সন্ধিপুজোতে সিঁদুর খেলা থেকে দশমীতে কুমারী পুজো, জানুন দুর্গাপুজোর হরেক অজানা গল্প

দুর্গা পুজোর চারদিন বলরাম রেবতী দুর্গামন্দিরেই অবস্থান করে। এখনো প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে বংশানুক্রমিক ভাবে সব কিছু হয়।

Parna Sengupta | Published : Oct 3, 2021 4:18 AM IST

দেবীর স্বপ্নাদেশ (The dream of the goddess) পেয়ে অপুত্রক জমিদার প্যারিমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা পুজোর (Durga Puja) সূচনা করেন পূর্ব বর্ধমানের (East Burdwan) কুমীরকোলা গ্রামে। তারপর একে একে চারপুত্র দুর্গাপ্রসাদ, সারদাপ্রসাদ, বরদাপ্রসাদ,অন্নদাপ্রসাদ এবং কৃপাময়ী ও ব্রহ্মময়ী নামে দুই কন্যা লাভ করেন জমিদার প্যারিমোহন।

এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা নন্দরাম ব্রহ্মচারী প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে হুগলী থেকে বিধর্মীদের অত্যাচারে পালিয়ে গভীর অরণ্যে কুমীরকোলা গ্রামে দামোদরের ধারে প্রতিষ্ঠা করেন বলরাম রেবতী মন্দির। বলরাম রেবতী বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের গৃহদেবতা।

তাই দুর্গা পুজোর চারদিন বলরাম রেবতী দুর্গামন্দিরেই অবস্থান করে।এখনো প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে বংশানুক্রমিক ভাবে সব কিছু হয়। দুশো বছর ধরে দেবীর মূর্তি গড়েন পাত্রসায়রের কুম্ভকার। পুরোহিত স্থানীয় রূপসা গ্রামের মুখোপাধ্যায় পরিবার।এই পরিবারের গুরু বংশ হল বাঁকুড়ার ইন্দাসের তান্ত্রিক মাধব সিদ্ধান্ত ও গৌরী সিদ্ধান্ত। এঁরাই পুজো পরিচালনা করেন। এখানে দেবীর কাঠামোয় প্রথম মাটি পড়ে রথের দিন।আর দ্বিতীয় মাটি দেওয়া হয় জন্মাষ্টমীতে। প্রতিমা এক চালার। 

ডাকের সাজে সোনালী জড়ি দিয়ে মাকে সাজানো হয়। দেবী তপ্তকাঞ্চন বর্ণা। দেবীর অনুসারে এখানে শাড়ি হয় এগারো হাতের। অষ্টমীতে সন্ধি পুজোয় দেবী চামুণ্ডার নামে এক মণ এক সের চালের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। মা দুর্গাকে এখানে লাল রঙ্গন ফুলের মালা পরানো হয়। সেই মালা মায়ের গলা থেকে ঘট পর্যন্ত ঝুলে থাকে।

পেনশন তোলা থেকে এটিএম কার্ডে পেমেন্ট, অক্টোবর থেকে বদলে যাচ্ছে এই সব নিয়ম

মায়ের স্বপ্নাদেশ অনুসারে সন্ধি পুজোয় দেবীকে পরানো হয় ১০৮ হাত লম্বা একটি লম্বা রঙ্গন ফুলের মালা। বিজয়া দশমীর দিন এখানে সিঁদুর খেলা হয় না। সন্ধি পুজো শেষ হলে বাড়ির মেয়ে বউ সহ গ্রামবাসীরা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। কুমারী পুজো হয় দশমীর দিন সকালে।

মুখে মাস্ক পরে উদ্দাম শারীরিক সুখ, কোভিড পর্নের চাহিদা বাড়ছে বিশ্ব জুড়ে

এককালে এই এলাকা ছিল আদিবাসী প্রধান। তাই এখনো আদিবাসী, দলিত এবং নিম্ন সম্প্রদায়ের মানুষজনের এখানে অবাধ অধিকার। জমিদার প্যারিমোহন এই প্রথা চালু করেছিলেন। সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ, বিশেষ করে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন পুজোয় হাজির থাকেন।কথিত আছে প্রথম জীবনে দরিদ্র প্যারিমোহন এক মৌলবীর সাহায্যে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন।তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক কুমীরকোলা গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায়দের দুর্গা মন্দির। আগে বলি হত। কিন্তু দেবীর নির্দেশে বলি বন্ধ করা হয়।নবমীর দিন গ্রামের ভবানীতলার কালী মন্দিরে ছাগ বলি দেওয়া হয়। তদানীন্তন বাংলার বড় লাট লর্ড কার্জন প্যারিমোহনের পুজো দেখতে গিয়েছিলেন। তবে বর্তমানে জাঁকজমক,জমিদারী ঠাট বাট আর নেই। মন্দিরের শিল্পকর্ম ও বসতবাড়ি জরাজীর্ণ এবং ভগ্নপ্রায়।

Share this article
click me!