একদিকে ‘মহা’, অন্যদিকে 'মহ', দুইয়ের ‘আলয়’ হয়েও ‘মহালয়’ কীভাবে হল ‘মহালয়া’? জেনে নিন আজকের দিনটির ভিন্ন ভিন্ন অর্থ।
কৃষ্ণপক্ষের অবসান এবং শুক্লপক্ষ বা দেবীপক্ষের সূচনায় অমাবস্যার একটি নির্দিষ্ট ক্ষণ হিন্দু ধর্মে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। পুরাণ, শাস্ত্র এবং ব্যাসদেব রচিত মহাভারতে এই দিনটিকে পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের সূচনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আজকের দিনটিকে কেন 'মহালয়া' বলা হয়ে থাকে, সেই সম্পর্কে অনেকগুলি ভিন্ন ভিন্ন তথ্য রয়েছে।
বাংলা ব্যাকরণ অনুযায়ী ‘মহালয়’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত উৎস মহা বা মহৎ এবং আলয়, অথবা ‘মহত্ত্বের আলয়’। ‘মহালয়’ শব্দটিই স্ত্রীবাচক হয়ে হয়েছে ‘মহালয়া’। ব্যাকরণ অনুযায়ী, ‘তিথি’ শব্দটি যেহেতু স্ত্রীলিঙ্গ, তাই ‘মহালয়’-এর বিশেষণ পদটি হবে ‘মহালয়া’। এই ‘মহালয়া’ শব্দের বিবিধ অর্থ রয়েছে। এর প্রসঙ্গে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে রয়েছে যে, যে ক্ষণে পরমাত্মা অর্থাৎ পরব্রহ্মের লয় প্রাপ্তি ঘটেছে, সেই ক্ষণটিই হল মহালয়। কেননা, পরমাত্মাই হল পরব্রহ্ম। নিরাকার ব্রহ্মের আশ্রয়ই হল মহালয় (মহা + আলয়)।
শ্রী শ্রী চণ্ডিতে মহালয় হচ্ছে পুজো বা উৎসবের আলয়। আলয় শব্দটির একটি অর্থ হল, ‘আশ্রয়’। চণ্ডিতে 'মহালয়' বলতে ‘পিতৃলোককে ‘ বোঝানো হয়েছে। পিতৃলোককে স্মরণের ক্ষণকেই বলা হয়েছে মহালয়া। এই সন্ধিক্ষণটিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পথ ধরে ব্যাখ্যাও করা হয়েছে। মহালয়া হয় অমাবস্যা তিথিতে যা উত্তরায়ণের শেষ সময়। এরপরই সূর্যের দক্ষিণায়ণ গতি শুরু হয়, যে সময়কাল ’শুভ’ বলে বিবেচিত নয়। কৃষ্ণপক্ষে কালিমার ক্রমশ লয় হতে হতে অমাবস্যা তিথিতে সে লয় পূর্ণতা পায়। তাই একে বলে মহালয়া।
এদিকে, ‘মহালয়া’ শব্দের সন্ধি বিশ্লেষণ ছাড়াও অভিধানে দেখা গেছে যে, ‘মহ’ শব্দের দুটি অর্থ রয়েছে। এক, ‘মহ’ বলতে বোঝায় পুজো বা উৎসব। তা থেকে ব্যুৎপত্তি করলে হয় মহ+আলয় = মহালয়। অর্থাৎ, পুজো বা উৎসবের আলয় বা আশ্রয়। আবার ‘মহ’ শব্দের আরেক অর্থ 'প্রেত'। অর্থাৎ প্রেতের আলয় (আশ্রয়)। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাহাকে মহালয় বলা হয়। সেই মহালয় থেকে মহালয়া।
মহাভারতে রয়েছে, পিতামহ ভীষ্মের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে প্রাণ ত্যাগ থেকে কর্ণের মৃত্যু ও ফের পৃথিবীতে এসে পিতৃপুরুষকে অন্ন-জলের নিবেদনের কাহিনিতে এর অর্থ আলাদা। ব্যাসদেবে ‘মহালয়’ বলতে ‘পিতৃলোক’ বুঝিয়েছেন। বিদেহী পিতৃপুরুষের অবস্থান। তাঁর লেখনী অনুযায়ী, পিতৃলোককে স্মরণের অনুষ্ঠানই হল মহালয়া। শাস্ত্রবিশেষজ্ঞরা জানান যে পিতৃপক্ষের অবসানে, অমাবস্যার অন্ধকার পেরিয়ে আমরা আলোকজ্জ্বল দেবীপক্ষকে আগমন করি, তাই সেই মহা লগ্ন আমাদের জীবনে ‘মহালয়া’। এক্ষেত্রে দেবী দুর্গাকেই সেই মহান আশ্রয় বলা হয়ে থাকে এবং আঁধার থেকে আলোকে উত্তরণের লগ্নটিকে বলা হয় মহালয়া।
Mahalaya 2023: সকাল থেকে 'শুভ মহালয়া' লিখে মেসেজ পাঠাচ্ছেন? ঠিক-ভুল জেনে নিন