'জাগো রান্না কর', নবাব নগরীতে প্রাচীন ডঙ্কা ওয়ালাদের হাতেই বেঁচে রয়েছে রমজানের ঐতিহ্য

  •  রোজায়   ঐতিহ্য আর প্রথা মেনেই সেহেরির ভাত রান্না হয়
  • ডঙ্কা পিটিয়ে গৃহিণীদের ঘুম ভাঙান এলাকার এক দল যুবক 
  • মুর্শিদাবাদের  শতাব্দী প্রাচীন 'ডঙ্কা ওয়ালা'রা  এখনও মুছে যায়নি  
  •  ওই যুবকের দল মুখে আওয়াজ তোলেন,'জাগো রান্না কর ' 

Ritam Talukder | Published : May 14, 2021 3:41 AM IST / Updated: Jun 01 2021, 12:53 PM IST


সময় অনেক  কিছু কেই গ্রাস করতে পারলেও, এখনও আধুনিকতাতে অনেক ক্ষেত্রেই  ঐতিহ্যের সাথে মোকাবিলায় পিছু হটতে হয়েছে।এই যেমন মুর্শিদাবাদের ঐতিহাসিক এলাহিগঞ্জ থেকে শতাব্দী প্রাচীন 'ডঙ্কা ওয়ালা'রা  এখনও মুছে যায়নি । তাই তো রমজান মাসের রোজায় অতীতের গৌরবময় ঐতিহ্য আর প্রথা মেনেই সেহেরির ভাত রান্না করতে ডঙ্কা পিটিয়ে গৃহিণীদের এখনও ঘুম ভাঙান এলাকার এক দল যুবক।

আরও পড়ুন, করোনা আক্রান্ত সস্ত্রীক মুকুল রায়, কোভিডে মাকে হারালেন শতরূপ ঘোষ 

 


হাজারদুয়ারি প্রাসাদের পশ্চিম দিকে ভাগীরথী নদী পাড়ের গ্রাম এলাহিগঞ্জ ।ঐতিহাসিক দিক থেকে এই গ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম । এলাহিগঞ্জের নিকটে নবাব সিরাজ উদ দ্দৌলা হিরাঝিল প্রাসাদ নির্মাণ করে সেখান থেকে তার কার্যভার পরিচালনা করতেন ।আবার এই এলাকাতেই রয়েছে শাহ সুফি রহমতুল্লাহ ও দাতা আব্দুল করিম খা সাহেবের সমাধি রয়েছে । এহেন এলাহিগঞ্জ কে ঘিরে মানুষের উৎসাহ লক্ষ্য করা যায় বিভিন্ন দিক থেকে । মুসলিম প্রধান এই এলাকাতে রমজান মাসের শেষের দিকে এক দল যুবক ডঙ্কা নিয়ে বের হন । রাত ১২ থেকে তার ডঙ্কা অর্থাৎ ঢাক পিটিয়ে গৃহিণীদের জাগিয়ে তোলেন , সেহেরি অর্থাৎ ভোর রাতের খাবার রান্না করতে । শুধু ঢাকই নয় ওই যুবকের দল মুখে আওয়াজ তোলেন,'জাগো রান্না কর ।' 

আরও পড়ুন, Live Covid 19- বাংলায় একদিনে সংক্রমণ ২১ হাজার ছুঁইছুঁই, কোভিড রুখতে MBBS পড়ুয়াদেরও সামিল করল নবান্ন 


তবে রোজার ২১ দিন অতিক্রান্ত হলে তারা ওই আওয়াজের সঙ্গে যুক্ত করেন , 'মাহে রমজান আলবিদা আলবিদা আলবিদা ।'এভাবেই রমজান মাসের প্রথম দিন থেকে শেষ রোজা পর্যন্ত এলাকার রাইতনবাগ , কন্ট্রোল পাড়া, শকুন্তলা ,রৌশণীবাগ , এলাহিগঞ্জ জুড়ে তারা ঘুরে ঘুরে ডঙ্কা পেটান ।এরা এলাকার মানুসের কাছে ডঙ্কা ওয়ালা বলে পরিচিত । এবার ১৪ থেকে ২২ বছর বয়সি জসিমুদ্দিন শেখ , আবু সালিব ,টনি শেখ ,আরজু শেখ , হামজা শেখ রা এই দায়িত্ব তাদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন । এই ব্যাপারে তাদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলেন , 'বাপ ঠাকুর দার প্রথা মেনে আমরা রমজান মাসের ৩০ দিন ডঙ্কা বাজিয়ে গৃহস্তের ঘুম ভাঙায় , যাতে তারা সঠিক সময়ে ঘুম থেকে জেগে সেহেরি রান্না করতে পারেন"।

আরও পড়ুন, ঝড়বৃষ্টির জেরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের আশঙ্কা, আগাম প্রস্তুতিতে আজই বৈঠকে বিদ্যুৎ মন্ত্রী 

 

 

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজারে বিভিন্ন রকম এলারাম ঘড়ি, এমন কি মোবাইলে বাহারি এলারাম শব্দে মানুষ ঘুম থেকে নির্দিষ্ট সময়ে জেগে কাজ শুরু করলেও রমজানে কিন্তু অপেক্ষা করে থাকেন ওই ডঙ্কাওয়ালাদের দিকেই । অন্ততপক্ষে এলাহিগঞ্জের বাসিন্দারা ।এই বিষয়ে সোহরা বেগম ,নবিনুল বিবি রা বলেন , 'রমজান মাসে সারাদিন নিরাম্বু উপবাস করে সন্ধ্যায় আমরা রোজা ভঙ্গ করি । তারপর রাতের রান্না করে খেয়ে ঘুমাতে বেশ রাত হয়ে যায় । তাই ফের গভির রাতে ঘুম ভেঙে ওঠা খুব শক্ত হয়ে ওঠে । ওই ডঙ্কার আওয়াজ আমাদের ঘুম ভাঙাতে সাহায্য করে । আমরা ওদের আওয়াজের অপেক্ষায় থাকি । 'কম বয়সি যুবকরা অনেক বড় দায়িত্ব পালন করে সারা রমজান মাস জুড়ে তাই খশির ঈদে তাদের ভরিয়ে দিতে এলাকার মানুষ কসুর করেন না । তাই ঈদের দিনে গ্রামের মানুষ ডঙ্কাওয়ালাদের হাতে তুলে দেন নতুন জামা কপড় সুরমা আতর খেজুর খুরমাও ।

Share this article
click me!