জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন অমিত দে। বেহালা ব্লাইন্ড স্কুলে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছেন। লেখাপড়ায় খুবই ভালো ছিলেন তিনি। প্রথম বিভাগে পাশ করার পর ১৯৯৫ সালে ভর্তি হন স্কটিশ চার্জ কলেজে।
ইচ্ছে থাকলে যে কোনও প্রতিবন্ধকতাকেই জয় করা যায়। সেকথাই আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন এক দৃষ্টিহীন দম্পতি। জন্ম থেকেই তাঁরা দৃষ্টিহীন। কিন্তু, সেটাকে কখনও তাঁদের চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেননি। আর সেই কারণেই আজ তাঁরা দু'জনেই সফল। একসঙ্গে হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলেছেন জীবনের চলার পথে। চোখে দেখতে না পারলেও বন্ধ রাখেননি মনের জানলাকে। আর সেই মনের দৃষ্টি দিয়েই নিজেদের উদ্যমে শিক্ষকতার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন অমিত দে। বেহালা ব্লাইন্ড স্কুলে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছেন। লেখাপড়ায় খুবই ভালো ছিলেন তিনি। প্রথম বিভাগে পাশ করার পর ১৯৯৫ সালে ভর্তি হন স্কটিশ চার্জ কলেজে। ছেলেবেলা কেটেছে খুবই কষ্টের মধ্যে দিয়ে। মাত্র আট বছর বয়সে বাবাকে হারান। তারপর প্রায় অনাথই হয়ে পড়েছিলেন। লায়ন্স ক্লাব বেহালা ও হাওড়া রোটারি ক্লাবের সাহায্য নিয়ে পড়াশোনা করেন।
পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে চালিয়ে গিয়েছেন কাজও। কখনও জুতোর দোকান, কখনও বেসরকারী জায়গায় কাজ করেছেন। আবার কখনও হকারিও করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেছেন ধূপকাঠি। রিপন স্ট্রিটে অনাথ গরীবদের জন্য থাকার ব্যবস্থা ছিল, সেখানে থাকতেন। তবে কাজ করলেও পড়াশোনাকে কখনও বাদ দেননি তিনি। তাই কাজের ফাঁকে নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। ২০১০ সালে কাগজে বিজ্ঞাপনের কথা শুনে প্রাথমিক স্কুলে চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ১১ সালে চাকরি পান পান্ডুয়া গোপালনগর প্রাথমিক স্কুলে।
আরও পড়ুন- ছাগলের টোপেই খাঁচাবন্দি চিতাবাঘ, স্বস্তি ফিরল গেন্দ্রাপাড়া চা বাগানে
এই মুহূর্তে চুঁচুড়ার বাবুগঞ্জে থাকেন অমিত দে। সেখান থেকে ট্রেনে করে স্কুলে যান। সেটা অবশ্য মানুষের সাহায্য নিয়েই। ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা শিখেছেন। কিন্তু, শিক্ষকতা করেন সাধারণ স্কুলেই। তাই নিজেকে তৈরি করেছেন অন্যভাবে। নরেন্দ্রপুর ব্লাইন্ড বয়েজ একাডেমি ব্রেইল প্রেস থেকে ব্রেইল বই নিয়ে আসেন। বড়িতে সেই বই পড়েন। তারপর তা স্কুলে গিয়ে ছাত্রদের পড়ান। আর পড়ার বাইরে ছোটদের গান, কবিতা শুনিয়ে আনন্দ দেন।
আরও পড়ুন- দেহরক্ষীর রহস্যমৃত্যু মামলায় শুভেন্দুকে তলব সিআইডির, সোমবার ভবানীভবনে হাজিরার নির্দেশ
এদিকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বন্ধ রয়েছে স্কুল। এই সময় ফোনেই বেশিরভাগ ক্লাস হচ্ছে। তাই স্কুল বন্ধ থাকায় ফোনে অভিভাবকদের যা যা সমস্যা হয় তা বলে দেন। ছয় মাস হল অ্যান্ড্রয়েড ফোন নিয়েছেন তিনি। রাইটার দিয়ে সেই ফোনের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আর মিড ডে মিলের সামগ্রী বিলি করার দিন স্কুলে গিয়ে উত্তরপত্র নিয়ে আসেন। ১৮০ জন পড়ুয়া, ৬ জন শিক্ষক ও একজন শিক্ষিকা রয়েছেন ওই স্কুলে। তাঁরা সবাই অমিতের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
আরও পড়ুন- করোনার মধ্যেই জ্বরহীন ম্যালেরিয়ার দাপট কলকাতায়, জেনে নিন উপসর্গ
অমিতের স্ত্রী সাহিনা খাতুনও জন্মান্ধ। নৈহাটি মহেন্দ্র প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা তিনি। বেহালা ব্লাইন্ড স্কুলে সহপাঠী ছিলেন দু'জনে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ঠিক করেন বিয়ে করবেন। সেই থেকেই সহপাঠী থেকে হয়ে ওঠে জীবনসঙ্গী। তাঁদের ৯ বছরের ছেলে সম্বিত ক্লাস ফোরের ছাত্র। দৃষ্টিহীন এই শিক্ষক দম্পতি দেখিয়েছেন ইচ্ছে থাকলেই প্রতিবন্ধকতাকে খুব সহজেই জয় করা যায়। দৃষ্টি না থাকলে কী হয়েছে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁদের কোনও পার্থক্য নেই। তাই মনের দৃষ্টি দিয়েই মানুষ গড়ার শিক্ষা দিয়ে চলেছেন তাঁরা।