ফাঁসির আগে কি ছিল ক্ষুদিরামের শেষ ইচ্ছা, যা পূরণ করেছিলেন তাঁর পাতানো দিদি

  • খুব অল্প বয়েসে প্রাণ দিয়েছিলেন দেশের জন্য
  • ফাঁসি আগে শেষ ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন ক্ষুদিরাম বসু
  • ভাই-এর শেষ ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন পাতানোর দিদি
  • সেই মহিলাকে কিন্তু মনে রাখেনি ইতিহাস
     

তপন মালিক: কাল সকালে যার ফাঁসি হবে সে আগের রাতে বলল, 'আগামীকাল আমি ফাঁসির আগে চতুর্ভুজার প্রসাদ খেয়ে বধ্যভূমিতে যেতে চাই।' তার ফাঁসির আগের মুহূর্তগুলিও আইনজীবী থেকে ফাঁসুড়ে সবাইকেই অবাক করে দিয়েছিল।  ফাঁসির কথা শুনেও তার আচার ব্যবহার দেখে একবারও মনে হয়নি যে ওর মধ্যে কোনও মৃত্যু ভয় আছে।  

আরও পড়ুন: ফোকাসে করোনা, কোয়ারেন্টাইনে সেনা-পুলিশ - কীভাবে চলছে স্বাধীনতা দিবসের প্রস্তুতি, দেখুন

Latest Videos

৩০ এপ্রিল ১৯০৮-এ মুজাফফরপুর, বিহারে রাতে সাড়ে আটটায় ইওরোপিয়ান ক্লাবের সামনে বোমা ছুড়ে তিনজনকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ক্ষুদিরামের বিচার শুরু হয় ২১ মে ১৯০৮ তারিখে যা আলিপুর বোমা মামলা নামে পরিচিত। ক্ষুদিরামের যত্সামান্য পৈত্রিক সম্পত্তি বন্ধক দেওয়ার চেষ্টা করা হয় কিন্তু সরকারের রোষানলে পড়ার ভয়ে কেউ সেই সম্পত্তি বন্ধক নিতে রাজি হয়নি। আসামি পক্ষের উকিলেরা ক্ষুদিরামের বয়স কম বিবেচনা করে লঘু শাস্তির আবেদন করেন। কিন্তু বিচারক সে আবেদন অগ্রাহ্য করে প্রাণদণ্ডের আদেশ দেন। ১৩ জুলাই ১৯০৮ আপিলের রায় ঘোষণা করা হল—ক্ষুদিরামের ফাঁসির আদেশ বহাল। ক্ষুদিরামের প্রাণ বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করে বড়লাটের কাছে প্রাণদণ্ড মুকুবের আবেদন করা হয়, কিন্তু অনেক বুঝিয়েও সে আবেদন গ্রাহ্য হল না। ১১ আগস্ট ফাঁসির দিন ধার্য করা হয়। 

আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসের আগে ব্রিটেনে মিলল গান্ধীজির চশমা, নিলামে দাম ১৪ লক্ষ ছাড়াল

দিদির সঙ্গেও শেষ দেখা হয় না ক্ষুদিরামের। কিন্তু ক্ষুদিরাম তাঁর আরেক দিদিকে শেষ দেখা দেখতে পেরেছিলেন। ধর্মে মুসলমান সেই দিদি কোনও কিছুর পরোয়া না করে ছোটবেলা থেকে যাকে আদর-স্নেহ উজাড় করে দিয়েছিলেন, সেই আদরের ভাইটি দেশের জন্য জীবন দিতে চলেছে। শেষবারের মতো তাকে না দেখে দিদি কি থাকতে পারে? মেদিনীপুর থেকে সুদূর বিহারের মুজফ্ফরপুর, সব বাধা তুচ্ছ করে সেই দিদি ফাঁসির সেলে পৌঁছে যান এবং সঙ্গে নেওয়া খাবার নিজের হাতে ভাইকে খাইয়ে দেন। ইতিহাস অবশ্য এই দিদির খোঁজ রাখেনি। সময় শেষ হয়ে গেলে শান্ত্রি সেপাই এসে নিয়ে যায় বন্দীকে। গরাদ ধরে পাথরের মতো কিছুক্ষণ নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন ক্ষুদিরামের পরম আপনজন দিদি, তারপর ফিরে যান আপন নিবাসে। সেই মুসলমান দিদি বোনটির নাম কি ছিল, কি তাঁর পরিচয়? ইতিহাস সে খোঁজ আর রাখেনি। 

