চতুর্মুখী লড়াইয়ের কেন্দ্র ভাঙড়, নকশাল-পীরজাদা ভোট কাটাকাটিতে লাভের গুড় কে খাবে

  • সাধারণ মানুষের কাছে ভাঙড় মানে আরাবুল ইসলাম
  • আরাবুল অবশ্য ২০১১ ভোটের পরাজিত নেতা
  • এবারে ভাঙড়ে তৃণমূল প্রার্থী রেজাউল করিম
  • চতুর্মুখী লড়াইয়ে ভাঙড় কার দখলে থাকবে তা স্থির হবে চতুর্থ দফায়

তাপস দাস- সাধারণ মানুষের কাছে, ভাঙড় মানে আরাবুল ইসলাম। আরাবুল ইসলাম মানে কলেজে অধ্যাপিকার দিকে জগ ছুড়ে মারা তৃণমূল নেতা। ২০১২ সালে ভাঙড় কলেজে ঢুকে ভূগোলের শিক্ষিকা দেবযানী দে-কে জগ ছুড়ে মেরেছিলেন আরাবুল ইসলাম। তিনি ছিলেন ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি, এবং তিনি ছিলেন ওই অঞ্চলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাও। আরাবুল অবশ্য ২০১১ ভোটের হেরো নেতা। যে বছর রাজ্যে বাম সরকারের পতন হয়, সে বছর তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকাবুকো নেতা আরাবুল হেরে গিয়েছিলেন সিপিএমের বাদল জমাদারের কাছে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দীর্ঘদিনের সিপিএম নেতা, তথা বাম আমলের ভূমি ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন। ২০১৬-র ভোটে তাঁকে ভাঙড়ের প্রার্থী করে তৃণমূল কংগ্রেস। তিনি পুরনো দলের প্রার্থীকে হারান ১৮ হাজারের বেশি ভোটে। 

আরও পড়ুন- ফের BJP কর্মীকে খুন খেজুরিতে, কাঠগড়ায় তৃণমূল, চতুর্থ দফার আগে রইল রক্তাক্ত ৭ কাহন 

Latest Videos

ভাঙড় কয়েক বছর আগে শিরোনামে এসেছিল সেখানকার পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের জন্য। জমি কমিটি নামটিও তখন সারা বাংলা জেনে গিয়েছিল। রাস্তা কেটে, রাস্তার মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে ভাঙড়ের একাংশ দখল করে নিয়েছিল তারা। ভাঙড় যেন হয়ে উঠেছিল আরেক নন্দীগ্রাম। এ আন্দোলনের পিছনে ছিল নকশালপন্থী সংগঠন সিপিআই এমএল রেড স্টার। পঞ্চায়েত ভোটে তারা ভাঙড় এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং বেশ কয়েকটি আসনও লাভ করে। এখনও বেশ কিছু এলাকা জমি কমিটি ও রেড স্টারের প্রভাবাধীন। 

আরও পড়ুন- পদ্মবনে ঝংকার তুলেছেন পায়েল সরকার, সে আওয়াজ শুরুতেই মিলিয়ে যাবে কি না, উত্তর মিলবে ১০ এপ্রিল 

এবারের ভোটে ভাঙড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন রেজাউল করিম। রেজাউল রাজ্যের পরিচিত চিকিৎসক। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের নেতা ছিলেন তিনি। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। ভাঙড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রয়োজন ছিল পরিচ্ছন্ন মুখ। ফলে বহিরাগত হলেও রেজাউল করিমের মত মাননীয় চিকিৎসক মুখ তাদের সেই সুবিধা দেবে, তাতে সন্দেহ নেই। এই কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হয়েছেন পীরজাদা নৌশদ সিদ্দিকি। তিনি আব্বাস সিদ্দিকির ভাইও বটে। আইএসএফের তরফ থেকে জোরদার প্রচার চলছে এই পীরজাদার সমর্থনে। ভাঙড়ে ৭০ শতাংশ মুসলিম ভোট রয়েছে। ফলে আব্বাসের পরিবারের কেউ ভোটে দাঁড়ানোর অর্থ ধর্মীয় দিক থেকে সেই ভোটকে সংহত করা। 

এখানে এবার সিপিআইএমএল রেডস্টারের প্রার্থী মির্জা হাসান। তিনি জমি কমিটি সমর্থিত প্রার্থীও বটে। তাদের অভিযোগ, আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে জোট বাঁধায় সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন অনেকে। সিপিএমের সঙ্গে জমি কমিটির সম্পর্ক সাধারণভাবে সুমধুর। জমি কমিটির আন্দোলনের সময়ে রাজ্য সরকারের করা বিভিন্ন মামলায় তাদের জন্য নিখরচায় লড়তেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সিপিআইএমএল রেড স্টার নেতা অলীক চক্রবর্তী ভুবনেশ্বরে গ্রেফতার হবার পর তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটি। আবার ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সমর্থনে সভা করেছিল জমি কমিটি। 

ভাঙড়ে বিজেপির ভোট একেবারে নেই তেমন নয়। ২০১১ সালে, এখানে বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ৪০০৬ ভোট। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ৯ হাজারের বেশি ভোট। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর কেন্দ্রের বিজেপি  প্রার্থী অনুপম হাজরা এখানে ২৫ হাজার ভোটও পাননি। সেবার মিমি চক্রবর্তী এই কেন্দ্র থেকে ১ লক্ষ ৪৬ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছিলেন। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য পেয়েছিলেন ৩৪ হাজার ৭৫৮ ভোট। কোনও নির্বাচনেই বিজেপি এখানে তেমন উল্লেখযোগ্য ফল করতে পারেনি। এবারের চতুর্মুখী লড়াইয়ে ভাঙড়ে তাদের শিকে কতদূর ছিঁড়বে তা স্থির হবে চতুর্থ দফায়, ১০ এপ্রিল। 

Share this article
click me!

Latest Videos

'মৌলবাদীরা কলকাতা দখল করলে দায়ী থাকবে মমতা', বিস্ফোরক মন্তব্য Adhir Ranjan Chowdhury-র
পূর্ব মেদিনীপুরের সমবায় নির্বাচনে কীভাবে জিতেছে তৃণমূল? দেখুন কী বলছেন Suvendu Adhikari
নেশার টাকা না দেওয়ায় এইরকম পরিণতি! দেখলে আঁতকে উঠবেন, আতঙ্কে Habra | North 24 Parganas News
‘TMC-র জন্য West Bengal-এ Bangladeshi মৌলবাদীদের কোন বাধা নেই!’ তৃণমূলকে তোপ Adhir Ranjan Chowdhury
মধ্যরাতে বিধ্বংসী আগুন Basirhat-এ! লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি, ব্যবসায়ীর দিশাহারা অবস্থা, দেখুন