২০ মিনিট ধরে বাড়ছিল জল, দড়ি নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা ছিল অসম্ভব, মালবাজার হড়পা বানে চাঞ্চল্যকর তথ্য

দশমীর দিনে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য মানুষ জড়ো হয়েছিল। সেখানে হড়পা বান এসে যেভাবে মানুষ-প্রতিমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে তার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। মানুষ এমন এক ভয়ানক দৃশ্য দেখে হাহাকার করছে। অথচ, স্থানীয় উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্তা থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিদের দেখাই পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।  
 

মালবাজার হড়পা বানে সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। মাল নদীর তীরে মোতায়েন থাকা এক সিভিল ডিফেন্সের এক সদস্যের কথায়, ২০ মিনিট ধরে জল বাড়ছিল। আচমকাই এভাবে জলের স্তর বেড়ে যাওয়ায় মাইকিং করার অনুরোধ তারা করেছিলেন। বিসর্জনের জন্য যে সব সরকারি আধিকারিক দায়িত্বে ছিলেন মাল নদীর তীরে। তাদেরকেই নাকি সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা বলেছিলেন মাইকে অ্যানাউন্স করতে এবং মানুষকে নদী বক্ষ ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে। কিন্তু সেই অনুরোধ রক্ষাই করা হয়নি। ওই সিভিল ডিফেন্সের কর্মী আরও জানিয়েছেন যে বিসর্জনের জন্য তাদের সংগঠন থেকে মাত্র ৮ জনকে মোতায়েন করা হয়েছিল। বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য দেওয়া হয়েছিল শুধু দড়ি। এই দড়ি নিয়ে হড়পা বানের মোকাবিলা করার মতো পরিস্থিতি ছিল না বলেই জানিয়েছন সিভিল ডিফেন্সের ওই কর্মী।  

সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহেও মাল নদীতে হড়পা বান এসেছিল। সেই সময় নদীর মাঝে একটি পাথর বোঝাই লরি আটকে পড়েছিল। জলের স্রোত প্রায় ডুবিয়ে দিচ্ছল লরিকে, চালক এবং খালাসি লরির একপাশে চেপে থেকে কোনওভাবে নিজেদের রক্ষা করেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি ভাইরাল হয়েছিল। ঘণ্টাখানেক পরে জলের স্রোত কমে আসে এবং জলের উচ্চতাও অনেকটা নেমে গিয়েছিল। ফলে কোনও বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। অভিযোগ, মাল নদীর এই আচরণ পরিবর্তনকে কেন মাথায় রাখল না স্থানীয় প্রশাসন। বিশেষ করে এই ঘটনায় স্থানীয় মহকুমা শাসক, ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক দফতর এবং পুলিশের দিকে আঙুল উঠেছে। আশপাশের উঁচু যে সব পাহাড় থেকে মাল নদীতে জল আসে সেখানে গিয়ে সরেজমিনে পরিস্থিতিও খতিয়ে দেখা হয়নি। প্রশাসনিক সতর্কতা যদি নেওয়া হত তাহলে হয়তো বিজয়া দশমীর দিনে মাল নদীর হড়পা বানে দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারত। 

Latest Videos

স্থানীয় সিভিল ডিফেন্সের আধিকারিক পল্লববিকাশ মজুমদারও স্বীকার করেছেন যে সঠিক সংখ্যায় স্বেচ্ছাসেবকদের মোতায়েন রাখা হত এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মতো সরঞ্জাম রাখা থাকতো তাহলে হয়তো এই দুর্ঘটনায় সব মানুষকেই রক্ষা করা সম্ভব হত। জানা গিয়েছে, মাল নদীতে সেভাবে জল থাকে না। বর্ষাতে জল থাকলেও তার বেশিদিন বজায় থাকতো না। অধিকাংশ স্থানেই গোড়ালি থেকে কোমর পর্যন্ত জল থাকত। কিছু স্থানে জলের গভীররতা ছিল। কিন্তু, তেমন স্থানের সংখ্যা খুবই নগন্য বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে। 

