ঐতিহ্যের 'সাঙ'‐এর দাবিতে লড়াই কৃষ্ণনগরবাসীর। মঙ্গলবার থানা ঘেরাও করে চলল বিক্ষোভ। সাঙের পাশাপাশি রাজবাড়িতে ঠাকুর নিয়ে যাওয়ার দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে চলে বিক্ষোভ।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে শুরু হয় কৃষ্ণনগরের (Krishnanagar) জগদ্ধাত্রী পুজো। শোনা যায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র মা জগদ্ধাত্রীর (JagatDharti Puja) স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো শুরু করেন। এখন কৃষ্ণনগরে প্রায় ১০০‐র ওপর জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। সময়ের সঙ্গে বেড়েছে সেই জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা। প্রতিবছর গোটা কৃষ্ণনগরের মানুষ এই পুজোর জন্যই অপেক্ষা করে থাকে। অন্যান্য জায়গায় চারদিন ধরে জগদ্ধাত্রী পুজো হলেও কৃষ্ণনগরে পুজো হয় একদিনে। নবমীর দিন শুরু হয় এখানে পুজো। তার পরের দিনই অর্থাৎ দশমীর দিন হয় মায়ের ভাসান। প্রতি বছর জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষ্যে বাইরে থেকেও বহুমানুষ কৃষ্ণনগরে এসে ভিড় জমান। একদিনের পুজোয় সেজে ওঠে গোটা শহর।
কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসানে রয়েছে এক বিশেষত্ব। এখানে সকালে প্রসেশন করে জলঙ্গী নদীতে হয় মায়ের ঘট ভাসান। ভাসান দেখতে দূর‐দূরান্ত থেকে মানুষ এসে ভিড় জমান।এদিনই রাত থেকে শুরু হত জগদ্ধাত্রীপুজোর ভাসান। ঠাকুর ভাসানে মা জগদ্ধাত্রীকে সাঙে করে নিয়ে যাওয়া হয় রাজবাড়ি। আর এই সাঙ প্রথায় কাঁধে করেই ঠাকুর নিয়ে যাওয়া হয় প্রথমে রাজবাড়িতে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময় সেখানে রাজা এবং রানিমা ঠাকুর দেখে তাঁদের পছন্দের ঠাকুরকে পুরষ্কৃতও করতেন বলে শোনা যায়। সেই থেকেই আজও জগদ্ধাত্রী ঠাকুর রাজবাড়ি (Krishnanagar Rajbari) নিয়ে গিয়ে সেখানে রাখা হয়। তারপর সেখান থেকে কাঁধে করেই ঠাকুর তুলে ভাসানের উদ্দেশে ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। আর এতেই থাবা বসিয়েছে করোনা।
করোনার জেরে গত বছর থেকে বন্ধ হয়েছে প্রসেশন করে ঘট ভাসান। এমনকি, বন্ধ হয়েছে সাঙে ঠাকুর নিয়ে যাওয়াও। গত বছরের পর এবছরও সাঙে ঠাকুর নিয়ে যাওয়াতে আপত্তি জানিয়েছে প্রশাসন। আর এই সাঙের দাবিতেই মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরে শুরু হয় কৃষ্ণনগরবাসীদের বিক্ষোভ। সাঙ কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্য আর সেই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতেই তাঁদের লড়াই বলে জানান বিক্ষোভকারীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বিপুল সংখ্যক প্রতিবাদকারী জমায়েত হন কৃষ্ণনগর পুরসভার মোড়ে। পরে রাত ১০ টা নাগাদ থানা ঘেরাও করে শুরু হয় বিক্ষোভ।
আরও পড়ুন- Chhath puja 2021-বেচাকেনা শেষের পথে, শেষ মুহুর্তে জমে উঠল ছট পুজোর বাজার
আরও পড়ুন- Covid-19: ছট পুজোর আগেই ফের লাগামছাড়া করোনা, একদিনে লাফিয়ে বেড়ে ৮০০ ছুঁইছুঁই রাজ্যে
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই কালীপুজোয় কাঁধে করে ঠাকুর নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে শান্তিপুরে। শান্তিপুরের সেই ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। কৃষ্ণনগরের সাঙ বন্ধ করার পরেই উঠেছে সেই প্রসঙ্গও। সেই প্রসঙ্গ তুলেই প্রতিবাদকারীরা দাবি জানিয়েছেন সাঙের। শুধু সাঙ নয় সেই সঙ্গে রাজবাড়ি ঠাকুর নিয়ে যাওয়ায় কৃষ্ণনগরের একটা ঐতিহ্য। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই পুজো শুরু করেছিলেন তাই তাঁকে সম্মান জানাতেই আজও ঠাকুর নিয়ে যাওয়া হয় রাজবাড়িতে। রাজবাড়িতে ঠাকুর নিয়ে যাওয়া এবং সাঙে ঠাকুর নিয়ে যাওয়ার দাবিতেই এদিন রাস্তা অবরোধ করে চলে বিক্ষোভ। সাঙে ঠাকুর নিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশাসনের আপত্তি মানতে নারাজ প্রতিবাদকারীরা, এদিন তাঁরা সাফ জানিয়েও দেন প্রশাসন অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত চলবে প্রতিবাদ।