সরকারি ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকের মদতে জমি দখলের অভিযোগ। অভিযোগ শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্যার ছেলের বিরুদ্ধে। এক গরীব বৃদ্ধর জমি অবৈধ ভাবে অন্য জনের নামে রেকর্ড করিয়ে নেওয়া হয়েছে।প্রশাসনে অভিযোগ জানিয়েও সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ, এক গরিব অসহায় বৃদ্ধের ২৫ কাঠা জমি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই জমির দলিল তো বটেই, জমির রেকর্ডও রয়েছে তার নামে। তারপরেও সেই জমি তার বলে দাবি করছেন অন্যজন। তার নামেও একই জমি রেকর্ড হয়ে গিয়েছে। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের পিপলা এলাকার ঘটনা।
হরিশ্চন্দ্রপুরে জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম নতুন কিছু নয়। এবার মনুয়ার বিষয়টি সামনে আসায় ফের সেই জমি মাফিয়াদের দৌরাত্মই সামনে এসে পড়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এমনকি শাসকদলের মদতে এভাবেই গরিব, আসহায় মানুষদের জমি হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। মনুয়ারও অভিযোগ, তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য শুখো দাসের ছেলে, যে নিজেও স্থানীয় তৃণমূল নেতা, সেই পুজন দাস ও ভূমি সংস্কার দফতরের মদতে তার জমি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। মনুয়া হরিশ্চন্দ্রপুরের পিপলার বাসিন্দা। তার শেষ সম্বল বলতে ছিল ওই জমি। সেই জমিতে চাষ করেই সংসার চলত।সংসারে দুই ছেলে।জরাজীর্ণ অবস্থা ঘরের ।ওই জমির ফসলেই তাদের খাওয়ার জুটতো। পিপলায় চরম দুর্দশায় দিন কাটছে মনুয়ার। শেষ সম্বলটুকু হাতছাড়া হওয়ায় খাবারও জুটছে না বলে অভিযোগ।
কিন্তু এখন জমিতে গেলেই তাকে লাঠিসোটা নিয়ে তাড়া করা হচ্ছে। ক্রমাগত হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। ওই জমি তার নিজের বলে দাবি করছেন বাংরুয়ার বাসিন্দা ফ্যানিস খাতুন। মনুয়ার নামে জমির রেকর্ড থাকলেও তা কীভাবে ফ্যানিসের নামে রেকর্ড হল, সেই অভিযোগ নিয়ে মনুয়া ভূমি সংস্কার দফতরে দিনের পর দিন ঘুরলেও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ। এরপর শুক্রবার বিডিওর কাছে অভিযোগ জানান মনুয়া। তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি দেখার পাশাপাশি তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগকারী মনুয়া দাস বলেন, ভূমি সংস্কার দফতরে আবেদন নিয়ে যতবার গিয়েছি, কোনও গুরুত্ব দেওয়া দূরের কথা, তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার নামে রেকর্ড করা জমি অন্যের হয় কি করে। আমি গরিব মানুষ, তাই কেউ আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। মনুয়া দাসের ছেলে শরৎ দাস বলেন," আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। দিন আনে দিন খায়। ওই জমি আমাদের অনেকটা ভরসা ছিল। কিন্তু সেটা অন্যায় ভাবে দখল করা হলো। আমার বাবা অনেক লড়াই করছে। ওরা প্রভাবশালী হওয়াই পেরে উঠছে না। সংবাদ মাধ্যমের দ্বারা চাই আমরা যাতে সুবিচার পাই।' যার নামে ওই জমি রেকর্ড হয়েছে সেই ফ্যানিস খাতুন কোনও মন্তব্য করতে চান নি।
তবে পঞ্চায়েত সদস্যা শুখো দাসের ছেলে পুজন দাস বলেন, কোন জমি, কোথায় জমি, কিছুই জানি না। আমার নামে এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আর হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক ফকরুদ্দিন আলি আহমেদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ছুটিতে। মনুয়ার জমির সমস্যর কথা জানি। আমি ওই ব্লকে কাজে যোগ দেওয়ার আগেই ২০১৯ সালে সেটি ঘটেছে। ছুটি থেকে ফিরলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
তবে হরিশ্চন্দ্রপুরে জমি মাফিয়াদের দৌরাত্মের বিষয়টি অজানা নয় তৃণমূল নেতৃত্বের। ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক দাস বলেন, হামেশাই জমি ঘিরে এমন ঘটনা ঘটছে। একই জমি একাধিক ব্যক্তি দাবি করছেন। এটা হয় কি করে। ভূমি সংস্কার দফতরের মদত না থাকলে এটা সম্ভব নয়। আমি উর্ধন কতৃপক্ষের কাছে নালিশ জানাব। পাশাপাশি মনুয়ার ঘটনায় দলের কেউ জড়িত থাকলে পদক্ষেপ করা হবে। হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, জমির মালিকানা নিয়ে হামেশাই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। একই জমি তাদের নামে রেকর্ড রয়েছে বলে দাবি করছেন। এটা হয় কি করে। কিন্তু ঘটনা যাই হোক, এর জেরে আইনশৃঙ্খলার যে সমস্যা হচ্ছে তা জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা।
হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বিডিও অনির্বান বসু বলেন, আইসিকে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে বলেছি। পাশাপাশি বিষয়টি ভূমি সংস্কার দফতরের উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। প্রশাসনের তরফেও তদন্ত শুরু হয়েছে।এক্ষেত্রে একজন সাধারণ গরিব মানুষের ওপর প্রভাবশালীদের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠে আসছে। কিন্তু আইনের চোখে সকলে সমান।আর হরিশ্চন্দ্রপুরে জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য নতুন ঘটনা নয়।এমনকি শাসক দলের সভাপতি ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। প্রশাসনের উচিত ব্যাপারটি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা।অসহায় ওই পরিবার যাতে সুবিচার পায়।