কোথায় যাবেন ঘুরতে, মহারাষ্ট্র-এর এই জায়গাগুলি নিয়ে নিন তালিকায়

প্রকৃতিপ্রেমী বাঙালি পর্যটক অজানাকে জানতে চায়
মহারাষ্ট্র মানেই ইতিহাস আর প্রকৃতির মেলবন্ধন 
মহারাষ্ট্র চিরকালই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান
 সংস্কৃতি, মানুষ ও সেখানকার বিশেষ খাবারদাবার পরখ করার অর্থই ভ্রমণ

samarpita ghatak | Published : Jan 9, 2020 2:09 PM IST / Updated: Jan 13 2020, 10:36 PM IST

অচেনা,স্বল্পশ্রুত জায়গায় ভ্রমণ করতে যাঁরা চান, তাঁদের নেশাই হল এমন জায়গার সুলুকসন্ধান করা। মন উড়ূউড়ু হলেই এমন জায়গায় পৌঁছে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দেয় ভ্রমণ-নেশাতুর বাঙালি।  প্রকৃতি আর ইতিহাসের সামঞ্জস্য বজায় রেখে যদি ঘুরতে যেতে চান তাহলে ভেবে দেখতেই পারেন মহারাষ্ট্রের দিবেয়াগর, হরিহরেশ্বর, শ্রীবর্ধন,  মুরুদ-জঞ্জিরা ইত্যাদি জায়গাগুলোর কথা। কোঙ্কন উপকূলরেখা বরাবর অনেকগুলো নামি এবং অনামি সমুদ্রতট আছে যা সর্বদাই পর্যটকদের আকর্ষণস্থল। তবে যে জায়গাগুলিতে ভিড় সবচেয়ে কম সেখানেই মন জুড়িয়ে যাবে।  আর কোলাহলের দিনগুলোয় মন বলবে আবার ফিরে যাই সেখানে।

দিবেয়াগর- শান্ত, সবুজ, গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা মনোরম একটি গ্রাম। গ্রামে প্রবেশ করে বোঝার উপায় নেই নাকের ডগায় সমুদ্র এবং বিস্তীর্ণ উন্মুক্ত বালুতট। কেলকর নিবাসে থাকার বন্দোবস্ত আগে থেকেই করা ছিল। এরকম আরো হোম-স্টে আছে এখানে। একেবারেই জায়গার সঙ্গে মানানসই বন্দোবস্ত। কোথাও এতটুকু আতিশয্য নেই। কেলকর দম্পতির অমায়িক ব্যবহার ও বাড়ির উঠোনে সুস্বাদু সারস্বত নিরামিষ মারাঠি খাবার এখানকার বাড়তি আকর্ষণ। আমিষ কোঙ্কনি পদ চেখে দেখার ইচ্ছে থাকলে তাও পূরণ হবে, তবে অন্যত্র কারণ কেলকর নিবাসে আমিষ ভোজন নিষিদ্ধ। তবে হাতে তৈরি আচার থেকে মোদক অবধি সারস্বত যে নিরামিষ খাবার এখানে পরিবেশিত হয় তারপর আর দিবেয়াগরের আমিষ খাবার মনে ধরবেনা বোধহয়।
ব্যাগ-স্যুটকেস রেখেই হাঁটতে হাঁটতে একটু এগোলেই দেখতে পাওয়া যাবে সমুদ্রকে।  এই শান্ত নিরিবিলি সমুদ্রতটে এলে মনে হতেই পারে যে এটি আপনার হোটেল লাগোয়া ব্যক্তিগত বিচ, এতই কম লোকজন, এতই শান্ত পরিবেশ। কোলাহল থেকে কয়েক যোজন দূরে এমন সমুদ্রতটে মন শান্ত হবেই, তেমন কিছুই নেই কিন্তু ‘নেই’ খুঁজতে যারা পছন্দ করেন তাদের জন্য এমন স্থান একেবারে আদর্শ। বিকেলে গ্রামটা ঘুরে ঘুরে দেখার সময়ই পর্যটক আবিষ্কার করবেন গ্রামের প্রাচীন মন্দির, স্নিগ্ধ-শ্যামল প্রকৃতি আর বাগান ঘেরা ছোটো ছোটো বাড়ি। 

হরিহরেশ্বর- একই উপকূল বরাবর এলে মাত্র ৩৭ কিলোমটার দূরেই এই সমুদ্রতট। কিন্তু মজার ব্যাপার হল হরিহরেশ্বরের সমুদ্রতটটি বালির নয়। গোটাটাই পাথরের এবং সমুদ্রের নোনা জল সেই পাথরে আছড়ে পড়ে নানা রকম ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে। সঙ্গে পুরাণ গল্পও মিশেছে। কিন্তু মোদ্দা কথা হল বালি-তট দেখার পরে এই পাথুরে তটের অন্যরকম সৌন্দর্য দেখে পর্যটক অবাক হবেনই।  এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে প্রাচীন ভারতবর্ষের কথা মনে পড়ে যেতেই পারে! ওই প্রাকৃতিক খেয়ালে তৈরি আশ্চর্যজনক ভাস্কর্যগুলো দেখেই হয়তো এই দেশের প্রাচীন রূপ ভেসে ওঠে চোখে। তবে এ তট খুব নির্জন নয়। হরিহরেশ্বরের শিব-মন্দির দর্শনের জন্য পর্যটকদের আগমন এখানে বেশি।

