২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাধন প্রতিপক্ষ ছিল বাম ও কংগ্রেস। পাঁচ বছর আগে এই রাজ্যে তেমন শক্তিশালী ছিল না বিজেপি। কিন্তু এবার রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ সম্পূর্ণ অন্য। গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাজ্যের অন্যতম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মাথা তুলেছে। মাঝে বেশ কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি বিজেপি। কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্রীয় নেতামন্ত্রীদের উপস্থিতিতে বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসকে জোর টক্কর দিচ্ছে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তৃণমূল আর বিজেপির দ্বন্দ্বের কাছে কিছুটা হলেও মৃয়মান বাম কংগ্রেস জোট। দলীয় জোটের মতে তারা বইছে চোরা স্রোতের মত।
২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সরকার গঠনের যাদু সংখ্যা ১৪৮। গত বিধানসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবেই রাজ্যে সরকার গঠন করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। পাশে পেয়েছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চারতিন বিধায়কের সমর্থন। বাম আর কংগ্রেস জোটের আসন সংখ্যা ছিল ৭৭। বিজেপি মাত্র তিনটি আসন দখল করতে পেরেছিল। আর নির্দল বিধায়কের সংখ্যা ছিল ৩।
গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের পক্ষে ভোট পড়েছিল ৪৫. ৭১ শতাংশ। ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বাম আর কংগ্রেস জোট। মাত্র ১০ শতাংস ভোট পেয়েছিল বিজেপি।
তবে এবার রাজনৈতিক সমীকরণ অনেকটাই আলাদা। লোকভা নির্বাচন থেকেই দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে বেশ কয়েকটি বিধানসভায় তৃণমূলকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে পদ্ম শিবির। ইতিমধ্যেই রাজ্য নেতৃত্ব নিজেদেরই প্রধান বিরোধী দল হিসেবে দাবি করেছে আসছে। একটা সময় তৃণমূল কংগ্রেসের দাপটে বাম কংগ্রেস শিবিরে যে রক্তক্ষরণ অব্যাহত ছিল আজ গেরুয়া শিবিরের দাপটে সেই রক্তক্ষরণ অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে ক্রমাগত দলবদলের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ঘাসফুল শিবিরেও। কারণ মুকুল রায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত প্রথম সারির তৃণমূল নেতারা ইতিমধ্যেই গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়ে নবান্ন দখলের সংকল্প করেছেন। অন্যদিকে গত নির্বাচন প্রথম থেকেই জোট নিয়ে ধ্বন্দ্বে ছিল বাম কংগ্রেস। কিন্তু এবার রাজ্যে তৃণমূল ও বিজেপিকে রুখতে অনেক আগে থেকেই ঘর গোছাতে জোট বেঁধেছে তারা। একাধিক যৌথ কর্মসূচিও গ্রহণ করেছে। তাই আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে নবান্নের অধিকার রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলেও মনে করেছে রাজনৈতিক মহল।