শুরুতে পুষ্পা চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল মহেশ বাবুর। আর আইপিএস ভবর সিং চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল যীশু সেনগুপ্তর। সিনেমায় আল্লু অর্জুন ওরফে পুষ্পার সাথে চন্দন দস্যু বীরাপ্পানের বেশ সাযুজ্য লক্ষ্য করা যায়।
ছবি: পুষ্পা:দ্য রাইজ
পরিচালনা: সুকুমার
প্রযোজক: ওয়াই নবীন এবং ওয়াই রবিশঙ্কর
অভিনেতা: অল্লু অর্জুন, রশমিকা মন্দানা, ফাহাদ ফাসিল। সিনেমার পার্শ্ব চরিত্রে রয়েছেন অজয়, রাও রমেশ, ধনঞ্জয়, অজয়, কল্পলতা।
চিত্রনাট্য ও ডায়লগ: সুকুমার
চিত্রগ্রাহক: মিরোস্লা কুবা ব্রজেক
প্রোডাকশন কোম্পানি: মুত্তামশেট্টি মিডিয়া এবং মৈত্রী মুভি মেকার্সের
রেটিং: ৪/৫
গল্প: পুষ্পা- দ্যা রাইস, গল্পের মূল বিষয় লাল চন্দন কাঠ পাচার এবং এই পাচারের সাথে যুক্ত চোরাকারবারিদের সিণ্ডিকেটের গল্প। পুষ্পারাজ এক সাধারণ শ্রমিক। যে পরে জড়িয়ে পড়ে চন্দন কাঠ পাচারে। সে বুদ্ধি করে বিভিন্ন ভাবে কাঠ পাচার শুরু করে। পুষ্পা ধীরেধীরে সিণ্ডিকেটের মধ্যে নিজের প্রভাব বাড়াতে শুরু করে এবং এই ব্যবসার মাথা মঙ্গলম শ্রীনুকে চ্যালেঞ্জ করে বসে। মূল গল্পের সাথে একটি সাইড স্টোরি রয়েছে যেখানে পুষ্পা তার জন্ম পরিচয় নিয়ে সন্দিহান। যে কারণে প্রেমিকার সাথে তার বিয়ে ভেঙে যায়। কিন্তু ভিলেনকে জখম করে সেই প্রেমিকাকেই সে উদ্ধার করে। গল্পে দুজন পুলিশ অফিসারের প্রসঙ্গ এসেছে। প্রথম জন ডিএসপি গোপিন্দাপ্পা। যে পুষ্পার উত্থানের প্রথমদিকে বাধাদানকারী অফিসার আর দ্বিতীয় আইপিএস অফিসার ভবর সিং। যে পুষ্পাকে থানায় অপমান করলে পুষ্পা তাকে উচিত শিক্ষা দেয়। পুষ্পার বিয়েতে সিনেমার প্রথম পর্বের ইতি দেখিয়েছেন পরিচালক। সিনেমার সব ভিলেনই জীবিত। পুষ্পার সাথে ছত্তিশ কা আঁকড়ার পুলিশ অফিসার ভবর সিং শেখাওয়াতও তৈরি পুষ্পার বিরুদ্ধে বদলা নেওয়ার জন্য। এই সব হাজারো চমক অপেক্ষা করছে পুষ্পার পরবর্তী পর্বে। অনেকটা কেজিএফ চ্যপ্টার ওয়ানের মত পরিচালক এখানে শুধু গল্পের শুরু দেখিয়েছেন যা একাধিক পর্বে রোমাঞ্চ নিয়ে শেষ হবে।
অভিনয়: সিনেমায় আল্লু এবং রেশমিকা মন্দানার অভিনয় দর্শক বেশ উপভোগ করেছে। সিনেমার নাচ-গান, অভিনয়, গল্পের জমাটি বুনন প্রশংসার দাবি রাখে। আইটেম গানে দক্ষিণী অভিনেত্রী সামান্থাকে বেশ মানিয়েছে। অন্যান্য দক্ষিণী ছবির প্লটের মত এই ছবির প্লটও একেবারে অভিনব। কেজিএফে যেমন স্বর্ণখনি অঞ্চলের কাহিনি প্রাধান্য পেয়েছিল পুষ্পায় তেমনি প্রাধান্য পেয়েছে লাল চন্দন কাঠ পাচারের কাহিনি। পরিচালক আল্লু অর্জুনের লুক ও মেকাপের দিকে বিশেষ দৃষ্টি যেমন দিয়েছেন তেমনি ভিলেন চরিত্রগুলির মেকাপও কাবিলে তারিফ। ফাহাদ ফাসিল অভিনয় করেছেন আইপিএস ভবর সিং চরিত্রে এবং মঙ্গলম শ্রীনুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুনীল ভার্মা এই দুটি চরিত্রের মেকাপ একেবারে ভিন্নরূপে তাদেরকে দর্শকের সামনে পেশ করেছে। এছাড়া ধনঞ্জয় হয়েছেন জলি রেড্ডি, অজয় ঘোষ হয়েছেন কোনডা রেড্ডি, সাতরু হয়েছেন ডিএসপি গোবিন্দাপ্পা এবং কল্পলতা হয়েছেন পুষ্পা রাজের মা।
