বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত বিভাগের মুসলিম অধ্যাপক নিয়োগের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন পড়ুয়াদের একাংশ, তখন সম্পূর্ণ বিপরীত ছবি ধরা পড়ল বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে। রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের আদর্শে পরিচালিত এই কলেজে যে দু'জন শিক্ষক সংস্কৃত ও বেদান্ত পড়ান, তাঁরা কিন্তু হিন্দু নন। দু'জন শিক্ষকই মুসলিম সম্প্রদায়ের। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ধর্ম নয়, এই কলেজে শিক্ষকদের মেধা, আচরণ ও পড়ানোর ক্ষমতা প্রধান ও একমাত্র বিবেচ্য বিষয়।
হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সংস্কৃতে মন্ত্রোচারণ করা হয়। রামায়ণ, মহাভারতের মতো পৌরাণিক কাহিনীও সংস্কৃতে ভাষাতেই লেখা হয়েছে। কিন্তু তাই বলে কি কোনও ভাষার ব্যাপ্তিকে ধর্মের বেড়াজালে বেঁঝে ফেলা যায়! বিতর্ক তুঙ্গে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে। কয়েকদিন আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে চাকরি পান ফিরোজ খান। পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, মুসলিম শিক্ষকের কাছে সংস্কৃত পড়বেন না তাঁরা। যথারীতি বিক্ষুদ্ধ পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপি। বিশ্ববিদ্য়ালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছে, যোগ্যতার নিরিখেই অধ্যাপক পদে নিযুক্ত
হয়েছেন ফিরোজ খান। চাকরিতে বহাল থাকবেন তিনি। এই নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করার কোনও প্রয়োজন নেই।
বিতর্কের কোনও প্রশ্নই নেই, বরং বারণসীকে পথ দেখাল বাংলা। দীর্ঘদিন ধরে হাওড়ার রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির কলেজে বেদান্ত পড়াচ্ছেন শামিম আহমেদ। আর সংস্কৃত বিভাগের সহকারী শিক্ষক রমজান আলি। দু'জনেরই বক্তব্য, কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। সংস্কৃত ও বেদান্ত পড়াতে গিয়ে কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি। বরং শামিম ও রমজানের কাছে ক্লাস করে খুশিই রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির কলেজের পড়ুয়ারা। বস্তুত, এর আগে এই কলেজে মুসলিম শিক্ষকরা রসায়ন, পরিসংখ্যান,এমনকী দার্শনও পড়িয়েছে বলে জানা গিয়েছে। রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের সংস্কৃতের অধ্যাপক রমজান আলি বলেন, সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে ভারতের সংস্কৃত মিশে আছে। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটেছে, তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তা দিয়ে গোটা দেশকে বিচার করা ঠিক নয়।'