দিল্লি দখলে বাংলার রাশ হাতে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উত্তর প্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের পরেই তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪২টি আসন রয়েছে এই রাজ্যে।
পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি বিজেপি। এবার মুখোমুখি আরও একটি হাইভোল্টেজ রাজনৈতিক লড়াইয়ের। দিল্লি দখলে বাংলার রাশ হাতে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উত্তর প্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের পরেই তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪২টি আসন রয়েছে এই রাজ্যে।
পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি লোকসভা আসনের নির্বাচন আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুনের মধ্যে সাতটি দফায় অনুষ্ঠিত হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নির্বাচনে একলা চলোরে নীতি নিয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেননি। অন্যদিকে কংগ্রেস ও বাম দলগুলির জোটেরও কোনও ঠিক নেই। এখনও জোট ঘোষণাই হয়নি। তবে এই রাজ্যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণায় এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। একই ধাক্কায় রাজ্যের ৪২টি আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছেন মমতা।
Lok Sabha Elections: পশ্চিমবঙ্গে সাত দফাতেই ভোট গ্রহণ, এক নজরে দেখে নিন নির্ঘণ্ট
তবে প্রতিপক্ষ বিজেপি রাজ্যের সব আসনের প্রার্থী ঘোষণা করতে এখনও পারেনি। কিন্তু মোদীর জনপ্রিয়তার ওপর ভর করে প্রচারে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারির দুর্নীতিকেও হাতিয়ার করেছে। তবে ইতিমধ্যেই সিএএ সহ একাধিক ইস্যুতে কেন্দ্র বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছে ঘাসফুল শিবির।
লোকসভা নির্বাচনে যে বিষয়গুলি নিয়ে দুই পক্ষের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সেগুলি হল-
১। দুর্নীতি
বিজেপির সবথেকে শক্তিশালী হাতিয়ার হল তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক দুর্নীতি। নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে খাদ্যশস্য বিতরণের দুর্নীতিতে রয়েছে। পাশাপাশি গরুপাচার, তোলাবাজির অভিযোগও রয়েছে ছোট বড় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে।
Know Your Candidate: চিনে নিন আপনার প্রার্থীকে, ভোটাদের সুবিধের জন্য নতুন অ্যাপ নির্বাচন কমিশনের
২। সন্দেশখালি ও মহিলা ভোটার
জানুয়ারির শুরু থেকেই উত্তাল সন্দেশখালি। শাহজাহান ইস্যুতে ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতিবাদে সরব স্থানীয় মহিলারা। তারা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে তৎকালীন তৃণমূল নেতা ও তার সাগরেদদের বিরুদ্ধে। যা তৃণমূলের অস্বস্তির কারণ। যদিও পাল্টা হিসেবে ইতিমধ্যেই মমতা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা বাড়িয়েছেন মহিলাদের জন্য।
৩। বহিরাগত ট্যাগ
তিন বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফর হয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু সেই সময় থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতাদের বহিরাগত আক্রমণ এখনও চলছে। বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বহিরাগত ও বাংলা-বিদ্বেষী বলে দেগে দিয়েছিল তৃণমূল । সম্প্রতি সেই স্লোগানই আবারও ফিরিয়ে এনেছে ব্রিগেটের ১০ মার্চের জনগর্জন সভা থেকে। যদিও এই বিষয়ে সরব হয়েছে বিজেপিও।
৪। কেন্দ্রীয় তহবিল
তৃণমূলের প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হল ১০০ দিনের কাজের না পাওয়া টাকা। কেন্দ্র সরকার টাকা দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ। MNREGS এবং PM আবাস যোজনার মতো প্রকল্পগুলিতে কেন্দ্রীয় তহবিল আটকে রাখা নিয়ে সরব তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের দাবি রাজ্যের বয়েকা ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। টাকা আটকে রেখে বাংলার উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে বিজেপি। অন্যদিকে বিজেপির অভিযোগ তৃণমূল টাকার যথাযথ হিসেব দিচ্ছে না।
৫। সিএএ
সম্প্রতি সিএএ লাগু করেছে কেন্দ্র। যার তীব্র বিরোধিতা করেছে রাজ্য সরকার। এই রাজ্যে সিএএ লাগু হবে না বলেও জানিয়েছেন মমতা। সিএএ আর এনআরসিকে দেশের সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার অস্ত্র হিসেবেই ব্যাখ্যা করেছেন মমতা। পাল্টা বিজেপি বলেছেন এই আইনের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা নির্যাতিত হিন্দুরা সম্মানের সঙ্গে এই দেশে বসবাস করতে পারবে। মতুয়া অধ্যুষিত এলাকায় এই আইনের ফলে অনেক মানুষ উপকৃত হবে বলেও প্রচার করছে বিজেপি। কিন্তু সংখ্যালঘুদের ভোট ব্যাঙ্কের দিকেই লক্ষ্যে তৃণমূলের।
৬. সেটিংএর তত্ত্ব
রাজ্যে বাম ও কংগ্রেস নেতাদের একটি প্রিয় তত্ত্ব হল মোদী-দিদি সেটিং। দুই পক্ষই প্রচার করে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে সুন্দর বোঝাপড়া রয়েছে। দুই পক্ষের নেতাদের দলবদল এই জল্পনাকে আরও উস্কে দেয়। পাশাপাশি কংগ্রেসের জোট প্রস্তাব তৃণমূল বাতিল করে দেওয়ায় এই বার্তা আরও শক্ত করে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে বাম ও কংগ্রেস।