টালির ঘরে টিমটিমে আলো, ভাগ চাষির বিদ্যুতের বিল এক লক্ষ টাকা

  • হুগলির পোলবার দোনারপাড়ার ঘটনা
  • আদিবাসী দরিদ্র পরিবারে বিপুল পরিমাণ বিদ্য়ুতের বিল
  • ভাগ চাষির কাছে এলক ১ লক্ষ টাকার বিল
  • বকেয়া থাকাতেই বিল-এর অঙ্ক বেশি , দাববি বিদ্যুৎ দফতরের

উত্তম দত্ত, হুগলি: তিন মাসে লাখ টাকার ওপর বিদ্যুতের বিল। চিন্তায় ঘুম ছুটেছে গৃহকর্তার। কোনও অট্টালিকার মালিক নয়,  এমনই বিল পেয়ে মাথায় হাত হতদরিদ্র এক ভাগ চাষির। 

হুগলির পোলবা থানার দোনারপাড়া গ্রামে স্ত্রী সুনিয়াকে নিয়ে থাকেন সুরাই মুর্মু নামে ওই ভাগ চাষি। মাটির বাড়িতে সাকুল্যে তিনটি এলইডি ল্যাম্প জ্বলে। বছর দশেক আগে 'লোক দ্বীপ' প্রকল্পে দরিদ্র ওই পরিবারে  বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু  মাঝখানে বেশ কিছুদিন বিল বকেয়া থাকায় ইলেক্ট্রিক অফিস থেকে ওই পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়। কিন্তু সেই সময় সুরাই এর পুত্রবধূ বেলমুনি ইলেক্ট্রিক অফিস-এ গিয়ে কথাবার্তা বলে টাকা পয়সা মিটিয়ে আবার বাড়িতে লাইন চালু করার ব্যবস্থা করেন।                   

Latest Videos

এর পর আদিবাসী ওই দম্পতির  তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। একমাত্র ছেলে সোমাই মুর্মু রাজ মিস্ত্রির কাজ করে ভালই উপার্জন করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ জটিল অসুখে পড়ে মারা যান তিনি। পুত্রবধূও সন্তানকে নিয়ে তাঁর বাপের বাড়িতে চলে যান।     

আরও পড়ুন- মাধ্যমিক পরীক্ষার মাঝেই মাইক বাজিয়ে অনুষ্ঠান, বিতর্কে খোদ রাজ্যের মন্ত্রী

আরও পড়ুন- মানবিক উদ্যোগ, টাকা জমিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সাহায্য লটারি বিক্রেতার

ফলে স্ত্রী সুনিয়াকে নিয়ে কোনরকমে দিন কাটিয়ে দিচ্ছিলেন সুরাই। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর কোনও বিদ্যুতের বিল আসছিল না। গতবছর হঠাৎ করেই প্রায় তেরো হাজার টাকার বিল একসঙ্গে পান সুরাই। তিনি ভাবেন দীর্ঘদিন বিল বকেয়া থাকায় একসঙ্গে বেশি পরিমাণে বিল এসেছে। কোনও রকমে ধার দেনা করে বিল মেটান ওই ভাগ চাষি। এর পরে বিদ্যুৎ দফতর জানিয়েও দেওয়া হয় তাঁর কোনও বকেয়া নেই। 

কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে যে বিদ্যুতের বিল আসে, তা দেখেই মাথায় হাত সুরাই মুর্মুর। তিন মাসে বিল এসেছে ১ লক্ষ ৭৩৭ টাকা। কীভাবে এত টাকার আর বিল এলো, আর কীভাবেই বা তাঁরা এই টাকা শোধ করবেন তা ভেবেই দিশেহারা মুর্মু দম্পতি। 

আরও পড়ুন- পড়াশোনায় ভাল হওয়ায় ঈর্ষা, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর কান কাটল দুই ভাই

বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ দফতরের স্থানীয় অফিসে গেলে বলা হয়, আগের বিল বকেয়া থাকাতেই একসঙ্গে বড় অঙ্কের বিল পাঠানো হয়েছে। গত বছর বকেয়া বিল মিটিয়ে দেওয়ার পরেও ওই ভাগ চাষির বিদ্যুৎ বিল এত টাকা বকেয়া পড়ল কী করে। শুধু তাই নয়, বিল যদি বকেয়াই থাকবে তাহলে  বিদ্যুৎ দফতর থেকে কেন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলো না। 

পোলবার বিদ্যুৎ দফতরের অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক এ বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি জানিয়েছেন, ওই বিপুল পরিমাণ বিল যে তাঁর পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়, তা জানিয়ে লিখিত আবেদন করতে হবে সুরাই মুর্মুকে। তার পরেই আবেদন বিবেচনা করে মিটার পরীক্ষা সহ বাকি পদক্ষেপ করা হবে। 

তবে একা সুরাই নন, তাঁর প্রতিবেশী লক্ষ্মণ হেমব্রমের বাড়িতেও কিছুদিন আগে বিয়াল্লিশ হাজার টাকার বিল একসঙ্গে এসেছিল। তাঁর বাড়িতেও একটি আলো এবং পাখা ছা়ড়া কিছু চলত না। ওই চাষিও বিল মেটাতে না পারায় তাঁর বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। কেন বিদ্যুৎ দফতর থেকে সময়মতো বিল পাঠানো হচ্ছে না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ওই গ্রামের বাসিন্দারা। দোনারপাড়া গ্রামে প্রায়  দুশো ঘর আদিবাসী পরিবারের বাস। প্রায় প্রতিটি পরিবারই নিম্নবিত্ত। কেউ দিন মজুর, কেউ আবার ভাগচাষি হিসেবে কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন। একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ বিল এলে তাঁরা কীভাবে তা মেটাবেন, সেই প্রশ্ন স্বভাবতই উঠছে। 

এবারের রাজ্য বাজেটে গরিবদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। সেখানে পোলবার গ্রামে বিপুল বিদ্যুতের বিলের চাপে গরিবদের ঘরের আলোই নিভে যাওয়ার জোগাড়। 

দোনারপাড়ায় সুরাই টালির বাড়িতে যে মিটার লাগানো রয়েছে, সেটি কতখানি সঠিক তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী এসে মিটার পরীক্ষা করে যান। কিন্তু মিটার অনুযায়ী তার পর দু' সপ্তাহের মধ্যে আরও ৩ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ পুড়েছে সুরাইয়ের ঘরে। 

Share this article
click me!

Latest Videos

'একত্রিত হতে হবেই, ওরা ৫০ পেরলেই শরিয়া আইন চালু করবে' গর্জে উঠলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari | News
'Mamata Banerjee-র জন্যই অভয়ার এই অবস্থা' বলতে গিয়ে এ কী বললেন Suvendu Adhikari, দেখুন
শুভেন্দুর বিরাট ঘোষণা! সোনাচূড়ার আড়াই বিঘা জমিতে হবে বিশাল Ram Mandir | Suvendu Adhikari
'সনাতনী সম্মেলন'-এ Suvendu Adhikari-র বিশেষ বার্তা, দেখুন সরাসরি
‘RG Kar-র তথ্য প্রমাণ Mamata Banerjee-র নির্দেশে লোপাট হয়েছে’ বিস্ফোরক Adhir Ranjan Chowdhury