বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু এখন ৭১.৪ বছর। যদিও এটা দেশকালে ভেদে ও নারীপুরুষ ভেদে পাল্টায়। অত্য়াধুনিক প্রযুক্তি ও বিভিন্ন জীবনদায়ী ওষুধের সৌজন্য়েই বেড়েছে এই আয়ু।
মনে করা হয়, আমাদের আয়ু মূলত নির্ভর করে বংশগতি বা জিনের ওপর। কিন্তু স্বাস্থ্য়কর জীবনযাত্রা এই আয়ুষ্কালকে অনেকটাই বাড়াতে পারে। সুস্থভাবে দীর্ঘদিন বাঁচার জন্য় আপনাকে বেশ কিছু জিনিস বন্ধ করতে হবে। যার প্রথমেই আসে অস্বাস্থ্য়কর খাদ্য়াভ্য়াস। সুস্থ জীবনযাত্রার জন্য় দরকার হেলদি ডায়েট। ভিটামিন, মিনারেলস, কার্বাহাইড্রেট, প্রোটিন, হেলদি ফ্য়াট সঠিক পরিমাণে খাবারে থাকা চাই। স্য়াচুরেটেড ট্রান্সফ্য়াট, কোলেস্টেরল, সোডিয়াম, অতিরিক্তি চিনি, প্রিজারভেটিভ, নানারকম প্রক্রিয়াজাত জাঙ্কফুড ডেকে আনে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ডায়াবেটিস, হাইব্লাডপ্রেশার, ওবেসিটি, এমনকি ক্য়ানসার। কাজেই এই ধরনের খাবার খাদ্য়তালিকায় বাদ না-দিলে সুস্থ অবস্থায় দীর্ঘায়ু হওয়া সম্ভব নয়।
অলস জীবনযাপন বা সেডেনটারি লাইফস্টাইলে বদল আনতে হবে। কারণ, এই অলস জীবনযাপন ডেকে আনে, করোনারি হার্টডিজিজ, অ্য়াংজাইটি, ডিপ্রেশন, ডায়াবেটিস, অস্টিওপোরোসিস, কিডনির রোগ। বিশ্বসাস্থ্য় সংস্থা জানাচ্ছে, এই অলস জীবনযাপন হল ব্রেস্ট ও কোলন ক্য়ানসের প্রধান কারণ। নির্দিষ্ট করে বলা যেতে পারে, ২১ থেকে ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এই কোলন ও ব্রেস্ট ক্য়ানসারের কারণ হল এই অলস জীবনযাত্রা।
ঠিকমতো ঘুম না-হওয়া। প্রয়োজনের তুলনায় কম ঘুম বলে মনমেজাজের ওঠাপড়া বা মুডসুইং দেখা দিতে পারে। এছাড়াও স্মৃতিশক্তির সমস্য়া ও ভাবনাচিন্তার সমস্য়া দেখা দিতে পারে। কম ঘুম হওয়া থেকে ওবেসিটি, ডায়াবেটিস ও কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের সম্ভাবনা বাড়ে।
অত্য়ধিক মানসিক চাপ শরীরের পক্ষে অপকারী। এতে করে শরীরে কর্টিসল ও অ্য়াড্রিনালিন হর্মোনের ক্ষরণ বাড়ে। যার ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
ধূমপান হল অন্য়তম একটি বিষয়। ম্য়াকুলার ডিজেনারেশন, টাইপ-টু ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড ডায়াবেটিস, বিশেষ করে লাং ক্য়ানসার এই ধূমপানের জন্য় দায়ী। অতএব এটি পরিহার করা উচিত।
অত্য়ধিক মদ্য়পানও বন্ধ করা উচিত। সেইসঙ্গে নেশার যেকোনও জিনিসই পরিহার করা উচিত।
মুখের স্বাস্থ্য়কে অবহেলা করা। সুস্থ মাড়ি ও সুস্থ দাঁত আমাদের রক্ষা করে হার্ট অ্য়াটাক, স্ট্রোক, ডায়াবেটিসের মতো সমস্য়া থেকে।