জুবেদা খাতুন; ক্ষুদিরাম বসুর মামলার খরচ তিনিই জুগিয়েছিলেন। উকিলরা টাকা না নিলেও মামলা চালাতে খরচ হয়। ফাঁসির আগে ক্ষুদিরাম তাঁর দিদিকে দেখতে চেয়েছিলেন। তাঁর জামাইবাবু তখন সবে রেলওয়েতে একটি চাকরি পেয়েছেন, তাই দিদি আসতে পারেননি। এসেছিলেন জুবেদা খাতুন নামে দিদিটি। ক্ষুদিরামের মাতা ও পিতার অকাল মৃত্যুর পর তিনি কিছুদিন তাঁর দিদি অপরূপা দেবীর গৃহে আশ্রয় পেয়েছিলেন।  স্বদেশী করে বলে সরকারী চাকুরে জামাইবাবু অমৃতলাল রায় তাঁকে অন্যত্র ব্যবস্থা করতে বলেন। সেই সময় তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিলেন তাঁর পাতানো দিদি, মেদিনীপুরের উকিল সৈয়দ আবদুল ওয়াজেদ এর বোন জুবেদা খাতুন। 

আরও পড়ুন: ইতিহাসে এই প্রথম, এবারের স্বাধীনতা দিবসে নিউইয়র্কের বিখ্যাত টাইমস স্কোয়ারে উড়বে ভারতের গর্বের তেরঙ্গা

ফাঁসির আগে ক্ষুদিরামের শেষ ইচ্ছা প্রথমে ছিল এই যে - তিনি বোমা বানাতে পারেন, অনুমতি পেলে ওটা সবাইকে শিখিয়ে যেতে চান! বলাবহুল্য সে ইচ্ছা এককথায় বাতিল করে দিয়ে আবার জানতে চাওয়া হয় যে তাঁর শেষ ইচ্ছা কি? এবার ক্ষুদিরাম জানান যে তাঁর দিদিকে দেখতে খুব ইচ্ছে করে। দুর্ভাগ্যবশতঃ তাঁর সেই ইচ্ছা পূরণ হয় নি কারণ ইচ্ছা থাকলেও স্বামীর অমতে অপরূপা দেবী ভাই ক্ষুদিরামকে দেখে যেতে পারেন নি। কিন্তু সেদিন তাঁর ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন তাঁর পাতানো মুসলমান দিদিটি। তিনি সব বাধা কাটিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন মজঃফরপুরে ক্ষুদিরামের সাথে দেখা করতে।

Share this article
click me!

Latest Videos

'লুঙ্গিতে গিট বেঁধে আসুক, না হলে ওদের লুঙ্গিকে প্যারাসুট বানিয়ে ছেড়ে দেব' | Sukanta Majumdar Today
বাংলাদেশের হুমকি! হেসেই উড়িয়ে দিলেন প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান অরূপ রাহা | Kolkata News |
'ওদের লেজ কখনও সোজা হয় না' কেন বললেন শুভেন্দু! দেখুন বুঝে যাবেন | Suvendu Adhikari | Bangla News
Suvendu Adhikari: হিন্দুদের ভোটার আইকার্ড কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র, এ কী বলছেন শুভেন্দু
'Uttar Pradesh-এর মতো সুশাসন আনবো West Bengal-এ' Suvendu Adhikari- র চরম প্রতিশ্রুতি #shorts