'দুনিয়ার সবচেয়ে কুৎসিত নারী ভারতীয়রা', এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের বর্ণবাদী মন্তব্য ঘিরে উঠল ঝড়

  • বর্ণবৈষম্য বিরোধী বিক্ষোভে কয়েক মাস ধরে উত্তাল আমেরিকা
  • এর মধ্যেই এক মার্কিন প্রেসিডেন্টের  বর্ণবিদ্বেষী চেহারা সামনে এল
  • ভারতীয় নারীদের  বিশ্বে সবচেয়ে অনাকর্ষণীয় বলেছিলেন তিনি
  • তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকেও আক্রমণ করেছিলেন কদর্য ভাবে

পুলিশের বিরুদ্ধে বর্বর নির্যাতন ও বর্ণবৈষম্যবিরোধী বিক্ষোভে কয়েক মাস যাবত উত্তাল গোটা যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দামামা বাজছে। একদিকে করোনা আবহে দেশে চলা আর্থিক মন্দা, তারউপর আমেরিকা জুড়ে এই বিক্ষোভে ক্ষমতায় ফিরে আসার ব্যাপারে চাপে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে মার্কিন মুলুকে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ এই প্রথম নয়। এই প্রসঙ্গে নাম করতেই হবে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের  মধ্যে এখন নিক্সনই এখনও পর্যন্ত ছিলেন সবচেয়ে ভারত বিদ্বেষী। সম্প্রতি প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। ওই অডিও রেকর্ডে শোনা যাচ্ছে ১৯৭১ সালের জুনে নিক্সন তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারকে বলছেন, ‘বিশ্বের নারীদের মধ্যে সবচাইতে কুৎসিত ভারতীয় নারীরা’, এই কথার ওপর জোর দেওয়ার জন্য শুরুতে ‘নিঃসন্দেহে’ শব্দটিও যোগ করেন তিনি। 

রাশিয়ার সঙ্গে ঠান্ডাযুদ্ধের সময় পৃথিবীতে আমেরিকার বন্ধুদেশ হিসাবে পরিচিত ছিল পাকিস্তান। বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের থেকে সেই সময়টা অনেকটাই আলাদা ছিল। সেই সময়  ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বন্ধু পাকিস্তানের শোচনীয় হার মেনে নিতে পারেননি প্রাক্তন এই মার্কিন রাষ্ট্রপতি। তখন থেকেই ভারত সরকারের প্রতি, বিশেষ করে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি বিদ্বেষ জন্মায় তাঁর। আর এই বিদ্বেষ থেকেই ভারতীয় নারীদের কুৎসিত বলে মন্তব্য করেন রিচার্ড নিক্সন।

Latest Videos

 

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট  রিচার্ড নিক্সন  শুধুমাত্র ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন না, বর্ণবাদী ও নারীবিদ্বেষী মনোভাবের জন্যও তাঁর বদনাম ছিল। ভারতীয় জনগণের ব্যাপারে প্রাক্তন  মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন কতটা অবিশ্বাস পোষণ করতেন তা প্রকাশ করে দিয়েছে রিচার্ড নিক্সন প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি ও যাদুঘরের একটি গোপন টেপ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং তার ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার হেনরি কিসিঞ্জারের বাংলাদেশ বিরোধিতার বিষয়ে সম্প্রতি নতুন তথ্য দিয়েছেন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গ্যারি জোনাথন বাস।  নিউইয়র্ক টাইমসে লেখা কলামে তিনি জানিয়েছেন, দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক নীতি প্রণয়নে এই দুই কর্মকর্তা ভারতীয় তথা এশিয়ান নারীদের প্রতি ‘ঘৃণা, যৌন অনাগ্রহ এবং বর্ণবাদী বিদ্বেষ’ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। জোনাথন জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউজের রেকর্ডিং টেপ থেকে বইয়ের অনেক তথ্য তিনি জোগাড় করেছেন।

 ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে বা বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ইন্দিরা গান্ধীকে নিরস্ত্র করতে বঙ্গোপসাগরে মার্কিন নৌবহর পাঠিয়েছিলেন নিক্সন, কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীর বিচক্ষণ ‘রুশ চালে’ সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়। নিক্সনের আমলেই তলানিতে থেকে ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক। তবে সে সময়কার মার্কিন কূটনীতির উপর অনেকটাই প্রভাব ফেলেছিল প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ব্যক্তিগত পছন্দ। বরাবরই ভারতীয়দের তিনি সইতে পারতেন না। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁর গলায় গলায় ভাব ছিল।