চিত্রনাট্য ও ডায়লগ: "পুষ্পাকো কিসিনে ফ্লাওয়ার সমঝ লিয়া থা, উসকো সমঝায়া কে পুষ্পা ফ্লাওয়ার নেহি ফায়ার হে" পুষ্পা সিনেমার এই ডায়লগ এখন সবার মুখে মুখে ফিরছে। সুকুমারের পুষ্পা রাজ চরিত্রে ধরা পড়েছে চন্দন দস্যু বীরাপ্পানের ছায়া। চিত্রনাট্যকার এই সিনেমার স্ক্রিপ্ট নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চালিয়েছেন তা বেশ স্পষ্ট। আমাদের দেশে দু’ধরনের চন্দনকাঠ পাওয়া যায়। সাদা এবং লাল। সাদা চন্দনে সুন্দর গন্ধ থাকলেও লাল বা রক্ত চন্দনে কোনও গন্ধ নেই। কিন্তু এই কাঠের বিশেষ গুণের জন্যই এই চন্দনের চাহিদা বিশ্ব জুড়ে।আর এই বিপুল চাহিদার কারণেই এই কাঠ পাচার হয় সারা বিশ্বে। রক্তচন্দনকে তাই কেউ কেউ ‘লাল সোনা’ও বলে। এই গাছ অত্যন্ত বিরল এবং সোনার মতোই মূল্যবান। ‘পুষ্পা’ ছবিতে যে শেষাচলম জঙ্গলের কথা বলা হয়েছে রক্তচন্দন ওই শেষাচলম পাহাড়ের ঘন জঙ্গলেই পাওয়া যায়। তামিলনাড়ু লাগোয়া অন্ধ্রপ্রদেশের চার জেলা— নেল্লোর, কুর্নুল, চিতোর এবং কাডাপ্পা জেলাতে এই গাছ মেলে। পূর্বঘাট পর্বতের আবহাওয়ায় এই গাছ খুব ভাল হয়। চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক সুকুমার দক্ষিণের বিভিন্ন জঙ্গল ঘুরে লোকেশন নির্বাচন করেছেন। সুকুমারের বাস্তব প্রেক্ষাপটের এই গল্প এবং তার সঙ্গে একাধিক মানানসই ডায়ালগ সিনেমাকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে গেছে।
সিনেমাটোগ্রাফি: অন্ধ্রপ্রদেশের একাধিক পাহাড়ি অঞ্চলে ছবির শুটিং হয়েছে। শেষাচলম পাহাড়ের ঘন জঙ্গলে একাধিক দৃশ্য শুট করা হয়েছে। সিনেমার গানের দৃশ্য ও লোকেশন বেশ মনকাড়া। পুরনো সময়ের সিকুয়েন্স ক্রিয়েট করার জন্য আটের দশকের লরি ও মারুতি ভ্যানের ব্যবহার দেখানো হয়েছে। পুষ্পা পুলিশের হাত থেকে ট্রাক চালিয়ে তা একটি কুয়োর মধ্যে ফেলে দেয় সেই দৃশ্যটি কার্যত বেশ রোমাঞ্চের সৃষ্টি করে। এছাড়া সিনেমার শেষের দিকে মঙ্গলম শ্রীনুর গুণ্ডাবাহিনীর সাথে যখন পুষ্পা লড়াই করছে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় সেই অ্যাকশন দৃশ্যটি কাবিলে তারিফ। এছাড়া নদীতে মোটরবাইক নিয়ে দৃশ্যটিও বেশ আধুনিক পদ্ধতিতে শুট করা হয়েছে।
