কিছুতেই এগোতে পারছিল না গাড়ির চাকা। আবেগের জনস্রোতের মাঝে তখন অবরুদ্ধ বুদ্ধবাবুর (Buddhadeb Bhattacharjee) শেষযাত্রা।
কিছুতেই এগোতে পারছিল না গাড়ির চাকা। আবেগের জনস্রোতের মাঝে তখন অবরুদ্ধ বুদ্ধবাবুর (Buddhadeb Bhattacharjee) শেষযাত্রা।
ঘড়িতে তখন দুপুর ৩টে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী (Former Chief Minister) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর মরদেহ নিয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে বেরোতেই পারেনি কনভয়। কার্যত রাস্তার দুধারে লোকারণ্য। একেবারে থিকথিকে ভিড় এবং অবরুদ্ধ গোটা রাস্তা। পুলিশ-প্রশাসন ভিড় সামাল দিতে ব্যস্ত। কিন্তু আবেগের বহিঃপ্রকাশ এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছল যে, সবাই একবার তাঁর গাড়ি ছুঁয়ে দেখার চেষ্টায়।
বাম নেতৃত্ব বারংবার মাইকে ঘোষণা করলেও, সবাই শুধু উৎসুক একবার দেখার জন্য। রাস্তার দুইদিকে হ্যান্ড ব্যারিকেডও আটকে রাখতে পারছে না জনতাকে। প্রসঙ্গত, বিপুল কর্মী-সমর্থক শুক্রবার সকাল থেকে ভিড় জমাতে শুরু করেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিট অর্থাৎ মুজফফর আহমেদ ভবনে।
এই সেই বাড়ি, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রোজ নিয়ম করে বুদ্ধবাবু আসতেন। এরপর পার্টির মিটিং সেরে সোজা চলে যেতেন রাইটার্স। সেই বাড়িতেই শেষবারের জন্য ঢুকলেন তিনি। কিন্তু শেষযাত্রায়। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এলেন মানুষ। কারও হাতে মালা, তো কারও হাতে আবার গোলাপ। লাইন পৌঁছে গেল মৌলালি অবধি। কেউ আবার বাস থেকে ছবি তোলার চেষ্টা করলেন।
আর আলিমুদ্দিন থেকে বাম ছাত্র-যুব হেড কোয়ার্টার দীনেশ মজুমদার ভবন পৌঁছতে লেগে গেল অনেকটা সময়। রাস্তার দূরত্বকে হার মানিয়ে দিল আবেগের বিস্ফোরণ। যেন মানুষের ভালোবাসায় চিরবিদায় জননেতাকে।
আরও পড়ুনঃ
Buddhadeb Bhattacharjee: 'একটি অধ্যায়ের অবসান' বললেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার
তাঁর শেষযাত্রায় শামিল হলেন সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত, সহ একাধিক বাম নেতৃত্ব। আর সেইসঙ্গে, অগণিত মানুষ। তাদের সঙ্গে কথা বলল এশিয়ানেট নিউজ বাংলা।
এদিন এক বাম কর্মী জানালেন, “সেই সকালে বেরিয়েছি। বুদ্ধবাবুর মিছিলে আসব বলে। আজকে না এসে থাকতে পারতাম না।”
হাওড়া থেকে ছোট ছেলেকে নিয়ে এসেছেন একজন। দাঁড়িয়ে ছিলেন রাস্তার ধারে। তাঁর কথায়, “বড় ভালো লোক ছিলেন। ছেলে ছোট, কিন্তু তবু ওকে নিয়ে এসেছি। কারণ, ওনাকে একবারের জন্য দেখতে পাওয়াটাও ভাগ্যের ব্যাপার।”
বর্ধমান থেকে আসা এক ছাত্র বললেন, “ওনার মতো মানুষের আজ ভীষণ প্রয়োজন ছিল। অনেক বড় ক্ষতি আমাদের জন্য।”
এরপর বিকেল ৫টায়, বুদ্ধবাবুর দেহ নিয়ে তাঁর শববাহী শকট পৌঁছে যায় এনআরএস হাসপাতালে। সেখানেই তাঁর দেহ দান করা হয়। সবমিলিয়ে, বুদ্ধবাবুর শেষযাত্রা যেন অনেক মুহূর্তের জন্ম দিয়ে গেল।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।