অমিত সাহার নাটক বন্ধ করতে তৃণমূল নেতার ‘হামলা’, প্রতিবাদে গর্জে উঠলেন অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য

‘সমস্ত অভিনেতারা চলুন এক যোগে মার খাওয়ার আবেদন জানাই,’ শাসক দলের বিরুদ্ধে সকল শিল্পীদের আবেদন পত্র জমা দেওয়ার ডাক জনপ্রিয় পরিচালকের। 

Web Desk - ANB | Published : Dec 30, 2022 10:50 AM IST

প্রথমবারের জন্য পশ্চিমবঙ্গে দাঁড়িয়ে শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন প্রখ্যাত অভিনেতা, তথা জনপ্রিয় পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তার কারণও স্পষ্টত ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন তিনি নিজেই, ‘কারণ, গায়ে হাত উঠেছে’। যে অনির্বাণ বরাবর নিজের প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে এসেছিলেন একমাত্র থিয়েটার এবং নিজের লেখাকেই, তাঁকে হঠাৎ সরাসরি প্রতিবাদ মঞ্চের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানাতে দেখা গেল কেন? কারণ, দিনকয়েক আগেই বেলেঘাটায় শাসকদল তৃণমূলের এক নেতার ‘তাণ্ডব’। তাও আবার দলবল নিয়ে এসে নাট্যমেলা বন্ধ করে দুই নাট্যকর্মীকে ধরে বেধড়ক মারধর করার ঘটনা।

ঘটনাটি ঘটে ২৩ ডিসেম্বর বেলা ১১টা নাগাদ কলকাতার বেলেঘাটা রাসমেলা মাঠে। ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর ওই মাঠে একটি নাট্যমেলার আয়োজন করেছিল ‘বিদূষক নাট্যমণ্ডলী’ নামের একটি থিয়েটার দল। তার জন্য আয়োজন করছিলেন দুই নাট্যকর্মী অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া। ২৩ ডিসেম্বর নিজের দলবল নিয়ে রাসমেলার মাঠে হাজির হন স্থানীয় তৃণমূল নেতা অলোক দাস। তিনি এবং তাঁর দলের লোকেরা নাটকের উৎসব বন্ধ করার ‘আদেশ’ দিলে অমিত সাহার সাথে তাঁর তীব্র বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। আচমকাই তিনি অমিতকে মারধর করতে শুরু করেন এবং সেই মার তীব্র হতে হতে একসময় তিনি অমিতকে একেবারে মাঠের বাইরে বের করে দেন। তাঁর দলের লোকেরা নাট্যমেলার ইলেকট্রিকের কাজ বন্ধ করে সমস্ত ফ্লেক্স, পোস্টার ছিঁড়ে রীতিমতো ‘তাণ্ডব’ চালান বলে অভিযোগ।

এই ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন বাংলার শিল্পীরা। ঘটনার প্রচণ্ড নিন্দা করেন নাট্যব্যক্তিত্ব তথা ‘প্রাচ্য’ নাট্যদলের প্রধান বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানান ‘স্বপ্নসন্ধানী’ নাট্যদলের প্রধান কৌশিক সেন, ঋদ্ধি সেন এবং তাঁদের দলের সমস্ত শিল্পীরা। এরপরেই ভাইরাল হয় ‘হাতিবাগান সঙ্ঘারাম’ দলের প্রধান তথা সাম্প্রতিককালে বাংলার অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিনেতা এবং পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্যের একটি লেখা।

যে শাসকদল মহা সমারোহ এবং আড়ম্বর করে ‘আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র’ উৎসবের সূচনা মঞ্চে ‘বাকস্বাধীনতা’-র মন্ত্র উচ্চারণ করে, সেই শাসকদলের নেতারই এহেন আচরণের বিরুদ্ধে অনির্বাণের পোস্ট, “নমস্কার। আমার নাম অনির্বাণ। আমি বাংলা থিয়েটারে ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করি। ইদানীং পরিচালনার কাজও করেছি। আমি আজ বেলেঘাটাতেই শুটিং করছি, কিন্তু খুবই টাইট শিডিউল থাকায় সভাতে উপস্থিত থাকতে পারছি না। কিন্তু আমি এই সভায় উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলাম, কারণ গায়ে হাত উঠেছে।

