গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করবেন কী করে? জেনে নিন বিশেষ খাবারের তালিকা
গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, বিশেষ করে যাদের থাইরয়েড আছে। কারণ থাইরয়েড গর্ভাবস্থায় অনেক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। থাইরয়েডকে হালকাভাবে নিলে গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে, এমনকি গর্ভপাতও হতে পারে। তাই থাইরয়েড আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলাদের কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত? কোন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি অনুভব করা স্বাভাবিক। এই ক্লান্তি কাটাতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া জরুরি। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় থাইরয়েডের ক্ষতি কমাতে আয়োডিন কম থাকে এমন খাবার খাওয়া উচিত। থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদনে আয়োডিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আয়োডিন কম থাকে এমন খাবার আপনার অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। ডাক্তাররাও বেশি ঝাল, লবণ খাওয়া নিষেধ করেন। থাইরয়েড আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলাদের নিয়মিত সবুজ শাকসবজি খাওয়া উচিত, বিশেষ করে জলীয় অংশ বেশি থাকে এমন শাকসবজি।
গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করা স্বাভাবিক। তবে থাইরয়েড গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হলে হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা বেড়ে যায়। এর ফলে ক্লান্তি আরও বেড়ে যায় এবং মানসিক অবস্থাও দুর্বল হয়ে পড়ে।
গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধি স্বাভাবিক। তবে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ অতিরিক্ত ওজন আপনার বিপাক ক্রিয়াকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি আপনার খাদ্যাভ্যাসকেও প্রভাবিত করে।
গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। থাইরয়েড হরমোন বেশি থাকলেও পেটের সমস্যা হতে পারে।
থাইরয়েডের কারণে অনেক মহিলার গর্ভাবস্থায় চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। থাইরয়েড গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হলে চুলের বৃদ্ধিও ব্যাহত হয়। এই সময়ে চুল পড়া এবং শুষ্ক চুলের সমস্যা বেড়ে যায়। এছাড়াও হতাশা এবং মেজাজ পরিবর্তনের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার: থাইরয়েড রোগীদের জন্য আয়োডিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, মাংস, সামুদ্রিক মাছ, আয়োডিনযুক্ত লবণে প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন পাওয়া যায়। থাইরয়েড হরমোন তৈরির জন্য আয়োডিন একটি অপরিহার্য খনিজ। শরীরে আয়োডিনের অভাব হলে হাইপোথাইরয়েডিজমের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শিশুরা মায়ের দুধ থেকে আয়োডিন পায়, তাই মায়েদের আয়োডিনের অভাব দূর করা উচিত।
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: থাইরয়েড আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ম্যাগনেসিয়ামও গুরুত্বপূর্ণ। গাজর, পালং শাক, মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। ম্যাগনেসিয়াম থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
ফল: গর্ভবতী মহিলাদের নিয়মিত তাজা ফল এবং শুকনো ফল খাওয়া উচিত। ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় বেরি, আপেল, কলা, আঙ্গুর, লেবু জাতীয় ফল, আনারস ইত্যাদি নিয়মিত খাওয়া উচিত।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: হাইপোথাইরয়েডিজমের ফলে পেশীর ক্ষতি হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় ডিম, মাংস, মাছ, মুরগি ইত্যাদি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। এগুলি পেশীকে শক্তিশালী রাখে এবং শরীরের শক্তির স্তর বৃদ্ধি করে। এই খাবারগুলিতে আয়োডিনও থাকে, তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
শস্য: হাইপোথাইরয়েডিজমের একটি সাধারণ লক্ষণ হল কোষ্ঠকাঠিন্য। গর্ভাবস্থায় শস্য জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা অন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে। ওটস, কুইনোয়া, ব্রাউন রাইস, শাকসবজি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
দুগ্ধজাত খাবার: দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। নারকেলের দুধ, পনির, কাজুবাদাম, নারকেলের দই, বাদামের দুধ, মিষ্টি দই ইত্যাদি নিয়মিত খাওয়া উচিত। এছাড়াও টমেটো, ক্যাপসিকাম, মেথি ইত্যাদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারও খাওয়া উচিত।