
একজন মাত্র পঁচিশে, অপরজন মাত্র সতেরোয়। বয়সের বিচারে পেলে-ই পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ বিশ্বকাপ বিজেতা। ব্রাজিলের গণ্ডীতে বিশ্বকাপ ছিনিয়ে এনেছিলেন পর পর তিন বার। ১৯৫৮, ১৯৬২ এবং ১৯৭০ সালে। আরেকদিকে রয়েছেন কিংবদন্তী মারাদোনা। বিতর্ক যার সঙ্গে সঙ্গী হয়ে রইল সারা জীবনভর, সাথে আমরণ জুড়ে রইল ফুটবল দুনিয়ায় তাঁর শৈল্পিক পদচারণা। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন মাত্র একবার, ১৯৮৬ সালে। ১৯৯০ সালে জার্মানির বিরুদ্ধে হয়েছিলেন ‘রানার আপ’। বয়সে প্রায় কুড়ি বছরের ফারাক থাকলেও এই দুই মহান নক্ষত্রের তুলনার কাঁটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে আজও দোদুল্যমান।
অধিকাংশ শিরোনামের নিরিখে
| পেলে | প্রতিযোগিতা | মারাদোনা |
| ৩ | বিশ্বকাপ | ১ |
| ২ | আন্তর্জাতিক কাপ | ০ |
| ২ | কোপা লিবার্তাদোরেস | ০ |
| ১ | আন্তর্জাতিক সুপার কাপ | ০ |
| ০ | ইউইএফএ কাপ | ১ |
| ৭ | ন্যাশনাল লিগ | ৩ |
| ০ | জাতীয় কাপ | ৫ |
| ০ | ফিফা বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপ | ১ |
| ১৫ | মোট | ১১ |
খেলাজীবনে ম্যারাদোনা মোট ৩০০টি গোল করেছেন, আর পেলে দিয়েছেন ৭০০টি গোল। পেলে ছিলেন একজন অ্যাডভান্স ফরোয়ার্ড। অন্যদিকে, ম্যারাদোনা ছিলেন একজন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার, যিনি প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করার জন্য নির্দিষ্ট সীমানার অর্ধেকেরও বেশি গভীরে নেমে যেতেন।
আর্জেন্টিনা আরও বিভিন্ন ধরণের লিগে তার বাণিজ্য চালিয়েছে, আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স, বোকা জুনিয়র্স, নাপোলি এবং বার্সেলোনার হয়ে খেলেছে। অন্যদিকে পেলে, নিউইয়র্ক কসমসের সাথে উত্তর আমেরিকায় একটি সোয়ানসং-এর আগে ব্রাজিলে নিজের ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় সান্তোসের সাথেই কাটিয়েছেন।
ম্যারাডোনাকে ইতালির সেরি এ-তে খেলে নিজের স্বনামধন্য হওয়ার পথ পরিষ্কার করতে হয়েছিল। স্পেনের প্রাইমেরা ডিভিশন সহ এই ক্লাবগুলি একেকজন কঠোর রক্ষণাত্মক প্রখ্যাত ডিফেন্ডারদের নিয়ে নিজেদের দলকে মজবুত করে রেখেছিল। সেই মজবুত প্রতিপক্ষের ব্যুহ ভেদ করে মারাদোনা যে নিজের ‘জাদু’ অক্ষুণ্ণ রেখে গিয়েছিলেন, সেকথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে।
আন্তর্জাতিক নিরিখে
| পেলে | প্রাপ্তি | মারাদোনা |
| ৯২ | আন্তর্জাতিক ক্যাপ | ৯১ |
| ৭৭ | আন্তর্জাতিক গোল | ৩৪ |
| ০.৮৪ | খেলাপ্রতি গোল | ০.৩৭ |
উভয় খেলোয়াড়ই মোট চারটি বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে উপস্থিত ছিলেন, ম্যারাডোনা সামগ্রিকভাবে আরও বেশি উপস্থিত ছিলেন। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে পেলের অংশগ্রহণে বাধা হয়েছিল তাঁর শারীরিক চোট। উল্লেখ্যযোগ্যভাবে তিনি খেলায় উপস্থিত থাকাকালীন ওই একবারই বিশ্বকাপ অবদি পৌঁছতে পারেনি ব্রাজিল। ম্যারাদোনা ফুটবল বিশ্বকাপের মোট ২১টি ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে মোট আটটি গোল করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে জিতেছিলেন বিশ্বকাপ, যে খেলায় তাঁর বিখ্যাত বা কুখ্যাত ‘ঈশ্বরের হাত’ নামক গোলটিও ‘শতাব্দীর সেরা গোল’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
বিশ্বকাপের নিরিখে
| পেলে | প্রাপ্তি | মারাদোনা |
| ৪ | খেলা | ৪ |
| ১৪ | উপস্থিতি | ২১ |
| ১২ | গোল | ৮ |
| ০.৮৬ | খেলাপ্রতি গোল | ০.৩৮ |
উল্লেখ্য, মারাদোনার মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করলেও এই দুই প্রবাদপ্রতিমের মধ্যে আত্মপক্ষের লড়াই ছিল প্রবল। ২০০০ সালে প্রকাশিত হয় মারাদোনার আত্মজীবনী। তাতে সরাসরি পেলেকে দোষী বলে সাব্যস্ত করা হয়েছিল। দিয়েগোর অভিযোগ ছিল, সতীর্থ গ্যারিঞ্চা যখন অ্যালকোহল আসক্তির কবলে পড়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছিলেন, তখন পেলে উদাসীন ছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আবার ‘বদলা’ নিতে পেলের জীবনীতে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সেলসো গ্রেলেটও মারাদোনাকে সরাসরি কটাক্ষ করেছিলেন।
আরও পড়ুন-
অমিত সাহার নাটক বন্ধ করতে তৃণমূল নেতার ‘হামলা’, প্রতিবাদে গর্জে উঠলেন অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য
নক্ষত্রের নামকরণ করা হল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর নামে, এটিই সূর্যের নিকটতম তারা