নিশ্চয়ই আগেও উঠেছে, অভিনেতার গায়ে, নাট্যকর্মীর গায়ে। সুদূর বা অদূর ইতিহাসে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে আমার জানার মধ্যে এই প্রথম হাত উঠেছে। আমি প্রতিবাদ করছি, আরো অনেকের সঙ্গে, এটা জেনেই, যে এই প্রতিবাদ ব্যর্থ হবে। যার গায়ে হাত উঠেছে, তার গায়ে আবার হাত উঠতে পারে শীঘ্রই, এবং যিনি হাত তুলেছেন, তিনি তার সাহসে বলীয়ান হয়ে বাংলা মায়ের সুযোগ্য সন্তানের অনেকগুলো সার্টিফিকেট ঘরে বাঁধিয়ে রাখবেন। কে জানে হয়তো কালের অদ্ভুত নিয়মে একদিন বাংলার সংস্কৃতি মন্ত্রীও হয়ে যেতে পারেন, দল বদলালে হয়তো ভারতেরও। এটা বা এরকম কিছুই হয়তো হবে।

আমি এই ঘটনাকে বুঝে নিতে চাইছি রাজনৈতিক বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে। আজ থেকে ১২ দিন আগে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে অমিতাভ বচ্চন বাকস্বাধীনতার সপক্ষে বক্তৃতা করে গেছেন। শাহরুখ খান সোশ্যাল মিডিয়ার ঘৃণাবাহিনীকে এক হাত নিয়েছেন, সারা ভারতে মুক্তমনা মানুষ হাততালি দিয়ে উঠেছেন। সেদিন যারা মঞ্চে ছিলেন, তারাও দিয়েছেন। তার কিছুদিন পরেই অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া মার খেয়ে গেলেন, নাট্য উৎসব আয়োজন করার জন্য। একই রাজ্যে! কেন?


 

কারণ, অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া পশ্চিমবঙ্গের বোধ করি একটি ভোটকেও ডিস্টার্ব বা পেট্রনাইজ করতে পারেন না। অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খান পারেন। তাই, চলুন, আমরা নাটক ছেড়ে একটা মার খাওয়ার উৎসবের দিকে এগিয়ে যাই। আমরা রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াই। প্রতিটি অঞ্চলের পার্টি অফিসে আমরা আবেদন পত্র জমা দিই আমাদের নাটক অভিনয়ের দিন ও স্থান সমেত, আমাদের যেন এসে বেদম মার দেওয়া হয়, যেন বুঝিয়ে দেওয়া হয় হাড়ে হাড়ে যে ভোটকেন্দ্রিক গণতন্ত্রে অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খান না হলে বেশি লাফাতে নেই। সারা ভারতবর্ষের সিনেমা ও থিয়েটার অভিনেতারা যেন জানতে পারেন, পশ্চিমবঙ্গে এক অভূতপূর্ব আনন্দযজ্ঞ শুরু হয়েছে, ভোট রাজনীতিতে কাজে আসে না, এমন শিল্পীদের মেরে ঠান্ডা করে দেওয়া হচ্ছে। এই শিক্ষা সারা দেশ আমাদের রাজ্য থেকেই পাক।

চলুন, অভিনয় চর্চা, গানবাজনা ছেড়ে আমরা আগে আমাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বটা বুঝে নিই আমাদের আজকের বাস্তবতায়। আবেদন পত্র জমা দেওয়া শুরু হোক। অখ্যাত, বিখ্যাত, নামী, অনামী সমস্ত অভিনেতারা চলুন এক যোগে মার খাওয়ার আবেদন জানাই। আমি অনির্বাণ। আমার এর পরের অভিনয় ১৫ই জানুয়ারি রবীন্দ্র সদন মঞ্চে। এসে মেরে যান।

কারণ এই দিন এর অভিনয়ে ভোট রাজনীতির কোনো মুনাফা নেই, এমন ফালতু ঘটনা রাজ্যে প্লিজ একটাও ঘটতে দেবেন না, অনুরোধ। সবশেষে কেক উৎসবের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি। অনির্বাণ।”


 

বলাবাহুল্য, বাংলার মিডিয়া জগতে হইচই পড়ে যায় থিয়েটারের প্রতি অনির্বাণের এই নিঃস্বার্থ আত্মসমর্পণের ডাক শুনে। এই মুহূর্তে তিনি বাংলা শিল্পের এক স্বনামধন্য কাণ্ডারি। তাঁর প্রতিবাদের পরেও কি শাসকদল এই ধরনের ঘটনার কোনও প্রতিবাদ করবে না? বাংলার বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী তথা নাট্যজগতের এক বিখ্যাত শিল্পী ব্রাত্য বসু অবশ্য এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।

আরও পড়ুন-
নক্ষত্রের নামকরণ করা হল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর নামে, এটিই সূর্যের নিকটতম তারা
মধ্যরাতে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল উত্তরাখণ্ড, একের পর এক ভূকম্পনের প্রভাবে আতঙ্কিত উত্তর ভারত
করোনার পরবর্তী ঢেউ আসার আগেই দেওয়া হোক চতুর্থ ভ্যাকসিন, বুস্টার ডোজের ওপর জোর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের

Share this article
click me!