সম্প্রতী একটি গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে, হামলার দুই দশক পরেও মানুষ অসুস্থ হচ্ছে। আর তার সঙ্গে হামলার সম্পর্ক রয়েছে।
ঠিক ২০ বছর আগে ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অহংকারের স্তম্ভ ওয়ার্ড ট্রেড সেন্টারের দুটি বিশাল বিল্ডিং গুঁড়িয়ে দিয়েছিল আল -কায়দা জঙ্গি গোষ্ঠী। ২ হাজার ৭৫৩ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। মার্কিন ইতিহাসে সবথেবে ভয়াবহ হামলা। এই হামলার পরেই তালিবান অধ্যুষিত আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র সঙ্গীরা। তারপরে কেটে গেছে ২০ বছর। যুদ্ধে ইতিটেনে সেনা প্রত্যাহার করে করেছে আমেরিকা। আফগানিস্তা আবারও সরকার গঠন করেছে তালিবান ও তাদের জোটসঙ্গী বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। সে যাইহোক, দু দশক পরেই আল কায়দার হামলার ক্ষত বুকে বহন করে চলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
৯/১১ হামলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনজীবনের সঙ্গে অতপ্রতোভাবে জড়িয়ে গেছে। সম্প্রতী একটি গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে, হামলার দুই দশক পরেও মানুষ অসুস্থ হচ্ছে। আর তার সঙ্গে হামলার সম্পর্ক রয়েছে। ২০১২ সালে আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংসের সঙ্গে তারা ক্যান্সারের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন ওয়ার্ল্ড সেন্টারের উদ্ধারকারী দলের সদস্য ও সেইসময় যাঁরা এই এলাকায় ছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই প্রেস্টেট ক্যান্সার, থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন পরবর্তীকালে।
তারপরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তীকালে একটি স্বাস্ত্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। যার নাম রাখা হয়েছিল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হেলথ প্রোগ্রাম। এই কর্মসূচির মাধ্যমে হামলার আক্রান্তদের বিনামূল্য চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান ও পরামর্শ দেওযার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গবেষকরা দেখেছিলেন ওয়ার্ল্ড ট্রেড এক লক্ষেরও বেশি মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল। ফেডারেল হেলথ প্রোগামে নথিভুক্ত তথ্য অনুযায়ী এই এলাকার সবথেকে বেশি মানুষ সাইনাসের সমস্যায় ভোগেন। অধিকাংশ মানুষই গ্যাস, অম্বল, গলা জ্বালা বা কাশিতে ভোগেন এখনও। তথ্য অনুযায়ী ১৯ মানুষেরই মানসিক সমস্যা রয়েছে। আক্রান্তদের অনেকে এখনও সেই ভয়ঙ্কর অতীতের স্মৃতি বা ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এছাড়াও হাপানি, শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা অনেকেরই রয়েছে।
একটি সূত্র বলছে হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১ লক্ষ উদ্ধারকর্মী গ্রাউন্ড জিরোর আসেপাসে ডিউটি করেছেন। প্রায় ৪০ হাজার বাসিন্দা সেই সময় এই এলাকায় ছিলেন। তাদের মধ্যে এখনও যারা জীবিত রয়েছেন তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।কারণ হামলার সময় গোটা এলাকায় ধুলোয় ঢাকা পড়েছিল। যা প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় নিয়েছিল বাতাসে মিশে যেতে। সেই ধুলিকনা বিষাক্ত ছিল বলেও মনে করেন গবেষকরা। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ডাস্ট প্লুম বা ডাব্লুউটিসি ডাস্ট, সিমেন্টের ধুলো বা কণা অ্যাসবেস্ট এবং এক শ্রেণীর রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ। যা অত্যান্ত বিপজ্জক। এটি দীর্যস্থায়ী জৈব দুষণকারীও। এর মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ডাইইক্সিন ও পলিয়ারোমেটিক হাইড্রোকার্বন- যা জ্বালানী দহনের উপজাত। ধুলোতে এমন ভারী ধাতু রয়েছে যা মানব দেহ ও মস্তিষ্কের জন্য বিষাক্ত বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের। রয়েছে সীসা, পারদের মত পদার্থ।