বিশ্বকাপ ফুটবলের শুরু থেকেই বারবার বড় দলগুলিকে হারিয়ে ফুটবলবিশ্বকে চমকে দিয়েছে তথাকথিত ছোট দলগুলি। এবার কাতারেও তেমন কিছু হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপে উরুগুয়ের চ্যাম্পিয়ন হওয়া, ১৯৫০ বিশ্বকাপের গ্রুপ লিগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইংল্যান্ডের হার, সেবারের বিশ্বকাপ ফাইনালেই উরুগুয়ের কাছে ব্রাজিলের হার, ১৯৫৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে হাঙ্গেরিকে হারিয়ে পশ্চিম জার্মানির জয়, ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে পশ্চিম জার্মানির জয় সহ বিশ্বকাপের ইতিহাসে অঘটনের সংখ্যা কম নয়। ২০০২ সালের বিশ্বকাপ সেমি ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার পৌঁছে যাওয়া, সেই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সেনেগালের কাছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের হারকেও বড় অঘটন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কাতারে রবিবার থেকে শুরু হতে চলা বিশ্বকাপেও একাধিক অঘটন ঘটতে পারে বলে মনে করছেন প্রাক্তন ফুটবলাররা। তাঁরা কয়েকটি দলকে চিহ্নিত করেছেন, যে দলগুলি এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে খুব বেশি সাফল্য পায়নি ঠিকই, কিন্তু বারবার বড় দলগুলিকে হারিয়ে সবার হিসেব উল্টে দিয়েছে। এবারও এই দলগুলি বিশ্বকাপে গ্রুপ লিগের পর্ব টপকে নক-আউট পর্যায়ে গিয়ে অনেক অঘটন ঘটাতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
অনেকেই এবারের বিশ্বকাপে ডেনমার্ককে কালো ঘোড়া হিসেবে চিহ্নিত করছেন। ক্যাসপার হাম্যান্ডের দল বরাবরই লড়াই করে। ১৯৯২ সালের ইউরো কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ড্যানিশরা। তবে বিশ্বকাপে সবচেয়ে ভাল পারফরম্যান্স কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যাওয়া। ১৯৯৮ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছয় ডেনমার্ক। দলের অন্যতম তারকা গত ইউরো কাপ চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন। এছাড়া দলে আছেন সাইমন কায়ের, আন্দ্রিয়াস ক্রিশ্চেনসেন, পিয়ের-এমিল হয়বার্গ, টমাস ডে লাই নি। গ্রুপ ডি-তে ডেনমার্কের সঙ্গে আছে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও টিউনিশিয়া। গ্রুপ সেরা হতে পারলে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে এড়াতে পারে ড্যানিশরা। সেটা হলে কোয়ার্টার ফাইনাল বা সেমি ফাইনালেও পৌঁছে যেতে পারে ডেনমার্ক।
২০০২ বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সকে হারিয়ে চমকে দেওয়া সেনেগাল এবারও আফ্রিকার দলগুলির মধ্যে অন্যতম সেরা। ২০১০ সালে সেনেগাল নক-আউটে পৌঁছয়। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত আফ্রিকার কোনও দল গ্রুপ টপকাতে পারেনি। বায়ার্ন মিউনিখের স্ট্রাইকার সাদিও মানে ফিট থাকলে সেনেগালের আশা বাড়ত। কিন্তু বিশ্বকাপের ঠিক আগে মানে চোট পাওয়ায় সমস্যায় পড়ে গিয়েছে সেনেগাল। উইঙ্গার ইসমাইল সার, স্ট্রাইকার ব্রে ডিয়া, চেলসির গোলকিপার এডুয়ার্ড মেন্ডি, ডিফেন্ডার কালিডু কুলিব্যালি দলের বড় ভরসা।
ইকুয়েডর দলও কাতারে সবাইকে চমকে দিতে পারে। গ্রুপ এ-তে আয়োজক দেশ কাতার, নেদারল্যান্ডস ও সেনেগালের সঙ্গে আছে ইকুয়েডর। নেদারল্যান্ডস ও সেনেগালকে টপকে ইকুয়েডরের পক্ষে নক-আউটে যাওয়া কঠিন। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরের রাউন্ডে পৌঁছে যেতেও পারে ইকুয়েডর।
সার্বিয়া এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সঙ্গে একই গ্রুপে আছে। এই গ্রুপেই আছে সুইৎজারল্যান্ড ও ক্যামেরুন। ফলে গ্রুপের লড়াই সহজ হবে না। তবে অনেকেই মনে করছেন, ব্রাজিল ও ক্যামেরুনের মতো দলগুলিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে পারে সার্বিয়া।
গ্রুপ বি-তে ইংল্যান্ড, ওয়েলশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আছে ইরান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক লড়াই নতুন নয়। এই দুই দলের ম্যাচে সবসময়ই মাঠের বাইরে উত্তেজনা থাকে। এবার ইরানে হিজাব-বিরোধী আন্দোলনে দমন-পীড়ন নিয়ে সারা বিশ্ব উদ্বিগ্ন। বিশ্বকাপে ইরানের ম্যাচে সেই আন্দোলনের প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
আরও পড়ুন-
৮ পুরনো বিজয়ীর বদলে কাতারে এবার কি নতুন চ্যাম্পিয়ন পেতে পারে ফুটবল বিশ্ব?
টানা ৪ বিশ্বকাপ জিতেছে ইউরোপের দলগুলি, কাতারে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে লাতিন আমেরিকা?
রবিবার থেকে শুরু বিশ্বকাপ ফুটবল, ভারতীয় সময়ে কখন, কোথায় দেখা যাবে খেলা?