২০২৩ সালে বিজ্ঞান বিভাগে সসম্মানে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা স্বপ্নদীপ আর উচ্চমাধ্যমিকে একশোয় একশো নম্বর পেয়ে শহরে আসা সৌরভ, দুই গ্রাম্য ‘শান্ত' ছাত্রই এখন কলকাতার আলোচনার কেন্দ্রে।
বুধবার রাতের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে থমথমে কলকাতার আবহাওয়া। সংবাদপত্র থেকে পাড়ার আলোচনা, সর্বত্র সন্ত্রস্ত নাগরিকজীবন। নদিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা ঘরোয়া মেধাবী ছেলে স্বপ্নদীপ কুণ্ডু বুধবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়েজ হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে মারা যান। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতেই উদ্ধার হয় তাঁর মৃতদেহ। সদ্য কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে বাংলা নিয়ে পড়ার জন্য বগুলা থেকে কলকাতায় এসে মাত্র ২ দিন থেকেছিলেন স্বপ্নদীপ। তাঁর বাবাকে কলেজের ‘সিনিয়র দাদা’ অঙ্ক বিভাগের সৌরভ চৌধুরী কথা দিয়েছিলেন স্বপ্নদীপকে ভালোভাবে থাকতে দেওয়ার। স্বপ্নদীপের ‘রহস্যময়’ মৃত্যুর পর সেই সৌরভকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু, আদতেই কি খুনি-মানসিকতার ছেলে ছিলেন এই সৌরভ?
স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মতোই সাফল্যের স্বপ্ন নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলেন সৌরভ চৌধুরী। খারুষা গ্রামে তাঁর বাবা নিরূপ চৌধুরী একজন দরিদ্র কৃষক। ছোটবেলা থেকেই স্কুলের শিক্ষক বা পাড়ার মানুষজন সৌরভকে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র বলেই চেনেন। উচ্চমাধ্যমিকে অঙ্কে একশোয় একশো নম্বর পেয়েছিলেন সৌরভ। ছোটবেলা থেকেই তাঁকে শান্ত স্বভাবের ছেলে বলে চিনতেন প্রত্যেকটি মানুষ। কলকাতা থেকে পড়াশোনা করে WBCS অফিসার হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। তিনি কীভাবে স্বপ্নদীপের মৃত্যুর নেপথ্যে জড়িয়ে গেলেন, তা ভেবেই হতবাক হয়ে যাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁর পরিবারের মানুষজনের অবস্থাও একই। সৌরভের সহপাঠীরাও তাঁর ‘অন্য’ রূপ-এর কথা চিন্তা করে ভীষণ আশ্চর্য হচ্ছেন।
শুক্রবার রাতে সৌরভের গ্রেফতারির খবর প্রকাশ পাওয়ার পরেই শনিবার সকালে কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন সৌরভ চৌধুরীর বাবা ও মা। গ্রেফতারির আগে সৌরভ নিজেই তাঁর মা-কে জানিয়েছিলেন যে, তাঁকে ‘ফাঁসানো’ হচ্ছে, তিনি কারুর ‘র্যাগিং’ করেননি। তাঁর মা-ও সংবাদমাধ্যমের কাছে একই দাবি করেছেন। কিন্তু, স্বপ্নদীপের মৃত্যুর তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময় বহু ছাত্রছাত্রীর বয়ান সহযোগিতাপূর্ণ মনে হলেও, সৌরভ চৌধুরীর বয়ানে একাধিক বিষয় অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হয়েছে। ২০২২ সালে যাদবপুর থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করে যাওয়ার পরেও তিনি কেন এখনও পর্যন্ত হস্টেলের ভিতরেই থাকতেন, তা-ও খুব রহস্যময়। তাঁর মা জানিয়েছেন, সংসারে অত্যন্ত বেশি অর্থকষ্ট থাকার দরুন সৌরভ হস্টেলে থাকতেন।
আরেকদিকে, নিহত স্বপ্নদীপ কুণ্ডু-ও ছিলেন তাঁর স্কুলের শিক্ষকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছাত্র। ২০২৩ সালে বিজ্ঞান বিভাগে সসম্মানে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছিলেন তিনি, সেই কথা ভীষণভাবে মনে রেখেছেন তাঁর শিক্ষকরা। বগুলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল বিশ্বাস স্বপ্নদীপের স্মৃতিচারণা করে বলেছেন, ‘খুব নম্র স্বভাবের ছেলে ছিল স্বপ্নদীপ। পড়াশোনায় সে ছিল ভীষণ মেধাবী।’ নদিয়ার গ্রাম থেকে আরও পড়াশোনা করার আশায় যাদবপুরের মতো বিশ্ববরেণ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছিলেন তিনি। প্রথম বর্ষের বাংলা ক্লাসও খুবই ভালো লাগছে বলে জানিয়েছিলেন নিজের বাবা-মাকে। তার পরেও তাঁকে হারাল যাদবপুর, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল ছাত্র হঠাৎ করেই মারা গেল ‘রহস্যজনক’ভাবে। পাশাপাশি, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা সৌরভ চৌধুরীর জীবনও এখন অন্ধকারের পথে। তাঁর অচেনা রূপ এখনও পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারছেন না পরিচিত কোনও মানুষই। দুই সম্ভাবনার অকস্মাৎ পতনে দুই বিপরীত মেরু এখন শুধুই সাধারণের আলোচনার বিষয়মাত্র।
আরও পড়ুন-
বিজেপি আরএসএস-এর জোড়া কর্মসূচি, জেপি নাড্ডা ও মোহন ভাগবত একই দিনে পশ্চিমবঙ্গে
Fire News: মাঝরাতে দাউদাউ করে জ্বলে উঠল কাগজের গোডাউন, কলকাতায় ফের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড!
সিপিএমের ‘ভুল সংশোধনী’-তে বউ আর পার্টির মধ্যে দোনোমনা, বিবাহ বনাম দলের মধ্যে এগিয়ে কে?
Sex Toy: চরম যৌন সুখের আনন্দ পেতে ‘সেক্স টয়’-এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, জেনে নিন এর গুণাবলী