বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য ঢেলে সাজান হয়েছে কাতারকে। যার জন্য গত ৮ বছর ধরে রীতিমত কর্মযজ্ঞ চলেছিল গোটা কাতার জুড়ে। তাতেই শ্রমিক মৃত্যুর সংখ্যা সামনে এল।
কাতারে প্রথমবার বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজিত হয়েছে। টুর্নামেন্টের জন্য পরিকাঠামো উন্নয়ন করতে হয়েছে। অনেক সময় ঢেলে সাজাতে বা নতুন করে তৈরি করতে হয়েছে। আর এই কাজের জন্য যুক্ত ছিল এমন ৪০০ থেকে ৫০০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে কাতারের এক উচ্চ পদস্থ আধিকারিক। যা কাতারের রাজধানী দোহার আধিকারিকদের দেওয়া আগের তথ্যের তুলনায় অনেক বেশি।
কাতারের সুপ্রিম কমিটি ফর ডেলিভারি অ্যান্ড লিগ্যাসির সেক্রেটারির জেনারেল হাসান আল-থাওয়াদি এক ব্রিটিশ সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের আয়োজনের কাজে যুক্ত শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, টুর্নামেন্টের জন্য প্রায় ২০০ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে স্টেডিয়াম, মেট্রো লাইন ও নতুন নতুন অবকাঠোম তৈরি হয়েছে। এই নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল বিদেশ থেকে যাওয়া শ্রমিকরা। যানিয়ে একাধিক মানবাধিকার সংগঠনগুলি কাতারের তীব্র সমালোচনা করেছে।
এই সাক্ষাৎকারেই ব্রিটিশ সাংবাদিক কাতারের কর্মকতার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি কী অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু নিয়ে একটি সঠিক সংখ্যা দেবেন? এই প্রশ্নের উত্তরেই কাতারের কর্মকর্তা জানিয়েছেন তাঁর কাছে থাকা আনুমানিক হিসেব বলছেন ৪০০-৫০০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তারপরই তিনি বলেন তাঁর কাছে এখনও এর সঠিক হিসেব নেই। তবে সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেজ প্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী শ্রমিক মৃত্যু নিয়ে এর আগে কোনও কাতারি কর্মকর্তা প্রকাশ্যে আলোচনা করেননি। এই প্রথম আল-থাওয়াদি এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী শুধুমাত্র বিশ্বকাপের আয়োজন স্টেডিয়াম ও সংস্কারের কাজে যুক্ত শ্রমিকদের মৃত্যুর হিসেবেই তালিকাভুক্ত ছিল। কিন্তু বাকি নির্মাণে কাজে যুক্ত শ্রমিকদের হিসেব ছিল না।
আর সেই রিপোর্ট অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪০। যারমধ্যে ৩৭ জনের মৃত্যু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হয়েছে বলে রিপোর্ট করা হয়েছে। অন্যদিকে তিন জনের মৃত্যু দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে আল থাওয়াদি দেওয়া তথ্য অনুযায়ী টুর্নামেন্টের জন্য যে পরিকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ হয়েছে তাতেই প্রাণ গেছে ৪০০-৫০০ জন শ্রমিকের। তবে আল থাওয়াদির মন্তব্যের পরেই সুপ্রিম কমিটি একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, দেশব্যাপী সমস্ত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের মৃত্যুর কথাই তুলে ধরেছেন এই কাতারি কর্মকর্তা। সুপ্রিম কমিটি বলেছেন ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সেই পরিসংখ্যান হলে ৪১৪।
২০১০ সালেই ফিফা কাতারকে টুর্নামেন্ট দেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছিল। তারপর থেকেই দেশটি বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজনে মেতে ছিল। বিদেশ থেকে প্রচুর শ্রমিকদের কাজে নেওয়া হয়েছিল। কাতারে শ্রমিকদের নূন্যতম মাসিক মজুরি ১০০০ কাতারি রিয়েল, যার মূল্য ২৭৫ মার্কিন ডলার। কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, আবাসন ও ভাতা নিয়োগকর্তারাই প্রদান করে। শ্রমিক মৃত্যু রুখতে শ্রমিকদের নিরাপত্তার দিকেও জোর দেওয়া হয়েছিল। যদিও নিপাত্তার জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছিল মানবাধিকার কর্মীরা। যদিও কাতার জানিয়েছে, শ্রমিকদের নিয়োগ সবদিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় ভাতা আর বেতন প্রদান করা হয়েছে। থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদেশী শ্রমিকদের সঙ্গে কোনও রকম মানহানিকর আচরণও বরদাস্ত করা হয়নি। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি থেকে কারাতে শ্রমিক দিয়েছিল।