নিজস্ব প্রতিনিধি: শীত পড়েছে খুব? রোদ্দুরের দেখা নেই? মন খারাপ করছে? হতে পারে আপনার সিজিওনাল অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডার হয়েছে। যাকে উইন্টার ব্লুজও বলে থাকেন মনোবিদরা। সহজ বাংলায় যাকে বলা যেতে পারে মরসুমি অবসাদ বা সিডিওনাল ডিপ্রেশন।
প্রথমেই বলে নেওয়া যেতে পারে, একটু-আধতু মন খারাপ আর ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন কিন্তু এক জিনিস নয়। এই নিয়ে বিশদে না-গেলেও এটুকু বলা যেতে পারে, নির্দিষ্ট সময় ধরে বেশকিছুদিনের মনখারাপ আর তার পিছুপিছু কিছু লক্ষণ ধাওয়া করলে তবেই তাকে মনোবিদরা ডিপ্রেশন বলবেন। এই লক্ষণগুলো আমাদের অনেকেরই খুব চেনা। যেমন আচমকা খিদে বা ঘুম খুব কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া। ভাললাগার জিনিসগুলো আর ভাল না-লাগা। খুব খিটখিটে স্বভাবের হয়ে যাওয়া বা রাগ খুব বেড়ে যাওয়া। উল্টোপাল্টা স্বপ্ন দেখা। কথায় কথায় কান্না পাওয়া। এইসব আর কী।
এখন কথা হল, যাদের এই ধরনের ডিপ্রেশনের ইতিহাস আছে, তাদেরই অনেকসময়ে দেখা দিতে পারে এই উইন্টার ব্লুজ্। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে কেন একে সিজিওনাল ডিপ্রেশন বলা হয়। উইন্টারে বা শীতকালে এই ডিপ্রেশন দেখা দেয় বলেই এর এমন রোমান্টিক নাম। আসলে মনোবিদরা বলেন, শীতকালে তো দিন ছোট হয় রাতের চেয়ে। সেইসঙ্গে অনেকসময়ে ঠিকমতো রোদ ওঠে না। এই রোদ্দুর বা সূর্যালোক কিন্তু ন্যাচারাল অ্যান্টি ডিপ্রেশান্ট। তাই এর অভাবে আচমকা ডিপ্রেশন বেড়ে যেতে পারে। মনোবিদ তটিনী দত্তের কথায়, "এই যে ক-টা দিন আবহাওয়া খুব খারাপ ছিল, তাতে অনেকেই এই সমস্যর মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। আমারই বেশ কয়েকজন পেশেন্ট এই সিজিওনাল ডিপ্রেশনে ভুগছেন। একটু সময় লাগবে। আবহাওয়া একটু রোদঝলমলে হলেও আবার এই ডিপ্রেশন কেটে যাবে।"
তবে কাউর যদি আচমকা শীতকালে ডিপ্রেশন দেখা যায়, তাহলেই তার এই রোগ হয়েছে এমনটা ধরে নেওয়া ঠিক নয়। এর আগে যদি পেশেন্টের ডিপ্রেশনের একাধিক এপিসোড না-থাকে, তাহলে কিন্তু তাকে উইন্টার ব্লুজ্ বলে মনে করা হয় না। সহজ কথায়, আপনার সিডিওনাল ডিপ্রেশন হয়েছে নাকি অন্যকিছু, তা দেখার ভার মনোবিদের ওপরেই ছেড়ে দিন। আপনি নিজে থেকে ডাক্তারি করতে যাবেন না। আর হ্যাঁ, শীতকালের এই রোদহীন-আলোহীন মরা বিকেলে যদি কখনও ঝরাপাতার অবসাদ দেখা যায়, তাহলে তা নিয়ে খুব বেশি ভাবতে যাবেন না। কারণ, ঠিকমতো কাউন্সেলিংয়ে এই অবসাদ থেকে আপনি গা-ঝাড়া দিয়ে উঠতে পারবেন সহজেই। আর যদি তা না হয়, তাহলে যে ওষুধ আপনি খাচ্ছেন, তার পরিমাণ হয়তো একটু কমাতে-বাড়াতে হতে পারে। তবে আবারও বলছি দুটো কথা। এই মরসুমি অবসাদ কিন্তু খুবই সাধারণ। একে যেমন খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে মাথায় তুলে রাখার কোনও দরকার নেই, আবার তেমনই তাকে একেবারে হেলাফেলাও করাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। জেনে রাখবেন, দিনকাল একটু বদলালে, শীতের রোদ্দুর একটু পিঠে পড়লেই অবস্থা অনেকটা বদলে যায়। প্রয়োজনে একবার মনোবিদের শরণাপন্ন হলেও ভাল বইকি মন্দ হয় না। কী বলেন?