জীবন সংগ্রামে সফল বাঁকুড়ার সাইকেল মেকানিক চায়না কর্মকার। বছর সাতাশের চায়না বাবার মৃত্য়ুর পরে সংসারের দায়িত্ব কাধে তুলে নেওয়ার পাশাপাশি বাবার পেশাকেই এগিয়ে নিয়ে গেলেন তিনি। প্রথম বর্ষ পাশ করে নিজের স্নাতক ডিগ্রী করার স্বপ্ন ভুলে সে চেয়েছিল বোনেদের প্রতিষ্ঠিত করতে আর বৃদ্ধা মায়ের মুখে হাসি ফোঁটাতে। সেই লক্ষ্যে দীর্ঘ প্রায় একদশক ধরে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে চলেছে বাঁকুড়ার পাত্রসায়েরের সাইকেল মেকানিক চায়না কর্মকার।
আরও পড়ুন, হকারদের মারামারির জের, চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু হল যুবকের
জানা গিয়েছে, বাবা চেয়ে ছিলেন চার মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করে বড়ো করতে। বাঁকুড়ার পাত্র সায়ের বাজারে সামান্য সাইকেল সারার দোকান থেকেই রুজি রোজগার। আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকলেও চার মেয়ে ও স্ত্রী কে নিয়ে সুখী ছিল মোহন কর্মকারের পরিবার। হঠাৎ একটা ঝড় যেন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় কর্মকার পরিবারে সেই সুখ। বছর আট আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় মৃত্যু হয় মোহনবাবুর । বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলেও তিন মেয়ে ও তাঁর স্ত্রীর সংসারে নেমে আসে চরম অনটন। সংসারে নেমে আসে চরম দুঃসময়। সেই সময়, কেউ ছিল না পাশে দাড়ানোর। শুধু সান্তনা ও সমবেদনা মিলেছে কিন্তু সংসার চলবে কিভাবে কেউ ভাবেনি। সংসারের হাল ধরতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মোহন বাবুর মেজ মেয়ে চায়না। প্রথম বর্ষ পাশ করে নিজের স্নাতক ডিগ্রী করার স্বপ্ন ভুলে দুই বোন ও বিধবা মা কি নিয়ে শুরু করে বেঁচে থাকার লড়াই। লড়াই বেঁচে থাকার লড়াই বাঁচিয়ে তোলার। যা আট বছর ধরে লড়াই জারি রেখেছে বাঁকুড়ার পাত্রসায়েরের সাইকেল মেকানিক চায়না।
আরও পড়ুন, করোনা আতঙ্কে কাঁপছে বাংলা, এবার বন্ধ হল ভারত-বাংলাদেশ 'জয়েন্ট রিট্রিট'
সূত্রের খবর, মাটির ভাঙ্গা চোরা এসবেস্টরের ছাউনি বাড়িতে দুই বোন ও মাকে নিয়ে চায়নার সংসার। একাই সেই সংসার সামলে চলেছে সাইকেল মেকানিকের কাজ করে। বাবা ছিলেন সাইকেল মেকানিক। পাত্রসায়ের বাজারে ছিল সাইকেল রিপেয়ারের দোকান। সেই দোকানে মাঝে মাঝে গিয়ে বাবার কাছ থেকে সাইকেল সারার কাজ একটু একটু করে শিখে নিয়েছিল চায়না। বাবার মৃত্যুর পর আর সেই বাবার দোকান থেকেই নতুন করে লড়াই শুরু করে সে। কাঁধে তুলে নেয় এক গুরু দায়িত্ব। সংসার বাঁচাতে এবং দুই বোনকে পড়াশুনা শিখাতে ও বৃদ্ধা মা কে দেখতে বাবার সাইকেল দোকানে ছিল তাঁর জীবিকার রাস্তা। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই প্রতিদিন নিয়ম করে পাত্রসায়ের বাজারে সাইকেল সারার কাজ করে পরিবার সামলে চলেছে সে। নিজের সব কিছু বিসর্জন দিয়ে দিনভর কঠোর পরিশ্রম করেছে সে দুই বোনকে মানুষ করতে আর বৃদ্ধ মায়ের সেবা করতে। নিজের জেদের কাছে হার মেনেছে শত প্রতিকূলতা। আর তাঁর এই জেদ থেকেই এক বোন সদ্য নার্সিং ট্রেনিং সম্পূর্ণ করেছে আর এক বোন নার্সিং পড়ছে। নিজের শত কষ্ট কে ভুলে সে চেয়েছিল বোনেদের প্রতিষ্ঠিত করতে আর বৃদ্ধা মায়ের মুখে হাসি ফোঁটাতে। সেই লক্ষ্যে দীর্ঘ প্রায় একদশক ধরে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে চলেছে বাঁকুড়ার পাত্রসায়েরের সাইকেল মেকানিক চায়না কর্মকার।
আরও পড়ুন, 'অযথা আতঙ্কিত হবেন না', মায়াপুরে দোল উৎসবে মাতলেন চিনা পর্যটকরাও