তাপস দাস- পশ্চিমবঙ্গের ১২ নং বিধানসভা কেন্দ্র আলিপুরদুয়ার। এটি আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। আলিপুরদুয়ার কেন্দ্র ১৯৭৭ সালের আগে পর্যন্ত ছিল কংগ্রেসের গড়। ১৯৭৭ সালের পর তা পরিণত হয় আরএসপির দুর্গে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত তার ব্যত্যয় হয়নি। এখান থেকে পরপর তিনবার জিতেছিলেন আরএসপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, রাজ্যের মন্ত্রী ননী ভট্টাচার্য। পরে এখান থেকে জয়লাভ করতেন নির্মল দাস।
আরও পড়ুন- হেলমেট পরে পালাতে হল নির্মল মাজিকে, গ্রামবাসীদের ইটের ঘায়ে জখম মন্ত্রীর দেহরক্ষী
২০১১ সাল পরিবর্তনের ভোটে এখান থেকে জেতেন কংগ্রেসের দেবপ্রসাদ রায় ওরফে মিঠুদা। মাত্র সাত হাজারের মত ভোটে তিনি হারান বাম সরকারের মন্ত্রী আরএসপি নেতা ক্ষিতি গোস্বামীকে। ২০১৬ সালের ভোটে এই আসন থেকে জেতে তৃণমূল কংগ্রেস। জয়লাভ করেন সৌরভ চক্রবর্তী ওরফে ঘুটিস। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের বিশ্বরঞ্জন সরকারের সঙ্গে তাঁর ব্যবধান ছিল ১২ হাজারের মত ভোট। আরএসপি ভয়াবহ খারাপ ফল করে, মাত্র ৭৩২৪ ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থানে চলে যান নির্মল দাস। ২০০৬ সালে এই নির্মল দাসই তৎকালীন সময়ে কংগ্রেসের সৌরভ চক্রবর্তীকে হারিয়ে বিধায়ক পদ জিতেছিলেন। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের আন্দোলন ও অন্যান্য বিভিন্ন জনবিন্যাসগত কারণে আলিপুরদুয়ার ক্রমে বিজেপির শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। বিগত নির্বাচনের ভোটের হিসেব এ তত্ত্বকেই সমর্থন করবে।
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এখানে বিজেপি প্রার্থী মানিকচন্দ্র সাহা পেয়েছিলেন ৮২৩৮টি ভোট। পাঁচ বছর পর, ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজেপির কুশল চ্যাটার্জি পান ২০ হাজার আটানব্বই ভোট। আলিপুরদুয়ার বিধানসভা কেন্দ্র আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। ২০১৯ সালের ভোটের হিসেব চমকপ্রদ। সে ভোটে আলিপুরদুয়ার লোকসভায় বিজয়ী হন বিজেপির জন বার্লা। আলিপুরদুয়ার বিধানসভা কেন্দ্রে তিনি পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ১৪ হাজার ৮৭৯ ভোট। তৃণমূলের দশরথ তীরকে পেয়েছিলেন ৭৭ হাজারের কিছু বেশি ভোট। আরএসপি প্রার্থী মিলি ওরাওঁ পেয়েছিলেন সাড়ে ৮ হাজারেরও কম ভোট।
এবারের ভোটে কেউ কাউকে সূচ্যগ্র মেদিনী ছাড়তে রাজি নয়। ফলে সংযুক্ত মোর্চা ফিরিয়ে এনেছে এগারো সালের জয়ী প্রার্থী কংগ্রেসের মিঠুদা বা দেবপ্রসাদ রায়কে। তৃণমূলের সৌরভ চক্রবর্তী তো দিদিকে বলোর ঢংয়ে ঘুটিসকে বলো পোস্টার সাজিয়ে ফেলে মন দয়ের চেষ্টা করছেন ভোটারদের। শক্তিশালী বিজেপি অবশ্য প্রার্থী বাছাই নিয়ে এখানে এক পা এগিয়ে দু পা পিছিয়েছে। প্রথমে বিজেপি এই কেন্দ্রের জন্য নাম ঘোষণা করেছিল অর্থনীতিবিদ অশোক কুমার লাহিড়ির। পরে প্রার্থী বদল করে তারা। এখন প্রার্থী করা হয়েছে বিজেপি আলিপুরদুয়ার জেলা কমিটির সম্পাদক সুমন কাঞ্জিলালকে। অশোক লাহিড়ি বহিরাগত বলে তাঁকে নিয়ে আপত্তি উঠেছিল দলের মধ্যেই। নতুন প্রার্থী সুমন কাঞ্জিলাল বলেছেন, তাঁরা জেলার পাঁচ আসনেই জিতবেন। সৌরভ-সুমন-দেবপ্রসাদের লড়াই হবে ১০ এপ্রিল, চতুর্থ দফায়।