পরিচালনা: পুষ্পা -দ্যা রাইস সিনেমার শুরুতে পুষ্পা চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল মহেশ বাবুর। পরিচালক সুকুমারের সাথে মহেশ বাবুর কিছু মতভেদের কারণে মহেশ পুষ্পা সিনেমা থেকে সরে যান। পরে সুকুমার স্ক্রিপ্টে পরিবর্তন করেন ও আল্লু অর্জুনের সাথে প্রকল্পটি এগিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন। ২০২০ সালের ৪ এপ্রিল পুষ্পা- দ্যা রাইস সিনেমার নাম ঘোষিত হয় এবং পুষ্পা রাজ হিসাবে অল্লু অর্জুনের চেহারা ফার্স্ট লুক পোস্টারে প্রকাশিত হয়। সিনেমাটি ১৩ অগাস্ট ২০২১ এ রিলিজ করার কথা থাকলেও কোভিড পরিস্থিতির কারণে পিছিয়ে যায় এবং ১৭ই ডিসেম্বর, ২০২১রিলিজ করে। বাহুবলী, কেজিএফের পরে বক্স অফিসে বিগ হিট দক্ষিণী ছবি, "পুষ্পা-দ্য রাইস"। স্রেফ দক্ষিণ ভারতেই নয়, ছবিটির হিন্দি ডাবিং বলিউডেও সাড়া ফেলে দিয়েছে। ১৭ই ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ছবিটি প্রথম ৫ দিনেই ১০০ কোটির ব্যবসা করে আর এখনও অবধি পুষ্পা ৩০০ কোটির অধিক ব্যবসা করে এগিয়ে চলেছে দ্রুত গতিতে। তেলেগু ছবির ইতিহাসে এখনও অবধি এত অল্প সময়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করা ছবি এটি। এই সিনেমার সাফল্যের পরই আল্লু অর্জুন ও পূজা হেগড়ে অভিনীত ‘আলা বৈকুণ্ঠপুরমুলু’ ছবিটির হিন্দি সংষ্করণ রিলিজ হতে চলেছে ২৬ জানুয়ারি। বড়পর্দা ছাড়াও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও দর্শকরা পুষ্পা দেখতে পাচ্ছেন। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দর্শক তেলুগু, তামিল, কন্নড় ও হিন্দি ভার্সনে পুষ্পা দেখতে পাচ্ছেন। এই সিনেমায় হিন্দি ভার্সেনে আল্লু অর্জুনের জন্য কণ্ঠস্বর দিয়েছেন শ্রেয়স তালপাড়ে। পুষ্পা সিনেমায় ফাহাদ ফাসিল ওরফে আইপিএস ভবর সিং চরিত্রে প্রথমে অভিনয় করার কথা ছিল যীশু সেনগুপ্তের।
সমালোচনা: পরিচালক সুকুমারের পুষ্পা -দ্যা রাইসকে এককথায় বীরাপ্পানের বায়োপিক বলা চলে। সিনেমা রিলিজের আগে এর প্লট নিয়ে একটি বিতর্ক তৈরি হয়। জনপ্রিয় দক্ষিণী সাহিত্যিক ভেম্পল্লি গঙ্গাধর অভিযোগ ওঠান যে তাঁর লেখা ‘তামিল কুলি’র সঙ্গে হুবহু মিলে রয়েছে আল্লু অর্জুন অভিনীত ‘পুষ্পা’ সিনেমার প্লটের।লেখক অবশ্য এ নিয়ে আইনি পথে হাঁটেন নি এবং পরিচালকের সাথে বসে বিষয়টি মিটিয়ে নেন, এমনটাই খবর। সিনেমায় জঙ্গলের কোনো গাছের কোনোরূপ ক্ষতি করা হয় নি। লাল চন্দন কাঠগুলি আসলে থার্মোকল দিয়ে বানানো হয়েছিল যার জেরে একটি দৃশ্যে কাঠগুলি ডুবে যাওয়ার জায়গায় ভেসে থাকতে দেখা গেছে।এছাড়া ট্রাকের কুয়োতে পড়ে যাওয়ার দৃশ্য এবং পরে পুষ্পার তা উদ্ধার করার দৃশ্যটি সামান্য হলেও বেমানান। পুষ্পার জয়যাত্রা অব্যাহত। সিনেমার শেষে রয়েছে এই জনপ্রিয় ডায়লগ, "পুষ্পা ঝুকেগা নেহি রুকেগা নেহি। পুষ্পা ইধার রাজ করনেকো আয়া। "
লেখক: অনিরুদ্ধ সরকার।
আরও পড়ুন-কার সঙ্গে মলদ্বীপে উড়ে গেলেন ক্যাটরিনা,প্রিন্টেড বিকিনিতে ঘুম কাড়লেন ভিকি ঘরনি
আরও পড়ুন-Priyanka Chopra: নিক-প্রিয়ঙ্কার মেয়ের ছবি কি ফাঁস হল ইনস্টাগ্রামে, জোর চর্চা নেটদুনিয়ায়