'গুজবে কান দেবেন না, সতর্ক থাকুন।' প্রচার চলছে জোরকদমে। কিন্তু শুনছে কে! বরং করোনা আতঙ্কের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছড়াচ্ছে গুজবও। গোমূত্রের পর এবার মারণ ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে গঙ্গাজলকে গুলে কয়লার টিপ পরার হিড়িক পড়ল রাজ্যে। শনিবার এমনই আজগুবি ঘটনা ঘটল হাওড়া, হুগলি ও দুই মেদিনীপুরে। \
আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কে মানবিক উদ্যোগ, বিনা পয়সায় মাস্ক বিলি গড়িয়ার দম্পতির
ভারতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। কলকাতায় আরও একজনের শরীরে মিলেছে ভাইরাস। দমদমের ওই বাসিন্দা আবার কম্মিনকালেও বিদেশ যাননি বলে জানা গিয়েছে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে না তো? ভয়ে ঘুম উড়িয়েছে সকলেই। তখনও সকালের আলো ফোটেনি, বেজে উঠল শাঁখ। বাড়ির সমস্ত কাজ ফেলে উঠানে মাটি খুঁড়তে ব্য়স্ত হয়ে পড়লেন গৃহবধূরা। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলল খোঁড়াখুড়ি। শেষপর্যন্ত মাটি থেকে পোড়া কয়লা তুলে, গঙ্গা জল দিয়ে ধুঁয়ে মাথায় মেখে নিলেন সকলেই। শনিবার কাকভোরে এমনই ঘটনা ঘটেছে উদয়নারায়ণপুর, আমতা, উলুবেড়িয়া, জগৎবল্লভপুর-সহ গ্রামীণ হাওড়া বিস্তীর্ণ এলাকায় ও পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোড এলাকায় আবার পোড়া কয়লা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে কপালে টিপ পরেছেন অনেকেই। কী ব্যাপার? মানুষের বিশ্বাস, এই পোড়া কয়লাই নাকি তাঁদের ও পরিবারের লোকেদের নাকি ভয়ঙ্কর করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচবে! ভাইরাস শরীরের স্পর্শ করবে না! কী করে যে এমন গুজব ছড়াল, তা জানা যাচ্ছে না। কেউ পুরীর মন্দিরের পুজারীর কথা বলছেন, তো কেউ টেনে আনছেন দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের পুরোহিতকেও! অন্ধবিশ্বাস এতটাই যে, অনেকেই বাড়িতে কাঠকয়লা জাতীয় জিনিসকে রীতিমতো জলে ধুয়ে সিঁদুর মাখিয়ে রেখেও দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়ছেন পুলিশকর্মী গোলক, তবুও হাসিমুখে গান বাঁধলেন করোনার জন্য
এই গুজবের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা। তাঁদের বক্তব্য, কারোন নিতে খুবই আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। তাই যেকোনও ধরণের গুজবকে সহজেই বিশ্বাস করে ফেলছেন তাঁরা। এসবে কান না দিয়ে সরকারি নির্দেশ মেনে চলা উচিত। কিন্তু মাটি নিচে কাঠকয়লা এল কোথায় থেকে? যুক্তিবাদীরা বলছেন, বাড়ির তৈরি করার আগে ভিত পুজো করার রেওয়াজ আছে। তাই বাড়ির উঠানে মাটি নিচে কাঠকয়লা জাতীয় জিনিষ থাকা অস্বাভাবিক নয়।