্টা করি। .
সাধারণত, যাদের গোড়ালিতে তীক্ষ্ণ ব্যথা এবং ব্যথার সমস্যা থাকে, তাদেরও গোড়ালিতে ব্যথা, স্ট্রেচ বা টর্শন (ক্র্যাম্প) সমস্যা থাকে। যদিও এর কারণ ভিন্ন, কিন্তু কখনও কখনও এটি ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধির কারণেও প্রভাবিত হয়।
ইউরিক এসিড বৃদ্ধির কারণ কি?
প্রতিদিনের রুটিন লাইফে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির প্রধান কারণ খাদ্য ও পানীয়তে স্বাস্থ্যের চেয়ে স্বাদকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। এই জন্য ভুল খাবার খাওয়া, বিপরীত প্রকৃতির খাবার একসঙ্গে খাওয়া, খাওয়া-দাওয়ার সময় সম্পর্কে নিশ্চিত না থাকা।
জেনেটিক্সও ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার কারণ।
অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনও একটি বড় কারণ
হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণেও ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়।
অনেক ওষুধ দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের ফলেও ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যেতে পারে।
আয়ুর্বেদ কি বলে?
খাবারে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির প্রধান কারণ, যাকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা মনে করেন, কুকারে তৈরি মসুর ডাল খাওয়া। এই জিনিসটি অনেককে অবাক করতে পারে, কিন্তু বৈদ্য ডাঃ সুরেন্দ্র সিং রাজপুত, যিনি গত ৪১ বছর ধরে আয়ুর্বেদিক ওষুধের মাধ্যমে রোগীদের চিকিত্সা করছেন, বলেছেন যে আমাদের দেশে রোগ এবং রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হল ভুল জীবনধারা পছন্দ করা। প্রাচীনকালে মানুষ সহজ কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত জীবনযাপন করত। এর কারণগুলো তারা বিস্তারিতভাবে না জানলেও।
যেমন, আজও গ্রামের অনেক বাড়িতে খোলা ও চওড়া মুখের পাত্রে ডাল তৈরি করা হয়। ডাল সিদ্ধ হলে তাতে ফেনা তৈরি হয় এবং এই ফেনা তুলে ফেলে দেওয়া হয়। যে কোনও গ্রামীণ মহিলাকে যদি জিজ্ঞেস করেন যে এই ফুসকুড়ি ছুঁড়ে ফেলার কারণ কী, তিনি সবচেয়ে বেশি বলবেন যে এই ঝর্ণা শরীরের ক্ষতি করে। তারা কি ক্ষতি করে, তারা বিস্তারিত জানে না তবে তারা সেগুলি খাওয়া এড়িয়ে যায়। অন্যদিকে, রান্নাঘরে যেখানে ডাল তৈরির জন্য কুকার ব্যবহার করা হয়, সেখানে এই ফেনাগুলি আলাদা করার কোনও সুবিধা নেই এবং এই ফেনাগুলি শরীরে পৌঁছে দ্রুত ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ায়।
আয়ুর্বেদ অনুযায়ী ইউরিক এসিডের চিকিৎসা কিভাবে করবেন?
ডাঃ রাজপুত বলেন, সবার আগে, আপনার উচিৎ খোলা পাত্রে বাড়িতে মসুর ডাল তৈরি করা শুরু করা উচিত এবং যদি আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ করেন তবে তা সীমিত করুন। এই দুটি ব্যবস্থা করলেই আপনি অনেক উপকার পাবেন।
জীবনধারাকে সংগঠিত করুন, যেমন ঘুম ও জেগে ওঠা এবং খাওয়া-দাওয়ার সময় নির্ধারণ করা।
খাবারে সবুজ শাকসবজি, শুকনো ফল, তাজা ফল, দুগ্ধজাত খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
এসবের পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে আপনার সঠিক ওষুধ ও চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। যা আপনার স্বাস্থ্যের ইতিহাস, বয়স, জীবনধারা ইত্যাদি মাথায় রেখে করা হয়। তাই এ বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন এবং তার সুপারিশকৃত ওষুধ নিয়মিত খান। আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ হবেন।