শুকনো নদী খাতে তাই বোল্ডার ফেল বিসর্জনের সময় একটা বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল। যাতে মানুষ নদীর অন্যপ্রান্তে থাকা জলের কাছে নিরাপদে যেতে পারে। কিন্তু, হড়পা বান এই শুকনো নদী খাতের দিকে মুখ করেই ছুটে এসেছিল। মুহূর্তের মধ্যে পাথরের বাঁধকে সরিয়ে দিয়েছিল হড়পা বান। এমনটা যে হতে পারে তা অধিকাংশই আঁচ করতে পারেননি। যার ফলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বহু মানুষ হড়পা বানে ভেসে যান। 

 

দশমীর রাতে বিসর্জন স্থলে হাজির ছিলেন বহু মানুষ। এদের মধ্যে একজন বৃহস্পতিবার সকালে জানান, হড়পা বানে বহু মানুষ জলের মধ্যে আটকে পড়েন। এরা সকলেই আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন। অনেকে জলের প্রবল স্রোতকে উপেক্ষা করেই পারে আসার চেষ্টা করছিলেন। এই চেষ্টায় অনেকেই জলের তোড়ে ভেসে যান। কিছু মানুষ নদীর বক্ষে জলের মধ্যে আটকে থাকলেও অপেক্ষাকৃত একটা উঁচু জায়গায় ছিলেন। পার থেকে সকলে চেঁচিয়ে তাদের ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে বলেন। পরে জলের তোড় একটু কমলে একে একে ওই মানুষগুলোকে পারে আনা হয়। 

এই প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, নদীর পারে পুলিশ এবং সিভিল ডিফেন্স-এর লোকজন মজুত থাকলেও তা যথেষ্ট ছিল না। হড়পা বানের হাত থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে পুলিশ ও সিভিল ডিফেন্স ঝাঁপিয়েও পড়েছিল। কিন্তু, সঙ্গে সাধারণ মানুষও ঝাঁপিয়ে পড়ে উদ্ধারকাজে, ফলে বহু মানুষকে বাঁচানো গিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন ওই প্রত্যক্ষদর্শী। জানা গিয়েছে, নদীর নিম্নগামী এলাকায় ক্ষুদিরাম পল্লি ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় নদী খাত থেকে বহু মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সিভিল ডিফেন্সের দলকে ৩টি ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। একটি দল যেখানে হড়পা বান ঘটেছে সেখান থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে এলাকায় তল্লাশি চালায়। আর একটি দল এরপর থেকে ৮ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত এলাকায় নদী খাতে তল্লাশি চালাচ্ছে। এর মাঝে আরও একটি টিম রাখা হয়েছে যারা দুটো দলের সঙ্গে মিশে গিয়ে কাজ করছে। এই তল্লাশিতে এখনও পর্যন্ত কাউকে উদ্ধার করা যায়নি। সেই সঙ্গে থানায় কোনও মিসিং ডায়েরি নেই বলেই হড়পা বানে নিখোঁজের সংখ্যা শূন্য বলে দাবি করছেন একজন আধিকারিক।   
আরও পড়ুন- 
মালবাজার হড়পা বানে ক্ষোভের আগুন বহিঃপ্রকাশ, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভাঙচুর 
মাল নদীর 'রাক্ষুসে' জল স্রোত গিলে খেল দাদুকে, প্রৌঢ়ের তৎপরতায় বাঁচল ছোট্ট নাতি 
বিসর্জনে বিষাদ! হড়পা বানে তলিয়ে মৃত ৭, শোক প্রকাশ প্রধানমন্ত্রী মোদীর 

Read more Articles on
Share this article
click me!

Latest Videos

অস্ত্র পাচারেই চলছে West Bengal-এ? Mamata Banerjee-র TMC-কে কাঠগড়ায় তুললেন Adhir Ranjan Chowdhury
Shankar Ghosh : "মমতা সবচেয়ে বড় ভাঁওতাবাজ মুখ্যমন্ত্রী", কেন বললেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ
RG Kar মামলায় নতুন মোড়! কি বললেন আইনজীবী করুণা নন্দী? দেখুন | RG Kar News Today
‘Mamata Banerjee টিকতে পারবে না যদি Hindu-রা একসঙ্গে ভোট দেয়!’ বিস্ফোরক মন্তব্য Arjun Singh-এর
Mamata Banerjee: এটা কী ভোটের সমীকরণ? প্রশ্ন শুনেই ক্ষেপে লাল হয়ে যা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়