তাপস দাশঃ- ২০১১ সাল থেকে পর পর দুবার তিনি বিধায়ক হয়েছেন। হয়েছেন বিধাননগর পুরসভার মেয়রও। তাঁর সঙ্গে দলের অন্য নেতাদের আকচাআকচি প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। শেষমেশ মুকুল রায়ের হাত ধরে দল বদলেই ফেলেছেন সব্যসাচী দত্ত। বিজেপিতে যাওয়ার পরেও নিজস্ব রোখ বজায় রেখেছেন, পেটাপিটিতে জড়িয়েছেন, মেরেছেন নিজের হাতে, পাল্টা যে একেবারে খাননি, তেমনও নয়। দলবদলের সঙ্গে সঙ্গেই বদলে গিয়েছে তাঁর বিধানসভা ক্ষেত্র।
আরও পড়ুন, বারাসাতে মমতার সভা বাতিল করল কমিশন, ওদিকে শীতলকুচিকাণ্ডের পর আজ রাজ্যে শাহ-মোদী
রাজারহাট নিউটাউনের দুবারের বিধায়ক এবার বিধাননগর বিধানসভার বিজেপি প্রার্থী। ৯-এর দশকের শেষদিকে সব্যসাচী তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। রাজারহাট নিউটাউনের সিন্ডিকেটের দখল নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের এক সাংসদের সঙ্গে তাঁর বিবাদ এতটাই বেড়ে উঠেছিল যে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে হয়। তাতে গণ্ডগোল ধামাচাপা পড়ে মাত্র। চাপা উত্তেজনা সবসময়েই বিরাজমান থেকেছে নিউটাউন এলাকার ক্রমবর্ধমানতা এবং তার ফলে কাঁচা টাকার লেনদেনের জন্য।
আরও পড়ুন, ' ওরা গুলি স্প্রে করেছে', শীতলকুচি কাণ্ডের প্রতিবাদে উত্তরবঙ্গে কালো পোশাকে মমতা
২০১৯ সালের ১ অক্টোবর সব্যসাচী বিজেপিতে যোগ দেন। ২০১১ সালে প্রথমবার বিধানসভার ভোটে দাঁড়িয়ে তিনি হারিয়েছিলেন তৎকালীন সিপিএমের নেতা তাপস চ্যাটার্জিকে। তাপস চ্যাটার্জি অবশ্য পরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন। সেবার সব্যসাচী জিতেছিলেন ৮ হাজারেরও কম ভোটে। ২০১৬ সালে রাজারহাট নিউটাউন কেন্দ্র থেকে ফের তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সব্যসাচী। সেবারও তিনি হারিয়ে দেন সিপিএম প্রার্থীকে। বামেদের প্রার্থী ছিলেন নরেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জি। সব্যসাচীর জয়ের ব্যবধান ছিল ৯ হাজারের সামান্য বেশি।
সব্যসাচী দত্তের সম্পত্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিপিএমের তরফে আয়কর ভবনে ২৭ জন জনপ্রতিনিধির নামের একটি তালিকা জমা দেওয়া হয়। অভিযোগ করা হয়, পাঁচ বছরে এই জনপ্রতিনিধিদের সম্পদের যে পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা সন্দেহজনক। ওই তালিকায় ছিল সব্যসাচীর নামও। সেখানে হলফনামার হিসেব দেখিয়ে বলা হয়, ২০১১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৪৪১ গুণ সম্পত্তিবৃদ্ধি ঘটেছে তাঁর।
২০১৬ সালের হলফনামায় সব্যসাচী জানিয়েছিলেন তাঁর সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৩৫ লক্ষেরও বেশি। ২০১১ সালে তা ছিল ৪৩ লক্ষ। এবার, ২০২১ সালে সব্যসাচী যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ৭৩ লক্ষ ২৩ হাজার ৩৬৭ টাকা। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে তাঁর সম্পদহানির পরিমাণ ১ কোটি ১২ লক্ষ টাকার মত। সব্যসাচী দত্ত জানিয়েছেন তাঁর বা তাঁর স্ত্রীর কোনও গাড়ি নেই, ৪ লক্ষ টাকা মূল্যের সোনা রয়েছে তাঁর স্ত্রীর কাছে। আর সব্যসাচীর রয়েছে শ্রীভূমির ক্যানাল রোডে একটি ১১০০ বর্গফুটের বাসগৃহ, যার দাম ৪৫ লক্ষ টাকা।
আরও পড়ুন, 'সমস্যা কেন্দ্রীয় বাহিনীর নয়-আপনার হিংসার রাজনীতিতে', কৃষ্ণনগরে মোদীর নিশানায় মমতা
সব্যসাচীর এবারের লড়াই তাঁর একদা সতীর্থ সুজিত বসুর সঙ্গে। সুজিতের সঙ্গে এক দলে থাকার সময়েও তাঁর ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা সকলেরই জানা। পৃথক দল হয়ে যাওয়ায় প্রকাশ্য ভানটুকুও আর প্রয়োজন পড়ছে না এখন। পঞ্চম দফার ভোটে, ১৭ এপ্রিলে জানা যাবে নতুন দল ও নতুন কেন্দ্র সব্যসাচীর জন্য কী নিয়ে আসে।