সূর্যালোক আমাদের শরীরে ভিটামিন-ডি তৈরি করতে সাহায্য় করে। কিন্তু অতিরিক্তি চড়া রোদ থেকে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে অতিবেগুনী রশ্মি। যা স্কিন ক্য়ানসারের জন্য় দায়ী।
নেতিবাচক চিন্তা বা নেগেটিভ থট যতটা সম্ভব পরিহার করা উচিত। অনেকে মনে করেন, এই নেতিবাচক চিন্তা শরীরে কোনও প্রভাব ফেলে না, কিন্তু বাস্তবে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য়ের পক্ষে ক্ষতিকর।
নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করা জরুরি। কারণ, প্রাথমিক অবস্থায় অনেক বড়সড় রোগ ধরা পড়ে যায় এর ফলে।
মিষ্টি খেতে কার না ভাল লাগে। কিন্তু সুস্থ অবস্থায় দীর্ঘায়ু হতে গেলে এই মিষ্টি বা চিনিকে বাদ দিতেই হবে। জেনে রাখা দরকার, এই মিষ্টি, কোল্ডড্রিঙ্কসজাতীয় খাবারে পুষ্টিগুণ সেভাবে কিছুই নেই। যদি চান, চিনির পরিবর্তে মধু বা মিষ্টি ফল খেতে পারেন।
পিঠ সোজা করে কাজ করা বা হাঁটা উচিত। মনে রাখতে হবে, শোওয়া-বসার একটা নির্দিষ্ট ভঙ্গি আছে। সেই ভঙ্গি মেনে চলা উচিত।
মস্তিষ্ককে টেকেন ফর গ্রান্টেড ধরে ফেললেই বিপদ। জেনে রাখা ভাল, আমাদের মস্তিষ্কও কিন্তু বিরাম চায়। তাই সবসময়ে কাজ বা ভাবনার চাপ না-দিয়ে তাকে একটু-আধতু আরামে রাখার দরকার।
ওয়ার্ক ব্য়ালেন্স খুব জরুরি। কাজের জায়গায় যতদূর সম্ভব মজা করে আনন্দের সঙ্গে কাজ করতে হবে। ওয়ার্ক অ্য়ালকোহলিক হওয়া কিন্তু কোনও কাজের কথা নয়।
জীবনে এক-দুজন হলেও ভাল বন্ধুর দরকার।
কেউ যাতে আপনাকে অবহেলা বা অনাদর করতে না-পারে, তেমন ব্য়ক্তিত্ব আপনাকেই তৈরি করতে হবে। নইলে আপনি বারবার আঘাত পাবেন।
গুচ্ছের কেনাকাটার মধ্য়ে দিয়ে আনন্দ খুঁজে পেতে যাবেন না।
অত্য়ধিক দুশ্চিন্তা করা বন্ধ করুন। নিজে না-পারলে মনোবিদের সাহায্য় নিন।
প্রতিবেশী যদি ঠিকঠাক না-হয়, তাহলে তার থেকে যতটা নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করুন।
যখন কোনও কাজের জন্য় অপরকে দোষারোপ করেন, তখন নিজের কাছেই নিজে ছোট হয়ে যান। যার প্রভাব পড়ে মনে। তাই এই অভ্য়েস ত্য়াগ করুন।
মোবাইল ফোন বেশি ব্য়বহার করা বন্ধ করুন। ভার্চুয়ার দুনিয়া থেকে যতটা সম্ভব, নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বাস্তব জীবনে ফিরে আসুন।
কাউর কাছে কোনও ঋণ রাখবেন না। রাখলে নিজেকেই ছোট বলে মনে হবে।
জিমে যাওয়া মানেই খারাপ নয়। জিমের অনেক ভাল দিকও আছে।
খাবারের বদলে অন্য়কিছুর সাপ্লিমেন্ট নেবেন না। প্রোটিন হোক কি অন্য়কিছু, যা দরকার তা খাবারের থেকে সংগ্রহ করুন।
কাজের জায়গায় অসুখী থাকা কাজের কথা নয়। তাই যতই প্রতিকূল হোক না কেন কাজের পরিবেশ, তার থেকে আনন্দ খুঁজে নিন।