শ্রীবর্ধন- হরিহরেশ্বরের যমজ বোন হল শ্রীবর্ধন সমুদ্রতট, দিবেয়াগর থেকে দূরত্ব মাত্র ১৯ কিলোমিটার। দিবেয়াগরের থেকে এই দুটি জায়গাই অধিক জনপ্রিয়। এখান থেকেই কান্দিভালি বিচ ঘুরে আসা যায়। সুপারির অধিক ফলনের জন্য এ জায়গা মহারাষ্ট্রে বিখ্যাত ।  একসময়ে এই বন্দর-শহরের রাজনৈতিক গুরুত্বও কম ছিল না, মারাঠা পেশোয়াদের জন্মস্থল হল শ্রীবর্ধন।

জঞ্জিরা- মুরুদে অবস্থিত জঞ্জিরা আসলে একটি দুর্গ, জল-দুর্গ বলে থাকেন অনেকে। মাঝসমুদ্রের পাথুরে দ্বীপের সমগ্র অংশটা জুড়েই দুর্গটি নির্মিত, নির্মাণশৈলী বিস্ময়কর। দুর্গের প্রবেশদ্বার অবধি ঢেউ আছড়ে পড়ছে, সিঁড়িতে শ্যাওলা, নৌকার মাঝিরা হাত ধরে দুলন্ত নৌকা থেকে ঝুলন্ত যাত্রীদের প্রবেশদ্বারে পৌঁছতে সাহায্য করছেন, গায়ে শ্যাওলামাখা কোলাব্যাংগুলো জড়সড় হয়ে পর্যবেক্ষণ করবে আপনাকে সিঁড়ির পাশে বসে দ্বাররক্ষীর মতোই। প্রবেশ করাটাই রীতিমত রোমাঞ্চকর (অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসও বলা যেতে পারে) এবং আবারও ওই অতীতের গন্ধ মাখা। এমন আদিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রের মাঝে এই নির্মাণ দেখেই বুকের মধ্যে ইতিহাস, এই প্রাচীন উপমহাদেশ, কত মিথ, লৌকিক কাহিনি ফিসফিস করে ওঠে। ইতিহাস বলে,অনেকবারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জঞ্জিরা দুর্গ কেউ জয় করতে পারেননি। সমুদ্রের বুকে অতীতের ধ্বংসাবশেষ নিয়ে সদর্পে দাঁড়িয়ে আছে জঞ্জিরা। এক অদ্ভুত অনুভূতি তাড়িয়ে বেড়ায় এখানে।দুর্গের মধ্যেই গাইডের দেখা মিলবে কিন্তু আগে থেকে ইতিহাসটা একটু ঝালিয়ে গেলে ফেলে আসা সময় ফ্ল্যাশব্যক হয়ে দেখা দেবেই। সপ্তদশ শতকের শেষে আহমেদনগরের আবিসিনিয় মন্ত্রী মালিক অম্বর এই দুর্গ তৈরি করেছিলেন যার ভিতরে রাজ দরবার, মসজিদ, পারিষদদের বাড়ি, যুদ্ধ-কামান, মিষ্টি জলের পুকুর সবই ছিল একসময়ে, আজও আছে, খন্ডহার হয়ে। সমুদ্রের ওপর অতীতের যাবতীয় রহস্যময়তা নিয়ে, কালের যাত্রাকে অবজ্ঞা করে জঞ্জিরা দুর্গ এক রোমাঞ্চকর অধ্যায়।

যাওয়ার আদর্শ সময়- অক্টোবর থেকে মার্চ মাস।

কিভাবে যাবেন-মুম্বই থেকে দিবেয়াগর ট্রেনে আসতে হলে নিকটবর্তী রেল স্টেশন মানগাও। এছাড়া মুম্বই, পুনে থেকে বাসও পাওয়া যাবে।জঞ্জিরা যেতে হলে-দিবেয়াগর থেকে দিঘি বন্দর গাড়িতে ৩০ মিনিট, ওখান থেকে নৌকায় মুরুদ হয়ে জঞ্জিরা পৌঁছতে হবে।

কোথায় থাকবেন- অনেক হোম-স্টে আছে, খোঁজ নিয়ে অগ্রিম বুকিং করে নেওয়া প্রয়োজন।

Share this article
click me!