সম্প্রতি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর গ্যারি বসের দৌলতে হোয়াইট হাউসে নিক্সনের গোপন কথাবার্তার একাধিক অডিও টেপ প্রকাশ্যে এসেছে, সেখান থেকেই জানা গিয়েছে কতটা বর্ণবিদ্বেষী ছিলেন নিক্সন। ১৯৭১ সালের জুন মাসে ওভাল অফিসে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “সন্দেহ নেই যে ভারতীয় মহিলারা একেবারেই আকর্ষণীয় নয়। লোকে আফ্রিকার মানুষের কথা বলে। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানরাও এদের থেকে অনেক ভাল। অন্তত পশুদের মতো একটি বন্য বা আদিম আকর্ষণ রয়েছে তাদের মধ্যে। এদের মধ্যে কিছুই নেই। সত্যি ভারতীয়রা জঘন্য। আমি তাদের একদমই সইতে পারি না। ভারতীয় মহিলাদের কথা না বলাই ভাল। তাদের দেখলে আমার মধ্যে কোনও দৈহিক অনুভূতি আসে না। তাই ওই মহিলাদের সঙ্গে কড়া ব্যবহার করা সহজ।”

আরও পড়ুন: অন্তর্মুখী হওয়ায় প্রথম বিয়ে টেকেনি জিনপিংয়ের , দ্বিতীয় স্ত্রী আবার প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় চিনে

জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পর বর্ণবাদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক আলোচনা হচ্ছে। জোনাথন বাস তার কলামে বলেছেন, মার্কিনিদের এমন আচরণ নতুন কিছু নয়। ভারত ও  বাংলাদেশের প্রতি নিক্সনের আচরণের বর্ণনা দিতে গিয়ে গোটা বিষয়টাকে ‘প্রেসিডেনসিয়াল রেসিজম’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতা পেয়েছিল। পাকিস্তান পায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন।
গ্যারি জোনাথন তার কলামে জানিয়েছেন, হাজার-হাজার বাংলাদেশিকে হত্যার বিষয়ে পাকিস্তানকে সমর্থন করেন নিক্সন এবং কিসিঞ্জার।

আরও পড়ুন: ফের প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসতে হাতিয়ার মোদী, মার্কিনি ভারতীয়দের ভোট পেতে নরেন্দ্র বন্দনায় কসুর নেই ট্রাম্পের

অডিও টেপগুলি থেকে জানা গিয়েছে, ১৯৭১ সালের নভেম্বরে ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সেখানে পাকিস্তানের প্রতি মার্কিন পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি তুলে ধরেন ইন্দিরা। তিনি বুঝিয়ে দেন, আমেরিকার চাপের মুখে মাথা নত করবে না ভারত। আর এতেই চটে লাল হয়ে ওঠেন নিক্সন। অত্যন্ত নোংরা ভাষায় তিনি বলেন, “ওই মহিলা একটি পশু।” নিউইয়র্ক  টাইমসের ওই প্রতিবেদনা আরও দাবি করা হয়েছে, নিক্সন সেসময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর বিপদ সম্পর্কে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। বিষয়টি নিয়ে শ্রীমতী গান্ধীর সঙ্গে তার রোষারেষিও তৈরি হয়েছিলো।

Share this article
click me!

Latest Videos

ফিরহাদকে কড়া ডোজ দিলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari #shorts #shortsvideo #suvenduadhikari #shortsfeed
PM Modi Live : কুয়েতে Gulf Spic-এর ভারতীয় কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা মোদীর, দেখুন সরাসরি
‘West Bengal-এ জঙ্গিদের সরকারের মুখোশ Mamata Banerjee’ Suvendu Adhikari-র ঝাঁঝালো তোপ মমতাকে
অনলাইনে পুজোর দেওয়ার নামে প্রতারণা! ঘাড় ধরে নিয়ে গেল পুলিশ | Hooghly News Today
কেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করেছিল? আসল কারন ফাঁস করলেন Suvendu Adhikari, শুনলে চমকে উঠবেন