অধ্যাপিকা ঝুমুর দত্ত গুপ্ত- এ এক অদ্ভুত সময়। করোনা আতঙ্কে জড়সড় আমরা। ঘরবন্দি। কী হবে? কতদিনের জন্য এই বন্দিদশায় থাকতে হবে তা ওপরওয়ালাই জানেন। কোয়ারেনটাইনে থাকলে কী হবে, কাজ তো আর থেমে থাকছে না। এই সময়ে ব্যস্ততা যেন বেড়ে গেছে চতুর্গুণ। আর তার প্রধান কারণ বোধহয় বাড়িতে আসছেন না আমাদের সুচিত্রাদি, শ্রীমতিমাসি বা নমিতারা। মহামারি আতঙ্ক এঁদেরেও ঘরবন্দি করে ফেলেছে। তাই ঘর ঝাড়াপোছাা থেকে তিনবেলার রান্নাবান্না করতে হচ্ছে নিজের হাতেই। হেল্পিং-হ্যান্ড ছাড়া আমাদের অনেকেরই এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।
আরও পড়ুন- লকডাউনে চার দেওয়ালের মধ্যে কীভাবে সামলাবেন বাচ্চাদের, রইল টিপস
এর ওপর আবার ওয়ার্ক ফ্রম হোম। কনসেপ্টটা বেশ ভালো। আজকের দুনিয়ায় এর সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। তবে আমার মত যারা সনাতন পদ্ধতিতে কর্মস্থলে গিয়ে কাজ করতে অভ্যস্থ তাদের কাছে তো একটি ইনিসিয়াল জার্ক বটেই। কীরকম? মুঠোফোন ভরে গেছে বিভিন্ন নোটিফিকেশনে। নোটিফিকেশনগুলো বেশিরভাগই অনলাইন ক্লাসের। আমি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। করোনা আতঙ্কে ছাত্র-ছাত্রীরা ঘরবন্দি। কিন্তু সিলেবাস তো শেষ করাতে হবে!! তাই ভারচুয়াল ক্লাস চলছে বাড়ি থেকেই।
আরও পড়ুন- গৃহবন্দি দেশবাসী, কী ভাবে সময় কাটাবেন বাড়িতে, থাকল কিছু টিপস
বিশেষ অ্যাপের সাহায্যে তাদের সঙ্গে সময় বেধে চলছে পঠন-পাঠন। পিছিয়ে নেই সদ্য সেভেনে ওঠা আমার মেয়েও। অনলাইনে পড়াশুনা চলছে তারও। ভারচুয়াল ক্লাস ছাড়াও স্কুলের ওয়েবসাইট থেকে পাঠানো স্টাডি মেটিরিয়ালের ধাক্কায় তার ছুটি ছুটি মেজাজে কিছুটা ভাটা এসেছে। তাই ওয়ার্ক ফ্রম হোম আর স্টাডি ফ্রম হোমের চক্করে আমরা এই কোয়ারেনটাইনের দিনগুলিতেও মা-বেটি ছুটছি ঘড়ি ধরে। রীতিমত রুটিন বেঁধে। আমরা ভারতীয়রা স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে বরাবরই ঢিলেঢালা। কোভিড-১৯ এর জুজু আমাদের সেই বদ-অভ্যেসগুলোকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। তেলেভাজা খেয়ে হাত না ধোওয়া আমরা এখন নিয়ম করে হাত ধুচ্ছি। সাবান, স্যানিটাইজার এখন বঙ্গ জীবনের অন্যতম অঙ্গ।
আমার বাড়িতে আবার আছেন দুই প্রবীণ মানুষ। ঘরবন্দি অবস্থায় তাঁরাও হাসফাঁস করছেন। ইভিনিং ওয়াক, বন্ধুদের সঙ্গে রোজকার দেখা-আড্ডা সব বন্ধ। উদগ্রীব চোখ এখন তাই শুধুই টিভির খবরে । সব জায়গা থেকে আসছে সতর্কীকরণ। ইতিমধ্যেই ঘরে আগাম স্টক করে রাখা হয়েছে রোজকার আবশ্যক ওষুধ-ইনহেলার। প্রায় প্রতিদিনই দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসছে করোনায় মৃত্যুর খবর। ঘিরে ধরছে কি ভয়-আতঙ্ক! মনে কি জড়ো হচ্ছে অবসাদ? এই নেতিবাচক ভাবনাগুলোকেই একধাক্কায় সরিয়ে রাখতে হবে। সতর্ক,সচেতন ও সজীব মনে প্রস্তুত থাকতে হবে আগামীর জন্য। পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মত লকডাউনের দিনগুলো হোক মি-টাইম। ঘরে বসেই হোক নিজের সঙ্গে দিনযাপন।
দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে হার্ডকোর জার্নালিস্ট এরপর অধ্যাপিকা হিসেবে কাজ শুরু। কাজের পাশাপাশি একজন দায়িত্বশীল মা, পুত্রবধূ এবং স্ত্রী।