কালীপুজোর পাশাপাশি ছটপুজো ও জগদ্বাত্রী পুজোতেও বাজি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কালীপুজোর আগে থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বসে যায় বাজির (firecrackers) বাজার। আর পুজোর দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভেসে আসে বাজির শব্দ। সন্ধে থেকেই আকাশে দেখা যায় তারাবাজির ঝলক। কিন্তু, এবার হয়তো আর সেই ঝলক দেখতে পাওয়া যাবে না। কারণ কালীপুজোয় (Kali Puja) সব ধরনের বাজি বিক্রি ও ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। তবে শুধু কালীপুজোই নয়, ছটপুজো (Chhath Puja), জগদ্বাত্রী পুজো, বড়দিন (Christmas) ও নববর্ষেও (New Year) বাজি পোড়ানো যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশ, এই উৎসবে কোনও বাজি ব্যবহার করা যাবে না। শুধুমাত্র প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালার (wax or oil based diyas) মাধ্যমেই উৎসব পালন করতে হবে।
বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য বলেন, "করোনার তৃতীয় ঢেউ (Corona Third Wave) আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় বাজি পোড়ানো, বিক্রি করার অনুমতি দেব কীভাবে? বৃহত্তর মানুষের স্বার্থের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ক্রেতা, বিক্রেতা, প্রস্তুতকারী সংস্থা সবার কথা ভাবতে হবে।"
আরও পড়ুন- রং তুলিতে হাতেই জীবন্ত পশু-পাখি, ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে বালুরঘাটের স্নিগ্ধা
উল্লেখ্য, পরিবেশবান্ধব বাজি (ECO friendly Crackers) পোড়ানোর উপরে ছাড় দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (WB Pollution Control board)। জানানো হয়েছিল, কালীপুজোর দিন রাত ৮ থেকে ১০ টার মধ্যে পরিবেশবান্ধব বাজি পোড়ানো যাবে। তবে শুধু কালীপুজোই নয়, ছটপুজো এবং বর্ষণবরণেও একইভাবে শর্তসাপেক্ষে বাজি পোড়ানোর অনুমতি দিয়েছিল প্রশাসন। তার জন্য নির্দিষ্ট সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ছটপুজোর দিন সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বাজি পোড়ানো যাবে। তবে কোনও রকম শব্দবাজি এবং পরিবেশ দূষক বাজি পোড়ানো যাবে না। বড়দিন এবং বর্ষবরণেও বাজি পোড়ানোয় সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিল পর্ষদ। ২৫ ডিসেম্বর এবং ৩১ ডিসেম্বর রাতে ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পরিবেশবান্ধব বাজি পোড়ানো যাবে বলে জানানো হয়েছিল। মূলত ক্রমবর্ধমান বেড়ে চলা দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন- মুর্শিদাবাদে শুরু প্রায় ৪৫০ বছরের পুরনো খেতুর উৎসব, এবারও বসছে না মেলা
যদি পরিবেশবান্ধব বাজি প্রসঙ্গে আদালত জানিয়েছে, পরিবেশবান্ধব বাজির অনুমতি দিয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, কিন্তু সেগুলো কীভাবে পরীক্ষা করা হবে? সাধারণ বাজিকে যে পরিবেশ বান্ধব বাজি বা গ্রিন ক্র্যাকার্স বলে বিক্রি করা হবে না তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়। কে পরীক্ষা করবেন সেই বাজি তার কোনও উত্তর পর্ষদের কাছে নেই। উৎসবের মরশুমে কে পরীক্ষা করবেন। একদিকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা রাজ্য ও দেশে ঊর্ধমুখী রয়েছে। বহু মানুষের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে। করোনার মধ্যে যা আরও বেশি পরিমাণে দেখা যায়। আর উৎসবের সময় বাজি পোড়ালে তার গন্ধ বাতাসে মিশবে। যা সবার শরীরের পক্ষেই ক্ষতিকারক।
আরও পড়ুন- উপনির্বাচনের আগে বদলি করা হোক কোচবিহারের জেলাশাসক ও এসপিকে, কমিশনে আবেদন বিজেপির
আজ হাইকোর্টে বাজি সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। পরিবেশ কর্মী রোশনী আলি এই জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন। তাঁর আবেদন ছিল, করোনা পরিস্থিতি এখনও বেশ ভয়াবহ। এই অবস্থায় গত বছরের মতো এবছরও বাজি পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করুক হাইকোর্ট। আর সেই মতো এবারও বাজি পোড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখল আদালত।