শুক্রবার পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজফ্ফরাবাদের খুরশিদ ফুটবল স্টেডিয়ামে সভা করছেন ইমরান খান। এর আগে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের দিন পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পা রেখেছিলেন ইমরান। তবে এইবার তাঁর সভার স্থলের নির্বাচনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। যে খুরশিদ হাসান খুরশিদের নামে স্টেডিয়ামটি, সেই খুরশিদই কিন্তু এর আগে পাকিস্তানের কাশ্মীর দখলের পরিকল্পনাটি তৈরি করেছিলেন।
ছাত্রাবস্থাতেই মহম্মদ আলি জিন্নার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল খুরশিদের। তাঁকে পরবর্তীকালে ব্যক্তিগত সহকারি হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন জিন্না। ভারত ভেঙে পৃথক পাকিস্তান গঠনের সিদ্ধান্ত পাকা হওয়ার পরই কাশ্মীরের রাজা হরি সিং-কে পাকিস্তানে যোগ দেওযানোর চেষ্টা শুরু করেছিলেন জিন্না-খুরশিদ জুটি। কিন্তু হরি সিং কাশ্মীরকে স্বাধীন রাজ্য হিসেবেই রেখে দিতে চেয়েছিলেন।
১৯৪৭ সালে জিন্নার প্রতিনিধি হিসেবে হরি সিং-এর কাছে গিয়ে খুরশিদ বোঝান পাকিস্তানের সঙ্গে তারা যুক্ত হলে তাদের স্বায়ত্ত্বশাসন দেওযা হবে। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা শেখ আবদুল্লার থেকে তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলা হয়। কিন্তু এরপরেও হরি সিং খুরশিদকে ফিরিয়ে দেন এবং জিন্নাপন্থী হওয়ার কারণে তাঁর প্রধানমন্ত্রী রামচন্দ্র কাককে সরিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মেহের চাঁদ মহাজন কে সেই জায়গায় নিয়োগ করা হয়।
কিন্তু নিজের জন্মস্থান জম্মু-কাশ্মীরকে পাকিস্তানের বাইরে রাখতে একেবারেই নারাজ ছিলেন খুরশিদ। এর জন্য তিনি জম্মু-কাশ্মীরে সাম্প্রদায়িক উস্কানিও দিয়েছিলেন। তারপর আরও একবার কাশ্মীরে এসে তিনি হরি সিং-কে হবোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। এরপরই জিন্নাকে একটি নোট পাঠিয়ে খুরশিদ জানিয়েছিলেন যে হরি সিং কিছুতেই পাকিস্তানের সঙ্গে আসবেন না। তাই কাশ্মীরের উপজাতিদের অস্ত্রশস্ত্র ও খাদ্য পাঠানো হোক, যুদ্ধের মধ্য দিয়েই কাশ্মীর দখল করা হোক।
এর দশদিন পরই পাক সেনা ও কাশ্মীরি উপজাতিদের একাংশ জম্মু ও কাশ্মীরে হামলা চালিয়ে প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকা দখল করে নেয়। বেগতিক দেখে হরি সিং, ভারতের সঙ্গে যোগ দেন। এরপর ভারতীয় সেনা এসে পাক সেনাকে ঠেকায়। খুরশিদ বন্দি হয়েছিলেন। দুই বছর পর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ইমরান এদিনের সভার মাধ্যমে এক ঢিবলে দুই পাখি মারতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমত খুরশিদের নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে সভা রেখে কাশ্মীর দখলের পুরোনো পরিকল্পনা ফের উসকে দিলেন তিনি। দ্বিতীয়ত মুজফ্ফরাবাদে সভা করে তিনি তাঁর বিরোধী নেতাদেরও জবাব দিলেন। গত মাসেই বিলাবল ভুট্টো দাবি করেছিলেন আগে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের ভাবনা ছিল কীভাবে ভারতের হাত থেকে শ্রীনগর দখল করা যাবে। আর এখন তা দাঁড়িয়েছে কীভাবে মুজফ্ফরাবাদকে রক্ষা করা যাবে। এদিনের সভার মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক অবস্থানটা পাকা করতে চাইছেন ইমরান।