দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে স্কুলের অভ্যাস না থাকায় অনলাইন ক্লাসের সৌজন্যে বছরের বেশি সময় কিশোর-কিশোরী পড়ুয়ারা মোবাইলে বুঁদ হয়েছিল। স্কুলে এসেও সেই বদঅভ্যাস কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পাড়ছে না তারা।
স্কুল খুললেও সমস্যা মেটেনি। স্কুল খুলেও শান্তি নেই! শেষ পর্যন্ত ভার্চুয়াল জগতের (Virtual World) টানে বুঁদ হয়ে পড়েছে পড়ুয়ারা (Students)। আর তাতেই রীতিমতো অশনিসংকেত দেখছেন খোদ শিক্ষক সমাজের (Teachers) একাংশ থেকে শুরু করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (psychologist) এমনকি অভিভাবকেরাও। টানা দেড় বছরেরও বেশি সময়ের পরে অতিমারির কারণে শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশে নবম থেকে দ্বাদশ এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ক্লাসের অনুমতির ছাড়পত্র মিলেছে। কিন্তু স্কুল খুলতেই যেন এক ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মুর্শিদাবাদের উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্র।
কি সেই পরিস্থিতি? যা নিয়ে রীতিমতো নতুন গেরোয় পড়েছে পড়ুয়ারা। এক দিকে সামনে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক। আর এই সকলের কিছু প্রস্তুতির জন্য দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে স্কুলের অভ্যাস না থাকায় অনলাইন ক্লাসের সৌজন্যে বছরের বেশি সময় কিশোর-কিশোরী পড়ুয়ারা মোবাইলে বুঁদ হয়েছিল। স্কুলে এসেও সেই বদঅভ্যাস কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পাড়ছে না তারা! পড়ায় মন বসছে না। বারবার মন চলে যাচ্ছে সেই ফোনের দিকেই।
দীর্ঘক্ষণ অনলাইনে ক্লাস করায় ছাত্রছাত্রীদের জীবন স্মার্টফোন নির্ভর হয়ে গিয়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি। রাত জেগে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক করার প্রবণতাও বেড়েছে। আর এসবকিছু থেকে কিছুতেই নিজেদের বের করতে পারছে না অধিকাংশ পড়ুয়া। ক্লাস চলাকালীন বারবার তাদের হাতছানি দিচ্ছে স্মার্টফোন। কিন্তু, স্কুলে এসে ফোন ছাড়া কীভাবে টানা ৬-৭ঘণ্টা কাটাবে, সেটাই এখন পড়ুয়াদের প্রধান মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুর্শিদাবাদের সিংহী হাই স্কুলের পড়ুয়াদের কথায়, ক্লাসে বসে থাকলেও বারবার ফোনের দিকেই মন চলে যাচ্ছে। ফোন ব্যবহার করার জন্য হাত নিশপিশ করছে। কেউ কেউ আবার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নজর এড়িয়েই ব্যাগের মধ্যে লুকিয়ে স্মার্টফোন নিয়ে আসছে। তবে অনলাইনে ক্লাস করতে গিয়ে সন্তানের যে হিতে বিপরীত হয়েছে, তা মনে করছে অভিভাবদের একটা বড় অংশ। অনলাইনে ক্লাস করার জন্য সন্তানকে প্রায় নয় হাজার টাকা দিয়ে স্মার্টফোন কিনে দিয়েছেন লালবাগের জাহাঙ্গীর শেখ।
কিন্তু সেই স্মার্টফোনই এখন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ জাহাঙ্গীর সাহেবের। তাঁর আক্ষেপ, ছেলের ভালো করতে গিয়ে মনে হচ্ছে বিপদ ডেকে আনলাম! সামনেই মাধ্যমিক। অথচ অনলাইনে ক্লাস করার বদলে দিনরাত সে ফোনে গেম খেলছে। বারণ করলেও শোনে না। তবে স্কুল খুলে যাওয়ায় এখন কিছুটা স্বস্তি। খুব শীঘ্রই বিভিন্ন স্কুল গুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য টেস্ট পরীক্ষার আয়োজন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে এমনটাই জানা যাচ্ছে সূত্র মারফত। আর সে ক্ষেত্রে পরীক্ষার কথা শুনেই কার্যত গায়ে জ্বর আসছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের। মাত্রাতিরিক্ত সময় পেলেও পড়াশোনা যে বিশেষ এগোয়নি, তা অকপটে স্বীকার করে নিচ্ছে পড়ুয়ারাদের একটা বড় অংশ।
ভগবানগোলা হাই স্কুলের শিক্ষকদের দাবি, ছাত্রছাত্রীরা পড়েছে কম, ফোন ঘেঁটেছে বেশি। সেকারণেই পরীক্ষা দিতে ভয় পাচ্ছে তারা। অত্যধিক মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ফলে ছাত্রছাত্রীদের তা আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন,এই অতি মারির কারণে কেবলমাত্র শারীরিক ক্ষতি হয়নি মানসিকভাবেও খানিকটা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে পড়ুয়ারা।
অনলাইনে ক্লাস করার ফলে ছাত্রছাত্রীরা মোবাইলে অত্যধিক আসক্ত হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই ক্লাসরুমের মধ্যে বসেও ফোন ব্যবহারের জন্য তাদের মন ছটফট করছে। তবে এর পুরো দোষ যে ছাত্রছাত্রীদের, তা নয়। বরং অভিভাবকরাও তাঁদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না। তাঁরা এখন যদি হঠাৎ করে সন্তানের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিতে যান, তার ফলও খুব একটা ভালো হবে না। পড়ুয়াদের বন্ধুর মতো মেলামেশা করে অভিভাবকদের মোবাইলের প্রতি আসক্তি কমাতে হবে। না হলে বিপদ আরো বাড়বে"।
Murshidabad Youtuber- শ্রুতি নাটক দিয়েই ইউটিউবের 'প্লে বাটন' জয় গ্রামের কিশোরের
Narendra Modi-ব্যাঙ্কিং সেক্টরকে নয়া দিশা দেখিয়েছে কেন্দ্র, দাবি মোদীর
ফারাক্কার একটি হাইস্কুলের পড়ুয়া সুমন শেখ বলে," সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা রয়েছে তার আগে নিজেদের কিছুতেই অনলাইন বা ফোন ঘাটা থেকে অকারনে ব্যস্ত হয়ে থাকা থেকে বের করে আনতে পারছি না। সব সময় যেন মন, চোখ দুটো ওই ছোট্ট যন্ত্রটির দিকে চলে যাচ্ছে। চেষ্টা করছি দ্রুত কিভাবে অভ্যাস বদলাতে পারি"।