ভুল দিয়ে শুরু হলেও আজও মা নীলদুর্গা রূপেই পূজিত হন কৃষ্ণনগরের নীলদুর্গা বাড়িতে। মায়ের টানে সেখানে প্রতি বছর নানান জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। এই বাড়িতে মা নীলবর্ণা হওয়ার পেছনে আছে এক কাহিনি। তখনও ভারত বাংলাদেশ ভাগ হয়নি সেই সময়েই বাংলাদেশে চিন্তাহরণ চট্টোপাধ্যায় এই পুজো শুরু করেন। বাংলাদেশে শুরু হওয়া সেই পুজো আজও চলে আসছে পুরনো রীতি মেনেই। অন্যান্য বছরের মত সেই বছরও পুজোর আগে মায়ের মূর্তি গড়া হয়ে গিয়েছিল। এই মূর্তি গড়া পর্যন্ত সবটাই ঠিক ছিল, বিপত্তি ঘটলো মায়ের মূর্তি রং করতে গিয়েই। অন্ধকারে ঠাকুর রং করতে গিয়ে ভুল করে ঠাকুরকে নীল রং করে দেন ঠাকুর গড়ার কাজে নিযুক্ত সেই পাল। তার পরেই শুরু হয়ে যায় সেই ভুল শোধরানোর ব্যবস্থা। কিন্তু পরে আর ভুল শোধরানো যায়নি। ভুল শোধরানোর আগেই রাতে মায়ের স্বপ্নাদেশ পান চিন্তাহরণ চট্টোপাধ্যায় মহাশয়। স্বপ্নে মা তাকে জানান এই নীলবর্ণা রূপেই পুজো করতে হবে মা- কে। মায়ের স্বপ্নাদেশ অনুসারে সেই বছর থেকেই মায়ের নীলবর্না রূপই পূজিত হয়ে আসছে চট্টোপাধ্যায় পরিবারে। মা দুর্গা ছাড়া তবে আর কোনও দেব-দেবী সেখানে নীলবর্ণা নন।
পুজোর শুরু বাংলাদেশে হলেও পরে তারা কৃষ্ণনগরে চলে আসেন। সেখানে এসেও তারা সেই পুজো চালিয়ে যেতে থাকেন। আজও সেই পুজো একই ভাবে চলে আসছে কৃষ্ণগরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে। এছাড়াও এই নীল দুর্গার আরও একটি বৈশিষ্ট্য আছে। আমরা সাধারণত দেখে থাকি মা দুর্গার ডান দিকে লক্ষী ও গণেশ অধিষ্ঠান করেন এবং বাঁ দিকে থাকেন কার্তিক ও সরস্বতী। এখানে তবে ঠিক উল্টো জিনিসটার দেখা মিলবে। এখানে মা দুর্গার ডানদিকে থাকে কার্তিক ও সরস্বতী আর বাঁ দিকে থাকে লক্ষী ও গণেশ। এটাই এখানকার ঠাকুরের আরও একটি বিশেষত্ব।
এখনকার পুজো হয় নির্দিষ্ট কিছু রীতিনীতি মেনেই। প্রতি বছর প্রথা মেনে সেখানে রথের দিন কাঠামো পুজো হয়ে যায়। আজও সপ্তমী থেকে নবমি পর্যন্ত সেখানে পশু বলি হয়ে থাকে। বাইরে থেকেও বহু মানুষ সেখানে আসেন মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে। বাড়ির মেয়ের মতই এখানে মায়ের ভোগ হয়ে থাকে। ভোগ হয়ো থাকে ভাত আর মাছ সহযোগে। মায়ের জন্য এই ভোগ বানান বাড়ির বয়োজেষ্ঠ্যরাই। এই সব নিয়মই চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এখানে তবে মায়ের ভাসানের তেমন কোনও রীতি নেই। স্বাভাবিক নিয়ম মেনে দশমীর দিনই মায়ের ভাসান হয় সেখানে।